প্রয়াত দখিনায়ন সম্পাদক আব্দুর রহিম কচি ছিলেন অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত


নিজস্ব প্রতিনিধি: দারিদ্র্যকে ধারণ করে সব লোভ লালসাকে পেছনে ফেলে সততার সাথে সাংবাদিকতা করে গেছেন সাতক্ষীরার সাপ্তাহিক দখিনায়ন সম্পাদক মুফতি আব্দুর রহিম কচি। একজন নির্লোভ, পাপমুক্ত, নিরহংকারী ও সৎ ব্যক্তি হিসাবে তার জুড়ি মেলা ভার। তিনি সাতক্ষীরার বহু তরুণকে হাত ধরে সাংবাদিকতা শিখিয়েছেন। এখন এইসব সাংবাদিক দেশের বিভিন্ন শীর্ষ দৈনিক ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় কাজ করছেন। দখিনায়ন সম্পাদক মুফতি আব্দুর রহিম কচি তার নিজের জীবন ও আদর্শ দিয়ে নিজেকে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি কোন ফরমাইশি নিউজ প্রকাশ করতেন না। এমনকি কোন প্রেস রিলিজ দেওয়া হলে এর সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকের বক্তব্য জুড়ে দিয়ে রিপোর্টটিকে সমৃদ্ধ করে তুলতেন।
সোমবার সাতক্ষীরা সাংবাদিক ঐক্য আয়োজিত তাঁর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকীর স্মরণসভায় উপস্থিত সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। তারা বলেন, মুফতি আব্দুর রহিম কচি পরমুখাপেক্ষী ছিলেন না। প্রচারবিমুখ এই মানুষটি একটি ভাঙাচোরা সাইকেল চড়ে তৎকালীন মহকুমা সাতক্ষীরা থেকে খুলনা জেলা প্রশাসক অফিসে বারবার যাতায়াত করে সাপ্তাহিক দখিনায়নের ডিক্লারেশন আদায় করেছিলেন। তিনি নিজ হাতে রিপোর্ট তৈরী করেছেন, লেটার টাইপে কম্পোজ করেছেন এবং নিজের সম্পাদনায় সাতক্ষীরার জাহান প্রিন্টিং প্রেস থেকে তা প্রকাশ করে সাইকেলের পেছনে অথবা বগলে নিয়ে বিলিবণ্টন করেছেন। তার রিপোর্ট ছিল ক্ষুরধার ও তীর্যকের মতো।
সাতক্ষীরাতে স্থানীয় একটি কনভেনশন সেন্টারে সাংবাদিক ঐক্য’র আহবায়ক সুভাষ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় এই স্মরণসভা। ২০১৭ সালের ৩০ জুন দীর্ঘ রোগভোগের পর এই মানুষটির জীবনাবসান ঘটে উল্লেখ করে বক্তারা তার পথ অনুসরণ করার জন্য সাংবাদিক সমাজের প্রতি আহবান জানান।
সাংবাদিক ঐক্য’র সদস্য সচিব শরীফুল্লাহ্ কায়সার সুমনের সঞ্চালনায় পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণসভায় অতিথি হিসাবে আরও বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা দৈনিক কালের চিত্র সম্পাদক অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আনিসুর রহিম, দৈনিক দৃষ্টিপাত পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক জিএম নূর ইসলাম, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাপ্তাহিক সূর্যের আলো সম্পাদক ওয়ারেশ খান চৌধুরী পল্টু, বাংলাদেশ বেতারের ফারুক মাহাবুবর রহমান প্রমুখ অতিথি। এতে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাসদ সভাপতি অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মোহনা টিভির আব্দুল জলিল, গণফোরাম সভাপতি আলী নূর খান বাবুল, খবর পত্রের রবিউল ইসলাম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ডা. মুনসুর রহমান, যমুনা টিভির আহসানুর রহমান রাজীব, সমাজের কাগজের আমিরুজ্জামান বাবু, ডেইলি অবজারভারের এম জিল্লুর রহমান প্রমুখ সাংবাদিক ও সুধীজন।
বক্তারা তার রূহের মাগফেরাত ও পারিবারিক সুখশান্তি কামনা করে বলেন, এখন থেকে মুফতি আব্দুর রহিম কচির মতো নিবেদিত সাংবাদিক ও সুধীজনকে আমরা স্মরনে রাখার দায়িত্ব গ্রহণ করতে চাই। গুণীর মর্যাদা না দিলে সমাজে গুণী জন্মায় না, এমন মন্তব্য করে আলোচকরা বলেন তিনি শুধু সাংবাদিকতাই করেননি, তিনি ছিলেন একজন কবি, একজন নাট্যকার, একজন আবৃত্তিকার ও একজন অভিনেতা। সংস্কৃতিমনা ব্যক্তি হিসাবে তিনি একটি ছোট্ট পানবিড়ি ও সিগারেটের দোকান পরিচালনা করে সংসার নির্বাহ করে গেছেন।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *