সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের যুদ্ধাপরাধ মামলায় গ্রেফতারকৃত আসামি আকবর আলী অসুস্থতা দেখিয়ে আদালত থেকে জামিন নিয়ে জামিনের শর্ত ভঙ্গ করে এলাকায় গিয়ে জামায়াতের নেতাকর্মীদের নিয়ে মহড়া দিচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে তিনি বাড়িতে যায়। শুক্রবার (৩১ মার্চ) সারাদিন যুদ্ধকালীন অপরাধ সংঘটিত এলাকা নলতা হাটখোলায় জামায়াত নেতা আব্দুল্লার মালকানাধীন শাহী বস্ত্রলয়ের সামনে গিয়ে জামায়াত নেতাদের নিয়ে একত্রিত হয়ে মামলার বাদী ও স্বাক্ষীদের বিরুদ্ধে হুঙ্কার দেন।
এ ঘটনায় মামলার বাদী, সাক্ষী ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষজন আতঙ্কে আছেন। তাঁরা বিষয়টি মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, মামলায় রাজাকার আকবর আলীসহ একই অভিযোগে জড়িত থাকা আরো তিন আসামীর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর থেকে তদন্ত শুরু হয় এবং ২০২১ সালের ২৪ অক্টোবর শেষ হয়। তাদের বিরুদ্ধে আটক, নির্যাতন, অপহরণ, গণহত্যা ও অগ্নিসংযোগের মোট ২টি অভিযোগ আনা হয়েছে।
অভিযোগ-১ এ বলা হয়েছে- ১৯৭১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর আনুমানিক সময় ৪টার সময় রহমতুল্লা মোড়ল, তার ছেলে গোলাম মোস্তফা মোড়লকে সঙ্গে করে সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ থানাধীন নলতা হাটে বাজার করতে যান।
এ সময় মুক্তিযোদ্ধা আনছারুল মাহমুদ নলতা হাটে সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ সড়কের একটি বাসে পাকিস্তানি সেনা থাকার সন্দেহে গ্রেনেড ছুড়ে। কিন্তু তাতে কেউ হতাহত হয়নি। গ্রেনেড ছুড়ার প্রতিশোধ নিতে বিকেল ৫টার দিকে আসামিরা পাকিস্তানি আর্মির সঙ্গে ইন্দ্রনগর মাদ্রাসায় একত্র হয়ে নলতা হাটে আক্রমণ করে। এ সময় রাজাকাররা স্বরাব্দীপুর গ্রামের মাদার আলী গাজীকে গুলি করে হত্যা করে।
এ ঘটনায় রাজাকারদের গুলিতে ইন্দ্রনগর গ্রামের আব্দুল রহমান ওরফে মেদু মোড়ল ও রহমতুল্লাহ মোড়ল গুরুতর আহত হন। ২৬ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টায় নিজ বাড়িতে রহমতুল্লাহ মোড়লের মৃত্যু হয়।
অভিযোগ- ২ এ বলা হয়, ১৯৭১ সালে ৬ মে আনুমানিক ১২টার সময় সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ থানার ইন্দ্রনগর মাদ্রাসার রাজাকার ক্যাম্প হতে আসামিরাসহ পাকিস্তানি সেনারা দেবহাটার হাদিপুর গ্রামের ঘোষবাড়িতে হামলা করে
সেখান থেকে নরেন্দ্রনাথ ঘোষকে আটক করে বাড়ির পেছনে নিয়ে গুলি হত্যা করে লাশ পুকুরে ফেলে দেয়। এরপর তারা শরৎচন্দ্র ঘোষ, গোপিনাথ ঘোষ, হেমনাথ ঘোষ এবং ওয়াজেদ আলী বিশ্বাসকে আটক করে বাড়ির দক্ষিণ দিকে ডোবায় নিয়ে সারিবদ্ধভাবে হত্যা করে লাশ পানিতে ফেলে রাখে। সেখানে নরেন্দ্রনাথ ঘোষের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বাধা দিতে গেলে আসামিরা তাকে আটক করে নির্যাতন করে। ঘোষ বাড়ির মালামাল লুট করে এবং অগ্নিসংযোগ করে। মামলার তদন্ত করেন শাহজাহান কবীর। এ মামলায় ১৯ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
এদিকে, ৭১ এ পিতাকে হত্যার দায়ে সাতক্ষীরা আদালতে ২০০৯ সালে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার গোলাম মোস্তফার দায়েরকৃত মামলায় ২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবর আকবর আলীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এছাড়াও অন্য তিন আসামীর মধ্যে একই উপজেলার পূর্ব নলতা গ্রামের রাজাকার আব্দুল হামিদ খান ২০২৩ সালের ৩১ মার্চ গ্রেফতার হয়।
২০২১ সালের ২৪ অক্টোবর তদন্ত সংস্থা একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে আকবর আলীসহ ৩ জন জড়িত বলে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করে। গত বছরের ২৪ মার্চ আকবর আলী আদালতকে অসুস্থতার সাজানো তথ্য দিয়ে অন্তর্র্বতীকালীন জামিন মঞ্জুর করিয়ে নেয়। শর্ত মতে ঢাকা শহরের মধ্যে অবস্থানের নির্দেশনা দিয়ে জামিন মঞ্জুর করা হলেও সুস্থ আকবর আলী দেদারছে সাতক্ষীরা, খুলনাসহ প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ান এলাকায়ও।
মামলার স্বাক্ষী আবুল হোসেন পাড় জানান, রাজাকার আকবর আলী আমার প্রতিবেশী। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি বাড়িতে এসেছেন। জামিনের সত্ত্ব অনুযায়ী তিনি বাড়িতে আসতে পারবেন না। তবে তিনি আদালতের আদেশ সামান্য করে বাড়িতে এসে আগামী সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে কাজ করে যাচ্ছেন। আজ সকালে থেকে তিনি নলতা বাজারের বিভিন্ন দোকানে দোকানে গিয়ে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করেন। বিকাল থেকে জামাতের নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি বাড়িতে মিটিং করছেন।
কালিগঞ্জ থানার ওসি মামুন রহমান বলেন, রাজাকার আকবর আলী সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। সে বাড়িতে এসে মামলার সাক্ষীদের হুমকি ধামকি দিচ্ছে বলে আমরা শুনেছি। আগামীকাল সাক্ষীরা জিডি করবে। তারপরেই আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহাজাহান কবীর বলেন, বিভিন্ন মারফত জানতে পেরেছি তিনি এলাকায় রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন। তিনি এমন কর্মকান্ড করলে মামলার বিচারের ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া আদালতের সত্য ভঙ্গ করায় আদালতের ভিত্তি ব্যবস্থা নিতে পারেন।
Leave a Reply