ন্যাশনাল ডেস্ক: আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের কারণে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার কোনও সুযোগ পাচ্ছে না জঙ্গি সংগঠনগুলো। তবে বিভিন্ন সময় তারা অনলাইনে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন ক্লোজ গ্রুপে যোগাযোগ ও সদস্য সংগ্রহের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তার ওপর বাসা থেকে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনা জঙ্গি দমনে আরেক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি কুমিল্লা থেকে সাত তরুণ নিখোঁজ হয়। তারা কথিত হিজরতের উদ্দেশে বের হয়েছে—এমন তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই ৭ জনের পর তাদের আরও ৪ সহপাঠী বাসা থেকে বের হয়ে যায়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের উদ্ধার করে। ডি-রেডিক্যালাইজেশন মাধ্যমে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয় তাদের। ওই চার জন জানায়, কথিত হুজুরের দিক নির্দেশনায় তারা বাসা থেকে বের হয়ে যায়।
গোয়েন্দারা বলছেন, বিভিন্ন ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করতে কনটেন্ট আপ করছে জঙ্গি সংগঠনগুলো। এমনকি অনলাইনে জঙ্গিবাদের প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র সংগ্রহের কাজও চালিয়ে আসছে সংগঠনের সদস্যরা। অনলাইনে অন্যান্য সহযোগীদের আইডির সঙ্গে এনক্রিপটেড অ্যাপের মাধ্যমে জিহাদ ও কমব্যাট প্রশিক্ষণের ভিডিও এবং জিহাদের ময়দানে শরিক হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি দেশবিরোধী পরিকল্পনার সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছে জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা।
বাংলাদেশ পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) -এর তথ্য বলছে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকায় ১৭৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গত সাড়ে তিন বছরে দেশব্যাপী অভিযান পরিচালনা করা হয় ১১১টি। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আনসার উল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য সংখ্যা বেশি।
চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জায়গায় ২২টি অভিযান পরিচালনা করে ২৮ জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে জেএমবি ৮ জন, আনসার উল্লাহ বাংলা টিম এবিটির সদস্য চার জন, ‘আল্লাহর দলের’ পাঁচ জন, হিজবুত তাহরিরের একজন, আনসার আল ইসলামের সাত জন এছাড়া অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনে সংশ্লিষ্ট তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়।
অন্যদিকে র্যাবের তথ্য বলছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে ২৮০৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে ১৪৩০ জন জেএমবির সদস্য। অভিযানে বিভিন্ন সময়ে উদ্ধার করা হয় গোলাবারুদ, বিস্ফোরক, সুইসাইডাল ভেস্ট, বোমা তৈরির কন্টেইনার ও উগ্রবাদী বিভিন্ন বই।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৮০টি অভিযানে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৯৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এরমধ্যে জেএমবির সদস্য ছিল ২১ জন।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে র্যাব বিশ্বের বুকে রোল মডেল। তবে বাহিনীর কোনও সদস্যই আত্মতুষ্টিতে ভুগছে না। গোয়েন্দা কার্যক্রম চলছে। যখনই তথ্য পাওয়া যাচ্ছে জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে অনেককে গ্রেফতার করা হচ্ছে। বিভিন্ন প্রোগ্রামের মাধ্যমে জঙ্গিবাদের জড়িয়ে পড়াদের অনেককেই পুনর্বাসনের মাধ্যমে সামাজিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ যাচ্ছে র্যাব।
এটিইউ-এর মিডিয়া অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস উইংয়ের পুলিশ সুপার শেখ মোহাম্মদ আসলাম খান বলেন, জঙ্গিবাদ দমনে আমরা বেশ কয়েক ধাপে কাজ করে থাকি। সফট অ্যাপ্রোচ, হার্ড অ্যাপ্রোচ, গবেষণা এবং ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব ইউনিটের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
Leave a Reply