সাতক্ষীরায় কেজি দরে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে তরমুজ প্রশাসনের নজরদারির পরও তরমুজের দামে নিয়ন্ত্রণে না আসায় বিক্ষুব্ধ সাতক্ষীরার সাধারণ মানুষ। রমজান মাসে গরমে হাঁসফাঁস করছে শহরের শ্রমজিবী মানুষ। তাপদাহ থেকে পরিত্রাণ পেতে গ্রীষ্মের মৌসুমি রসালো ফল তরমুজের চাহিদাও বেড়েছে বেশ । কিন্তু আকাশ ছোঁয়া দামের কারণে তরমুজের স্বাদ নিতে পারছেন না নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষেরা। সাতক্ষীরা শহরের বাজার গুলো ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা সব নিয়ম ভঙ্গ করে পিস হিসাবের পরিবর্তে কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করছেন। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা তরমুজ নিয়ে সিন্ডিকেট করছে বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা। স্থানীয়রা জানান, এক কেজি তরমুজের দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা । এতে পাঁচ কেজির একটি তরমুজ ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। অথচ, এই তরমুজ ১০০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা পিসের পরিবর্তে কেজির দরে বিক্রি করছেন তরমুজ। যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।
তরমুজ ক্রেতারা বলেন, পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়ৎদার ব্যবসায়ীরা মিলেই সিন্ডিকেট গড়ে তরমুজের দাম বাড়িয়েছে। বাধ্য হয়েই তাদের বেঁধে দেওয়া দামে তরমুজ কিনতে হচ্ছে। প্রশাসনের বাজার মনিটরিং বা এই সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হলে দাম কিছুটা হলেও নাগালে আসতো বলে জানান তারা। অন্যদিকে বাজারে তরমুজ কিনতে গেলে তরমুজের চড়া দাম দেখে অনেকে হতাশা প্রকাশ করেছেন। কৃষক একটি তরমুজ ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। অন্যদিকে বাজারে সেটির দাম ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। এখানে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। আর বর্তমানে ব্যবসায়ীদের নতুন সিন্ডিকেট কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করছে। ব্যবসায়ীরা কৃষকের কাছ থেকে পিস হিসাবে তরমুজ কিনে বিক্রি করছেন কেজি দরে। তরমুজ পানীয় ফল হওয়ায় ওজনে অনেক ভারী। ফলে প্রতি কেজি তরমুজ ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি করেও হচ্ছে মোটা অঙ্কের মুনাফা তুলে নিচ্ছে। কেজি দরে তরমুজ বিক্রির সিন্ডিকেট বন্ধ করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন ক্রেতারা। পলাশপোল থেকে তরমুজ কিনতে আসা দিনমজুর ফাহিম মুন্তাসির বলেন বাড়ি থেকে বলে দিছে তরমুজ নিতে। সারাদিন কাজ করে দুশত টাকা পেয়েছি তরমুজ কিনবো কীভাবে? রাজমিস্ত্রি মেহেদী বলেন আমার অসুস্থ মা তরমুজ খেতে চেয়েছে। ৪০ টাকা কেজি দরে ছোট একটি তরমুজ কিনেছি ১৫০ টাকায়।
সাতক্ষীরা শহরের সার্কিট হাউজ মোড় এলাকার তরমুজ বিক্রেতা আব্দুল লতিফ বলেন আগে আমরা পিস হিসেবে তরমুজ বিক্রি করেছি। এখন আমরা কেজিতে তরমুজ বিক্রি করছি । তাতে একটি তরমুজের দাম পড়ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। আড়ৎদাররা আমাদের কাছে কেজিতে তরমুজ বিক্রি করছে যে কারনে আমাদেরও কেজিতে তরমুজ বিক্রি করতে হচ্ছে। অপর দিকে সাতক্ষীরা শহরের ইটাগাছা হাটের মোড় এলাকার মেসার্স সুন্দরবন ফল ভান্ডারের শফিকুল ইসলাম, মেসার্স সততা ফল ভান্ডারের শহিদুল ইসলাম, মেসার্স মুকুল ফল ভান্ডারের মমিনুর রহমান সহ সকল আড়ৎদার ব্যবসায়ীরা মিলেই সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করছে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে এবং খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কেজি দরে তরমুজ কিনতে বাধ্য হচ্ছে ক্রেতারা। এবিষয়ে সাতক্ষীরা শহরের ইটাগাছা হাটের মোড় এলাকার মেসার্স সুন্দরবন ফল ভান্ডারের আড়ৎদার ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন সকলের সাথে আমাকেও বাজারে কেজি দরে তরমুজ বিক্রয় করতে হয়। প্রতিদিন বাজারের খাজনা বাবদ ৩০০ করে টাকা দিতে হয় আওয়ামীলীগ নেতা কামরুলকে। অনেক তরমুজ ফাটা থাকে, পচে যায় বিভিন্ন কারণে নষ্ট হয়ে যায় । বরিশাল থেকে আমারদের এই তরমুজ আনতে হয় অনেক খরচ হয় যে কারণে আমি অন্যদের মতো কেজিতে তরমুজ বিক্রয় করতে বাধ্য হয়েছি। এদিকে ফল ব্যবসায়ীর সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বাবু বলেন, ইতি মধ্যেই জেলা প্রশাসন নজরদারি শুরু করেছেন। কেজি দরে কোন প্রকার তরমুজ বিক্রয় করা যাবেনা। যদি কোন ব্যবসায়ি কেজি দরে তরমুজ ক্রয় করে থাকে তার প্রমাণ তুলে ধরতে হবে প্রশাসনের কাছে, অন্যথায় অন্যায় ভাবে বাজারে লোক ঠকিয়ে ব্যবসা করা যাবে না। প্রশাসনিক কর্মকর্তার আমাদের সাথে বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখার বিষয় নিয়ে বৈঠক করেছেন । প্রশাসনের নিয়মিত নজরদারিতে তরমুজের দামে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করি। সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের দাবী অবিলম্বে অসাধু ব্যবসা়য়ী সিন্ডিকেট বন্ধ করে নিম্ন শ্রমজিবী মানুষ কম টাকায় ক্র়য় করার দাবিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
Leave a Reply