২০২২; চাইলেও বছরটা ভুলতে পারবেন না লিওনেল মেসি। যে যন্ত্রণা তাঁর ভেতরটা তছনছ করে দিয়েছিল। দেরিতে হলেও সেটি তাড়িয়েছেন আর্জেন্টাইন তারকা। কাতারের মহামঞ্চে মহা আনন্দের মেলায় মেসিই তো ছিলেন সবার চোখের মণি। যার ক্যারিয়ারজুড়ে এত এত ট্রফি, শুধু ছিল না বিশ্বকাপটা। আর এই শিরোপা ছোঁয়ার পথে তিনি গড়েছেন অসংখ্য রেকর্ড, ছাড়িয়ে গেছেন নিজেকেও। বলা যায়, ফুটবলে এবার পুরো বছরটা ছিল মেসির সাফল্যে মোড়ানো।
সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলায় এত দিন এক নম্বরে ছিলেন জার্মানির লোথার ম্যাথুস। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নেয় জার্মানরা। সেখানেই থামতে হয় ম্যাথুসকে, যেটা ছিল তাঁর ২৫ নম্বর বিশ্বকাপ ম্যাচ। ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনাল খেলতে নেমে তাঁকে টপকালেন মেসি। এর পর ডি মারিয়ার এঁকে দেওয়া পেনাল্টি থেকে গোল করে ছুঁয়ে ফেলেন ব্রাজিল কিংবদন্তি পেলেকে। বিশ্বকাপে পেলে করেছিলেন ১২ গোল। সেখানেই থেমে থাকেননি, পেলেকে ছাড়িয়ে ছুঁয়ে ফেলেন ১৩ গোল করা ফন্টেইনকেও। শুধু দেশের হয়ে নয়, ক্লাবের জার্সিতেও বছরটা ছিল তাঁর দুর্দান্ত। পিএসজির হয়ে শুরুটায় তিনি মানিয়ে নিতে পারেননি। গোলের জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষায় থাকতে হয়েছিল। কিন্তু ২০২২ সালে এসে সেই মেসি দেখলেন একের পর এক গোল। ফরাসি ক্লাবটির হয়ে এ বছর তিনি ৩৭ ম্যাচে ১৭ গোলের সঙ্গে ২৪ অ্যাসিস্ট করেছেন।
অথচ এই মেসির আগের চারটি বিশ্বকাপ ছিল হতাশার, না পাওয়ার, অপ্রাপ্তির। দেশের হয়ে প্রথম বিশ্বকাপে খেলেছিলেন ২০০৬ সালে। সেবার প্রথম ম্যাচেই সাইডবেঞ্চে বসে কাটাতে হয় এই আর্জেন্টাইনকে। যদিও মেসিকে ছাড়া যাত্রাটা খারাপ হয়নি তাদের। আইভরি কোস্টের বিপক্ষে ২-১ গোলে জিতেছিল আকাশি-সাদারা। দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নেমেই চমক দেখান মেসি। সার্বিয়ার বিপক্ষে আর্জেন্টিনা রীতিমতো গোল উৎসবে মাতে। প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দেয় ৬-০ গোলে। যে ম্যাচে এক গোলের সঙ্গে এক অ্যাসিস্টও করেন তিনি। এর পর মেসির পজিশন বদলে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে নামানো হয়। সার্বিয়ার বিপক্ষে মেসিকে খেলানো হয়েছিল
অ্যাটাকিং মিডফিল্ডে। কিন্তু ডাচদের বিপক্ষে নামেন সেকেন্ড স্ট্রাইকার হিসেবে। পরের ম্যাচেও একই পজিশন থেকে খেলেন। তবে পুরো সময় নয়, মাত্র ৩৬ মিনিট মাঠে ছিলেন। পরপর দুই ম্যাচে আর মেসি গোল পাননি। কোয়ার্টারে জার্মানির সঙ্গে টাইব্রেকারে হেরে যায় আর্জেন্টিনা। ওই ম্যাচে মেসি ছিলেন সাইডবেঞ্চে।
এমন শুরু করা মহাতারকার পরের আসরটিও ভালো হয়নি। পাননি কোনো গোল, একটা অ্যাসিস্টই ছিল তাঁর ব্যক্তিগত প্রাপ্তি। আর কোয়ার্টার ফাইনালে ঘুরেফিরে সেই জার্মানিতে কাটা পড়ে আর্জেন্টিনা। ২০১৪ বিশ্বকাপ হয় ব্রাজিলের মাটিতে, লাতিনের চেনা পরিবেশে মেসির আর্জেন্টিনা দেখায় ঝলক। একের পর এক জয়ে ফাইনালে ওঠে তারা। কিন্তু আরেকটি হৃদয়ভাঙার গল্প। কাকতালীয়ভাবে সেই জার্মানিতেই আটকে যায় তাদের স্বপ্ন। তবে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স দিয়ে পুরো টুর্নামেন্টে আলো ছড়িয়ে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতে নেন মেসি। সেবার চার গোলের সঙ্গে এক অ্যাসিস্ট ছিল তাঁর।
২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ আবার মেসির জন্য বিষাদের ছিল। ব্যক্তিগতভাবেও তেমন কিছু করতে পারেননি তিনি। আর দলও বিদায় নেয় শেষ ষোলো থেকে। যে আসরে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে একটা গোল করেছিলেন মেসি। আর ফ্রান্সের বিপক্ষে দুটি গোলে অ্যাসিস্ট। এবার আবার চেনারূপে। বলা যায় নিজেকে ছাড়িয়ে গেলেন। ভাঙলেন আগের চার আসরের সব রেকর্ড। সেমিফাইনাল পর্যন্তই করলেন পাঁচ গোল, সঙ্গে তিনটি অ্যাসিস্ট
Leave a Reply