নিজস্ব প্রতিবেদক:সাতক্ষীরা সদরের আলীপুরের মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে ও সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মোঃ আব্দুর রউফ। ২০০১ সালের নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে রউফ সন্ত্রাসী গটফাদার হিসেবে সাতক্ষীরা সীমান্ত এলাকার ইউনিয়নগুলিতে মুর্তিমান আতঙ্ক হিসসাবে আত্মপ্রকাশ করে।
সে সময়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অনেকে আতঙ্কে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়। সাতক্ষীরা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত এক নির্বাচনী জনসভায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রউফের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী তৎপরতা ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ এনে তাকে গ্রেপ্তারের দাবী জানান। পরবর্তীতে রউফের তৎপরতা ব্যাপক আকার ধারণ করে। সে সময় রউফ প্রকাশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে কুররুচিপূর্ণ ও আপত্তিকর ভাষায় উষ্কানীমমূলক বক্তব্য দিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন।
জানা গেছে, বিএনপির রাজনীতি করেও রউফ বিএনপির আমলে কোনঠাসা হয়ে থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সাতক্ষীরা সদরের আলিপুর এলাকায় তার প্রভাব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। নির্বাচিত হয় আলিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। একাধিক মামলার আসামী হয়ে প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোর পর গত শনিবার (৬ মে) রাতে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামানের নির্দেশনায় সন্ত্রাসী গটফাদার রউফকে নাশকতা মামলায় গ্রেপ্তার করে সদও থানা পুলিশ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর অপারেশন ক্লিনহাটে প্রথম বারের মতো রউফ গ্রেপ্তার হয়। দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার পর মুক্তি পেয়ে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকান্ডে থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় আব্দুর রউফ।
পরবর্তীতে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় এলে রউফ আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে বিএনপির হয়ে স্বমূর্তিতে আত্মপ্রকাশ করে। ২০১৩ সালে সারাদেশ থেকে সাতক্ষীরাকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা চালায় এই রউফের নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসীরা। বিএনপির আমলে সাতক্ষীরায় কোনঠাসা হয়ে থাকা রউফ পুনরায় ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে। পরে ২০১৭ সালের ৬ মার্চ তাকে পুনরায় পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এরপর থেকে দীর্ঘ ৬ বছর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মদদে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকেও এই সন্ত্রাসী গটফাদার রউফ। ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকেও সে বিভিন্ন সময়ে সরকার বিরধী কর্মকান্ড চালিয়ে গেছে। এমন কি গত বছরের শুরুতে কয়েকটি জনসভায় তিনি সাতক্ষীরাকে অচল কারার হুমকি দিলেও গ্রেপ্তার হয়নি।অবশেষে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামানের নির্দেশনায় শনিবার (৬ মে) রাত ৯টার দিকে আলিপুর চেকপোস্ট এলাকার নিজ অফিস থেকে সন্ত্রাসী গটফাদার রউফকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ ফখরুল আলম খান বলেন, আব্দুর রউফকে দীর্ঘদিন ধরে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালানো হচ্ছিল। তার বিরুদ্ধে ১২টি মামলা রয়েছে। গত শনিবার রাত ৯টার দিকে গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়, আবদুর রউফ আলীপুর এলাকার সোনালী ফিলিং স্টেশনের সামনে অবস্থান করছে। এরপর পুলিশ পরিদর্শক নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে রাত সাড়ে নয়টার দিকে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা করে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী কোন অপশক্তিকে স্যার না দেওয়া নির্দেশ দিয়েছেন সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান স্যার। তারই নির্দেশে দেশবিরোধী শক্তিকে নির্মূল করতে আমরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২০২২ সালের ২ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা সদর থানার উপপরিদর্শক ইসমাইল হোসেনের করা একটি নাশকতা মামলার আসামি হিসেবে আবদুর রউফকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
Leave a Reply