আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ২০১৭ সালের পর এই প্রথমবার জাপানের ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল উত্তর কোরিয়া। বিষয়টি এ অঞ্চলে উত্তেজনার সঞ্চার করেছে। নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে নিভৃতিকামী কমিউনিস্ট দেশটির পরমাণু অস্ত্রের সামর্থ্য ও পরিকল্পনার বিষয়টি।
নিজেদের পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে সম্প্রতি নতুন আইন পাস করেছে উত্তর কোরিয়া।
ওই আইনে বলা হয়েছে, নিজ প্রতিরক্ষায় পারমাণবিক অস্ত্রের হামলা চালানোর অধিকার রয়েছে তাঁদের। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন আরো বলেছেন, কারো সঙ্গে তাদের পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ আলোচনার কোনো সম্ভাবনা নেই।
ঠিক কী ধরনের পরমাণু সক্ষমতা রয়েছে উত্তর কোরিয়ার?
শেষবার উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক বোমা পরীক্ষা করেছিল ২০১৭ সালে। সেবার পরীক্ষার স্থানের বিস্ফোরণের তীব্রতা ছিল একশ থেকে তিনশ’ ৭০ কিলোটন।
১৯৪৫ সালে হিরোশিমায় যুক্তরাষ্ট্রের নিক্ষেপ করা আণবিক বোমার চেয়ে ছয়গুণ বেশি ক্ষমতাধর একটি একশ কিলোটনের বোমা। একটিমাত্র বোমায় গোটা হিরোশিমা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল।
উত্তর কোরিয়া জানিয়েছিল, ২০১৭ সালে চালানো পরীক্ষাটি ছিল তাদের প্রথম থার্মোনিউক্লিয়ার অস্ত্র বিষয়ে। এটিকেই সবচেয়ে বেশি শক্তিধর পারমাণবিক অস্ত্র ধরা হয়।
কোথায় হচ্ছে পরীক্ষা?
এর আগে উত্তর কোরিয়ার পুঙ্গে-রি এলাকার ভূ-গর্ভে ছয়টি পরীক্ষা করা হয়েছিল। তবে ২০১৮ সালে খবর আসে, পারমাণবিক সক্ষমতার পরীক্ষা হয়ে যাওয়ায় উত্তর কোরিয়া সাইটটি বন্ধ করে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহলকে আশ্বস্ত করতে ওই সাইটের কিছু ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ বিদেশি সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে গুড়িয়েও দেওয়া হয়। তবে, এ বছরের শুরুর দিকে প্রকাশিত স্যাটেলাইটের ছবিতে দেখা গেছে, জায়গাটিতে ফের পরীক্ষা বিষয়ক কাজ শুরু করেছে উত্তর কোরিয়া। সেখানে আবার কোনো পারমাণবিক পরীক্ষা হলে তা হবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নির্দেশনার লঙ্ঘন।
পারমাণবিক চুল্লি
পারমাণবিক চুল্লি ফের চালু করছে উত্তর কোরিয়া। ২০১৮ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, নিজেদের সব পারমাণবিক সামগ্রী তৈরির কাঠামোর অবসান ঘটানো হবে। কিন্তু স্যাটেলাইট ছবির তথ্য বলছে, দেশটি অস্ত্র তৈরির উপযোগী মানের প্লুটোনিয়াম বানাতে পারমাণবিক চুল্লি চালু করছে।
কোন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করছে উত্তর কোরিয়া?
চলতি বছর ৩০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে উত্তর কোরিয়া। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যালিস্টিক, ক্রুজ এবং শব্দের চেয়ে বেশি গতির হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র।
হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র তুলনামূলক নিচু দিয়ে শব্দের চেয়ে কয়েকগুণ দ্রুতগতিতে ছুটতে পারে। নিচু দিয়ে ওড়ার বদৌলতে এটি রাডারের চোখ ফাঁকি দিতে পারে। এ ছাড়াও উত্তর কোরিয়ার পরীক্ষা করা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে হোয়াসঙ-১৪। এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা আট হাজার কিলোমিটার। কিছু কিছু গবেষণার তথ্য বলছে, এটি দশ হাজার মাইল পর্যন্তও ছুটতে পারে। এটি উত্তর কোরিয়ার প্রথম আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র।
উত্তর কোরিয়ার নতুন ক্ষেপণাস্ত্র হোয়াসঙ-১৫ এর পাল্লা ১৩ হাজার কিলোমিটার বলে শোনা যাচ্ছে। ২০২০ সালের অক্টোবরে হোয়াসঙ-১৭ ক্ষেপণাস্ত্রও চালু করেছে দেশটি। ধারণা করা হচ্ছে, এটির পাল্লা হবে ১৫ হাজার কিলোমিটার বা তার চেয়ে বেশি।
Leave a Reply