মেধা ও যোগ্যতার চেয়ে জ্যেষ্ঠতাকে প্রাধান্য দিয়ে সোনালী ব্যাংকের পদোন্নতি নীতিমালা করার উদ্যোগে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। নতুন নীতিমালায় একটি শূন্য পদের বিপরীতে সর্বোচ্চ তিনজনকে সাক্ষাৎকারে ডাকা হবে। বর্তমানে এক পদে তিন বছর পূর্ণ হলেই তিনি সাক্ষাৎকারের যোগ্য হন। নতুন নীতিমালা কার্যকর হলে পদোন্নতিতে মেধা ও যোগ্যতার চেয়ে জ্যেষ্ঠতা গুরুত্ব পাবে। নীতিমালা কার্যকর না করার অনুরোধ জানিয়ে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, সাক্ষাৎকার নেওয়ার খরচ কমানোর যুক্তিতে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের গত ২৮ ফেব্রুয়ারির সভায় নতুন নীতিমালা অনুমোদন হয়। সেখানে বলা হয়েছে, অফিসার থেকে ডিজিএম পর্যন্ত পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা তিন গুণের বেশি হলে প্রণীত জ্যেষ্ঠ তালিকা থেকে প্রতিটি শূন্য পদের বিপরীতে সর্বোচ্চ তিনজন সাক্ষাৎকারের জন্য বিবেচিত হবেন। এতে ১০০টি শূন্য পদের বিপরীতে কেবল জ্যেষ্ঠ ৩০০ কর্মকর্তা ডাক পাবেন। অধিকতর যোগ্য হলেও তাঁদের পদোন্নতির জন্য ডাকাও হবে না। তাতে তুলনামূলক পরের দিকে থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে ভালো কাজের আগ্রহ হারাবেন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টদের অনেকে।
সোনালী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বর্তমানে ১০০ শূন্য পদের জন্য হয়তো ৫০০ কর্মকর্তা সাক্ষাৎকারে ডাক পান। বিভিন্ন এলাকা থেকে যাঁরা সাক্ষাৎকার দিতে ঢাকায় আসেন, প্রত্যেকে টিএডিএ বাবদ হয়তো তিন থেকে চার হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। সোনালী ব্যাংকের সামগ্রিক খরচ বিবেচনায় এটা খুব সামান্য। তিনি বলেন, এখন নিচের দিকে থাকা কর্মকর্তারা পদোন্নতি পান না। তবে তাঁদের মধ্যে ভালো কাজের একটা প্রতিযোগিতা থাকে। নতুন নীতিমালা কার্যকর হলে সেটি বন্ধ হতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, বর্তমানে একই পদে তিন বছর হলেই তিনি পদোন্নতির জন্য সাক্ষাৎকার দেওয়ার যোগ্য হন। সেখান থেকে শিক্ষাগত যোগ্যতা, কর্মদক্ষতা, কর্মক্ষেত্রে বিশেষ কাজ, ব্যাংকিং ডিপ্লোমা, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আছে কিনা এবং জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে সার্বিক বিবেচনায় কারও অবস্থান দুর্বল হলে তিনি জ্যেষ্ঠ হলেও পদোন্নতি পান না। এতে করে সব পর্যায়ে ভালো কাজ করার এক ধরনের প্রতিযোগিতা রয়েছে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, সোনালী ব্যাংকের চাকরি প্রবিধানমালা ২০২২ অনুযায়ী. ‘পদোন্নতির ক্ষেত্রে মেধা, কর্মদক্ষতা ও জ্যেষ্ঠতাকে গুরুত্ব দেওয়া হইবে’ এবং ‘কেবল জ্যেষ্ঠতার কারণে কোনো কর্মচারী অধিকার হিসেবে তাহার পদায়ন বা পদোন্নতি দাবি করিতে পারিবেন না’ উল্লেখ আছে। অথচ নতুন নীতিমালা কার্যকর হলে জ্যেষ্ঠরা অগ্রাধিকার পাবেন। মেধাকে পাশ কাটিয়ে কেবল জ্যেষ্ঠতাকে প্রধান্য দিলে সোনালী ব্যাংকের সার্বিক প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ব্যাংক খাতে সুশাসন, দক্ষতা, আধুনিক ব্যাংকিং সেবা ও ঝুঁকি মোকাবিলায় দক্ষ ব্যাংকার গড়ার ক্ষেত্রে যা অন্তরায়। এ অবস্থায় শূন্য পদে সর্বোচ্চ তিনজন ডাকার বিধান কার্যকর না করে বিদ্যমান নিয়মে সাক্ষাৎকার নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
Leave a Reply