ঘাটাইলে মাদক সেবন নিয়ে দুই গ্রামের মানুষের মধ্যে চার দিন ধরে সংঘর্ষ চলছে। গত শনিবার দিঘলকান্দি ইউনিয়নের বাদেপারশি ও পাড়াগ্রামে এই সংঘর্ষ শুরু হয়। দু’দিন থেমে থেমে সংঘর্ষ চললেও মঙ্গলবার পাড়াগ্রামের লোকজন মাইকিং করে বাদেপারশি গ্রামে হামলার ঘোষণা দেয়। ঘোষণার পর আমিনুর ইসলাম (২৭) নামে বাদেপারশি গ্রামের একজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দিঘলকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম। পরিবেশ থমথমে। গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বিবদমান গ্রাম দুটির বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাড়াগ্রামের উঠতি বয়সী কিছু ছেলে বাদেপারশি গ্রামের ঈদগাহ মাঠের পাশের কবরস্থানে মাদক সেবন করে। গত শুক্রবার এলাকাবাসী ওই ছেলেদের ধর্মীয় স্থানে মাদক সেবন না করতে নিষেধ করেন। নিষেধ অমান্য করে পরদিন একই স্থানে মাদক সেবন করতে জমায়েত হয় পাড়াগ্রামের কিশোররা। স্থানীয়রা চরথাপ্পড় দিয়ে তাদের তাড়িয়ে দেন। ওই কিশোররা নিজ গ্রামে গিয়ে যুবসমাজের কাছে বিষয়টি ভুলভাবে উপস্থাপন করে। পরে ওই কিশোরসহ কিছু যুবক শনিবার রাত ৯টার দিকে বাদেপারশি গ্রামে হামলা চালায়। কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর করে তারা। এ সময় বাদেপারশি গ্রামের লোকজন মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেন, তদের গ্রামে পাড়াগ্রামের লোকজন আক্রমণ করেছে। যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে বের হতে মাইক থেকে ঘোষণা আসে।
সংঘর্ষের খবর যায় চেয়ারম্যান রেজাউল করিমের কাছে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে খবর দেন তিনি। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। এর পর রোববার পরিবেশ শান্ত থাকে। সোমবার বিকেলে পাড়াগ্রামের আনছার আলীর ছেলে মো. আব্দুল্লাহ (২২) বাদেপারশি বিলে মাছ ধরতে যান। সেখানে তাঁকে একা পেয়ে মারধর করে বাদেপারশি গ্রামের মো. হৃদয়, আকাশসহ কয়েকজন কিশোর। আব্দুল্লাহ নিজ গ্রামে ফিরে মারধরের বিষয়টি জানান। পরে ঘটনাটি আর কিশোর যুবকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। বিবাদ ছড়িয়ে পড়ে দুই গ্রামের বয়স্কদের মধ্যেও। সোমবার রাতে সভা ডাকেন পাড়াগ্রামের লোকজন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকালে মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা আসে– যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে বাদেপারশি গ্রামে আক্রমণ করা হবে।
চেয়ারম্যান রেজাউল করিমের ভাষ্য, বিষয়টি লোকমুখে শোনার পর গ্রামের নেতৃস্থানীয় কয়েকজনকে ফোন করে শান্ত থাকতে বলেন তিনি। ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাসও দেন। কিন্তু পাড়াগ্রামের লোকজন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বাদেপারশি ঈদগাহ মাঠে অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে চেয়ারম্যান ঈদগাহ মাঠে এসে পাড়াগ্রামের লোকদের তাদের গ্রামের দিকে ফিরিয়ে দেন।
চেয়ারম্যান বলেন, বাদেপারশি গ্রাম সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য আব্দুর রহিম ও পাড়াগ্রাম সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য ইকবাল হোসেনসহ দুই গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বাদেপারশি ঈদগাহ মাঠে মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে বিষয়টি সমাধানের জন্য বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠকে যাওয়ার পথে চেয়ারম্যানের মোটরসাইকেলের পেছনের আসনে বসে থাকা বাদেপারশি গ্রামের আমিনুর ইসলামের ওপর দা-লাঠি নিয়ে হামলা করে পাড়াগ্রামের লোকজন। আমিনুরকে জড়িয়ে ধরেন চেয়ারম্যান। রক্তে তাঁর গায়ের পাঞ্জাবি ভিজে যায়। পরে আমিনুরকে উদ্ধার করে কালীহাতি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।
ঘাটাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ লোকমান হোসেন বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা আছে। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply