ন্যাশনাল ডেস্ক :
৪৮ বছর পূর্ণ করলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া দেশের প্রথম বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র। ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রটি উদ্বোধন করেন।
রাঙ্গামাটি হতে প্রায় ৩৩ কিলোমিটার দুরে চট্টগ্রাম- রাঙ্গামাটি সড়কে অবস্থিত কেন্দ্রটি। বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রটিই দেশের প্রথম ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র। ১৯৭০ সালের ৩০ জানুয়ারি এ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। রাঙ্গামাটির কাউখালীর বেতবুনিয়া ভূ- উপগ্রহ কেন্দ্র দেশের টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র।
কেন্দ্রটির ছিল ৩০ মিটার ব্যাস বিশিষ্ট বিশাল অ্যান্টেনা। কেন্দ্রটি চালুর পর থেকে ভূ-পৃষ্ঠ হতে ৩৬ হাজার কিলোমিটার উপরে অবস্থিত ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ইন্টেলসেট উপগ্রহের সাথে কাজ করে।
মহাশূন্যে অবস্থিত উপগ্রহের সাথে কেন্দ্রের অ্যান্টেনার সার্বক্ষনিক যোগাযোগ করা হতো।
ঊর্ধ্বাকাশে অবস্থিত কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে শক্তিশালী অ্যান্টেনা দিয়ে তথ্য আদান-প্রদানের কাজ সম্পাদিত হয়। আন্তর্জাতিক টেলি যোগাযোগের জন্য বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ বিশ্বের ১১ টি দেশের সাথে টেলিফোন ডাটা কমিউনিকেশন, ফ্যাক্স, টেলেক্স ইত্যাদি আদান-প্রদান করে এটি।
জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে আংশিক এবং ১৯৯৮ সালে জাপানের এনইসি কোম্পানী কর্তৃক ডিজিটাল সিষ্টেমের যন্ত্রপাতি দ্বারা স্টেশণটি সুসজ্জিত করা হয়।
২০১৮ সালের ১১ মে উৎক্ষেপণ করা হয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট -১ । এরই মধ্যে বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ গ্রাউন্ডে স্থপিত হয় দ্বিতীয় গ্রাউন্ড স্টেশন। কৃত্রিম উপগ্রহটি উৎক্ষেপণ করার পর ২০১৮ সালের ১২ মে বাংলাদেশ এটি থেকে পরীক্ষামূলক সংকেত পেতে শুরু করে।
এ বিষয়ে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও কাউখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অংসুই প্রু চৌধুরী বাসসকে বলেন, তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেতবুনিয়া ভূ- উপগ্রহ কেন্দ্রটি উদ্বোধন করেছিলেন।
কিন্তু ৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশের তথ্য প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্নকে থামিয়ে দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বিএনপি-জামায়াতের দেশ পরিচালনাকালে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত এই ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রটি সম্পূর্ণভাবে অচল করা হয়।
তিনি বাসসকে আরো বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবারো এই বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রটি প্রাণ ফিরে পায়। বঙ্গবন্ধুর দেখানো স্বপ্ন পূরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে এই কেন্দ্রটি আবারো গৌরবের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে।
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত বেতবুনিয়া ভূ- উপগ্রহ কেন্দ্রটি দেখতে এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসে বলে জানান তিনি।
মহাকাশের বুকে লাল সবুজের চিহ্ন নিয়ে ঘুরপাক খাওয়া বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রন করে বেতবুনিয়ায় গ্রাউন্ড স্টেশন।
স্যাটেলাইটটি নিয়ন্ত্রণে দেশে স্থাপিত দুটি গ্রাউন্ড স্টেশনের একটি এটি। অন্যটি গাজীপুরে।
ফ্রান্সের থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেসের নিয়োগকারী বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। ২০১৬ সালে বেতবুনিয়ায় এই গ্রাউন্ড নির্মাণ করে। বর্তমানে স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশনের নাম বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের অন্যতম রূপকার বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে গ্রাউন্ড স্টেশনের আনুষ্ঠানিক নামকরণ করা হয়েছে।
২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ থাকা দেশগুলোর তালিকায় যুক্ত হয় বাংলাদেশের নাম যেই স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
Leave a Reply