দোহা, ২১ নভেম্বর ২০২২ (বাসস) : বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হিসেবে মঙ্গলবার কাতারে মাঠে নামতে যাচ্ছে ফ্রান্স প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। তবে সকারুদের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে ইনজুরি শঙ্কা ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশ্যমকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। অনুশীলনে চোট পেয়ে সদ্যই দল থেকে ছিটকে গেছেন ব্যালন ডি’অর বিজয়ী করিম বেনজেমা।
কিন্তু ইনজুরি, সাম্প্রতিক ফলাফল ও মাঠের বাইরের বেশ কিছু বিষয় নিয়ে ফরাসী দলে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। সব কিছুকে ছাপিয়ে ১৯৬২ সালে ব্রাজিলের পর প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপের শিরোপাটা ধরে রাখা ফ্রান্সের জন্য কতটা সম্ভব তা নিয়ে শঙ্কা থেকেই যায়।
গত বছর দলের পারফরমেন্সে বেশ চড়াই উৎরাই লক্ষ্য করা গেছে। ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশীপে শেষ ১৬’তে সুইজারল্যান্ডের কাছে পেনাল্টিতে হেরে বিদায় নেয়া দলটি উয়েফা নেশন্স লিগ জিতে কিছুটা হলেও পাপ মোচন করেছে। যে কারনে লেস ব্লুসদের নিয়ে কাতার বিশ্বকাপে তেমন একটা আলোচনা শোনা যাচ্ছে না। শেষ ছয়টি ম্যাচের মাত্র একটিতে জয়ী হয়েছে দেশ্যমের শিষ্যরা। এর মধ্যে ডেনমার্কের বিপক্ষে দুটি পরাজয় দলকে নতুন করে দু:শ্চিন্তায় ফেলেছে। কারন বিশ্বকাপ গ্রুপ পর্বে তাদের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ডেনমার্ক।
নেশন্স লিগের ম্যাচগুলোতে শীর্ষ ইউরোপীয়ান দল হিসেবে শুধুমাত্র ফ্রান্সই বিপাকে পড়েনি, অন্য আরো বেশ কিছু দলই এই তালিকায় রয়েছে। তবে সব ছাপিয়ে ফ্রান্সের সামনে এখন সবচেয়ে বড় দু:শ্চিন্তার বিষয় ইনজুরি। চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপে শিরোপা জয়ে অবদান রাখা মধ্যমাঠের দুই মূল কান্ডারি এন’গোলো কান্তে ও পল পগবার কেউই থাকছেন না বিশ্বকাপে। চেলসির কান্তে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির সাথে লড়াই করছেন। অন্যদিকে হাঁটুর ইনজুরি কাটিয়ে চলতি মৌসুমে এখনো জুভেন্টাসের হয়ে মাঠে নামতে পারেননি পগবা। আগামী সপ্তাহে দেশ্যমের দলে পগবার ফেরার আশা করা হচ্ছিলো। কিন্তু ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে গ্রীষ্মে তুরিনের জায়ান্ট ক্লাবে যোগ দেবার পর নিজেকে কোনভাবেই ফিট করে তুলতে পারছেন না পগবা।
ফরাসি অধিনায়ক হুগো লোরিস স্বীকার করেছেন পগবার দলে থাকাটা জরুরী ছিল। এই দুই মিডফিল্ডার মিলে ১৪৪টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। তাদের অনুপস্থিতিতি ফ্রান্সের মধ্যমাঠে বিশাল একটি শুন্যতার সৃষ্টি করবে। এই অভাব পূরণে ইতোমধ্যেই রিয়াল মাদ্রিদের অরেলিয়েন টিচুয়ামেনি ও জুভেন্টাসের আদ্রিয়েন রাবোয়িতকে ফেবারিট মানা হচ্ছে। ইনজুরির তালিকায় আরো রয়েছেন সেন্টার-ব্যাক রাফায়েল ভারানে। তবে বিশ্বকাপের আগে তার ফেরার আশা করছেন দেশ্যম।
বিশ্বকাপ ফাইনালের একদিন পরে ৩৫ বছরে পা রাখতে যাওয়া বেনজেমার সাম্প্রতিক ফর্ম দলকে উজ্জীবিত করলেও শেষ পর্যন্ত তিনি খেলতে পারছেন না। আরেক অভিজ্ঞ অলিভার গিরুদের এই মুহূর্তে মুল একাদশে প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। যদিও এসি মিলানের হয়ে দারুন ফর্মে রয়েছে গিরুদ। আঁতোয়ান গ্রীজম্যান, ওসমানে ডেম্বেলে ও কিংসলে কোম্যান প্রত্যেকেই বিশ্বমানের ফরোয়ার্ড। গত মৌসুমে বুন্দেসলিগার সেরা খেলোয়াড় ছিলেন ক্রিস্টোফার এনকুকু। ইনজুরিতে পড়ে তিনিও শেষ মুহূর্তে দল থেকে ছিটকে গেছেন। এরপর এমবাপ্পে তো রয়েছেনই। পেলের পর প্রথম টিনএজার হিসেবে ২০১৮ সালে ফাইনালে এমবাপ্পে গোল করেছিলেন। এমবাপ্পের জ্বলে ওঠার দিনটি প্রতিপক্ষ দলগুলোর জন্য মোটেই স্বস্তিদায়ক হয়না।
পেরুকে প্লে-অফে পেনাল্টি শ্যুট আউটে হারিয়ে বিশ্বকাপের টিকিট পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। সকারুজ কোচ গ্র্যাহাম আর্নল্ড প্লে-অফের ফাইনালে ১২০ মিনিটে ম্যাথিউ ডেভিড রায়ানের স্থানে বদলী গোলরক্ষক এ্যান্ড্রু রেডমায়নের উপর আস্থা রেখেছিলেন। আর এই রেডমায়নের উপর ভর করেই অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে পৌঁছে যায়। এনিয়ে চতুর্থবারের মত বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে নাম লিখিয়েছে সকারুজরা। আগের তিন আসরেই গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয়া অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে গত ৯টি ম্যাচে মাত্র একটিতে জয়ের দেখা পেয়েছে। ২০১০ সালে সার্বিয়ার বিপক্ষে তারা ২-১ গোলে জয়ী হয়েছিল। বিশ্বকাপের আগে সেপ্টেম্বরে নিউজিল্যান্ডকে দুটি ম্যাচেই পরাজিত করেছে।
চার বছর আগেও গ্রুপ পর্বে একে অপরের মোকাবেলা করেছিল ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়া। আঁতোয়ান গ্রীজম্যানের পেনাল্টি ও আজিজ বেহিচের আত্মঘাতি গোলে ফ্রান্স ২-১ গোলে জয়ী হয়েছিল। এর আগের পাঁচবারের মোকাবেলায় সকারুজরা ২০০১ কনফেডারেন্স কাপে একমাত্র জয় পেয়েছিল।
Leave a Reply