ন্যাশনাল ডেস্ক : বন বিভাগ সুন্দরবনের বন্যপ্রাণীদের সুপেয় পানি পানের সুবিধার্থে ৮০টি পুকুর পুনঃখনন করেছে।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (সুন্দরবন পশ্চিম) এবং প্রকল্প পরিচালক আবু নাসের মহসিন বাসসকে বলেন, ‘সুন্দরবনে বাঘসহ সকল বন্যপ্রাণীর সুপেয় পানি পানে যাতে কোনো অসুবিধা না হয় এজন্য এখানে ৮০টি পুকুর পুন:খনন করেছি।’
গত ২০২২ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশ বন বিভাগ বাঘ সংরক্ষণের জন্য ‘সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প শুরু করে। এই প্রকল্পের আওতায় বন বিভাগ সুন্দরবনে মিষ্টি পানির উৎসগুলোকে পুনরুদ্ধার করে।
মহসিন বলেন, এই বছর বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে পুকুরগুলো এখনই পানিতে ভরেনি। তবে, বর্ষা শুরু হলে পুকুরগুলো বৃষ্টির পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে এবং বন্যপ্রাণীরা এই পুকুরগুলো থেকে সহজে সুপেয় পানি পান করতে পারবে।
সুন্দরবনই পৃথিবীর একমাত্র শ্বাসমূলীয় বন যেখানে বাঘ বসবাস করে। তবে, প্রাকৃতিক ও মানব সৃষ্ট কারণে এই বনের প্রতিবেশ ক্রমশই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সুন্দরবন প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসে আক্রান্ত হয় এবং এই বনের সুপেয় পানির উৎসগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। এর ফলে বন্যপ্রাণীরা সুপেয় পানি পান করতে অসুবিধায় পড়ে।
২০২০ সালের ঘূর্ণিঝড় আমপানের কারণে সুন্দরবনের অধিকাংশ এলাকা সমুদ্রের নোনা জলে প্লাবিত হয়। ফলে, সুন্দরবনের পুকুরগুলো লবণাক্ত হয়ে পড়ে এবং বন্যপ্রাণীরা সেই লবণাক্ত পানি পান করতে বাধ্য হয়।
এছাড়া, সুন্দরবনের নদীগুলোতে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় এই বনের প্রতিবেশের ওপর এর প্রভাব ফেলছে এবং মিষ্টি পানির উৎসগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সুন্দরবনের বহু নদী এবং খাল শুকিয়ে গেছে। যার ফলে, বন্যপ্রাণীরা তীব্র পানীয় জলের সংকটে ভুগছে।
আইইউসিএন বাংলাদেশের সাবেক প্রতিনিধি এবং সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক ইশতিয়াক উদ্দিন আহমদ বলেন, যখনই ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ফলে সুন্দরবনের সুপেয় পানির উৎসগুলো বিশেষ করে পুকুরগুলো লবণাক্ত হয়ে পড়ে তখন বাঘ, বানর, হরিণসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীরা লবণাক্ত পানি পান করতে বাধ্য হয়।
তিনি বলেন, বন্যপ্রাণীরা দীর্ঘদিন ধরে একটানা লবণাক্ত পানি পান করলে পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়, বিশেষ করে আলসারে ভোগে এবং অনেক ক্ষেত্রে এই বন্যপ্রাণীরা অকালে মারা যায়।
সুন্দরবনে পানীয় জলের তীব্র সংকটের কারণে বন্যপ্রাণীরা অনেক ক্ষেত্রে খাবার পানি খোঁজে লোকালয়ে প্রবেশ করে এবং মানুষের সাথে সংঘাতে জড়ায়। অনেক ক্ষেত্রে মানুষ এবং বন্যপ্রাণী উভয়েরই প্রাণহানি ঘটে।
বন বিভাগ জানায়, গত ১৫ বছরে বাঘ ৫০ বার সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে।
বন বিভাগের তথ্য থেকে জানা যায়, গত ২০০১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সুন্দরবনে ৪৯টি বাঘ মারা গেছে।
Leave a Reply