ন্যাশনাল ডেস্ক : বাংলাদেশে ৫১ শতাংশ তরুণীর বিয়ে হয় তাদের শৈশবে। দেশে বাল্যবিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ও বিশ্বের মধ্যে অষ্টম। বাংলাদেশে ৩ কোটি ৪৫ লাখ নারীর বিয়ে হয় তাদের বয়স ১৮ বছর হওয়ার আগে। ১ কোটি ৩ লাখ নারীর বিয়ে হয় তাদের বয়স ১৫ বছর হওয়ার আগে। আজ বুধবার বাল্যবিয়ে নিয়ে ইউনিসেফের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়। এতে বলা হয়, বাল্যবিয়ে নির্মূলের ক্ষেত্রে ধীরগতি সবচেয়ে বেশি সাব-সাহারান আফ্রিকায়। ওই অঞ্চলে বাল্যবিয়ের অবসানে ২০০ বছরেরও বেশি সময় লাগবে। গত এক দশকে বাল্যবিয়ে ধারাবাহিকভাবে কমা সত্ত্বেও সংঘাত, জলবায়ুজনিত অভিঘাত ও কোভিড-১৯ এর বিরূপ প্রভাবসহ একাধিক সংকট এক্ষেত্রে কষ্টার্জিত অর্জনগুলো নস্যাৎ করে দেওয়ার হুমকি তৈরি করেছে। বৈশ্বিক বহুবিধ সংকটে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ কঠিন লড়াইয়ের মুখে।বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, শিশুদের বিয়ে দেওয়া উচিত নয়। অগ্রগতি সত্ত্বেও বাংলাদেশে শিশুবধূর সংখ্যা বিস্ময়কর। লাখ লাখ মেয়ের শৈশব কেড়ে নেওয়া হচ্ছে এবং তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। মেয়েরা যেন স্কুলে যেতে পারে তা নিশ্চিত করতে ও তারা যেন পরিপূর্ণভাবে নিজের মধ্যে থাকা সম্ভাবনা অনুযায়ী বেড়ে উঠতে পারে সে সুযোগ দিতে আমাদের জরুরি ও সমন্বিত পদক্ষেপ দরকার।তিনি বলেন, যেসব মেয়ের শৈশবে বিয়ে হয়ে যায়, তাদের তাৎক্ষণিক ও জীবনভর এর পরিণতি ভোগ করতে হয়। তাদের স্কুলে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভাবনা খুবই কম থাকে ও তারা অল্প বয়সে গর্ভধারণের বাড়তি ঝুঁকির সম্মুখীন হয়, ফলস্বরূপ যা শিশু এবং মাতৃস্বাস্থ্যের জটিলতা ও মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়। বাল্যবিয়ের এই প্রচলন মেয়েদের পরিবার ও বন্ধু-বান্ধব থেকেও বিচ্ছিন্ন করতে পারে এবং তাদের নিজেদের কমিউনিটিতে অংশগ্রহণ থেকে বঞ্চিত রাখতে পারে, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ও সার্বিক কল্যাণের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করা মেয়েদের ‘বাল্যবিয়ে’ হওয়ার ঝুঁকি বৈশ্বিক গড়ের প্রায় দ্বিগুণ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়, কোভিড-১৯ এর চলমান প্রভাবসমূহের কারণে বিগত এক দশকে বাল্যবিয়ের অবসান ঘটাতে মূল্যবান অর্জনগুলোও হুমকির সম্মুখীন বা এমনকি তা আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, মহামারিটি ইতোমধ্যে বাল্যবিয়ে প্রতিহতের সংখ্যা ২০২০ সাল থেকে এক-চতুর্থাংশ কমিয়ে দিয়েছে।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেন, বিশ্ব একের পর সংকটে জর্জরিত, যা ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের আশা ও স্বপ্নকে চুরমার করে দিচ্ছে, বিশেষ করে মেয়েদের যাদের বিয়ের কনে হিসেবে নয় বরং শিক্ষার্থী হিসেবে থাকা উচিত। স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক সংকট, ক্রমবর্ধমান সশস্ত্র সংঘাত এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রভাব পরিবারগুলোকে বাল্যবিয়ের মতো মিথ্যা ধারণার আশ্রয় নিতে বাধ্য করছে।বিশ্লেষণে অন্তর্ভুক্ত সর্বশেষ বৈশ্বিক হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী আজ জীবিত প্রায় ৬৪ কোটি মেয়ে ও নারীর বিয়ে হয়েছে তাদের ছোটবেলায়, অথবা বলা যায়, প্রতি বছর ১ কোটি ২০ লাখ মেয়ের বিয়ে হয় তাদের ছোটবেলায়। পাঁচ বছর আগে এ বিষয়ে সর্বশেষ হিসাব প্রকাশের পর এ পর্যন্ত শৈশবে বিয়ে হয়ে যাওয়া তরুণীর সংখ্যা ২১ শতাংশ থেকে ১৯ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে এই অগ্রগতি সত্ত্বেও ২০৩০ সালের মধ্যে বাল্যবিয়ের অবসান করার যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তা পূরণের জন্য বিশ্বব্যাপী ওই কমার গতি ২০ গুণ দ্রুততর করতে হবে।
ক্যাথরিন রাসেল বলেন, আমরা প্রমাণ করেছি যে বাল্যবিয়ের অবসানে অগ্রগতি সম্ভব। তবে এর জন্য বাল্যবিয়ের ঝুঁকিতে থাকা মেয়ে ও পরিবারগুলোর জোরালো সমর্থন প্রয়োজন। মেয়েদের স্কুলে টিকিয়ে রাখার বিষয়ে এবং তাদের অর্থনৈতিক সুযোগ নিশ্চিত করার দিকে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে।
Leave a Reply