ইব্রাহিম খলিল : কল্যানী ঘোষ বয়স ৮৩ বছর। বাড়ি বুধহাটা হাবাসপুর গ্রামে। বয়সের ভারে একাবারে ন্যুয়ে পড়েছেন। দালাল ছাড়াই মেয়েকে সাতে নিয়ে পাসপোর্ট করতে এসেছেন সাতক্ষীরা আঞ্চলীক পাসপোর্ট অফিসে। সরাসরি এডি (সহকারি পরিচালক) রুমে এসে আবেদনটি জমা দিলেন। ফরমে ভুল থাকলেও এডি নিজেই সেটি ঠিক করে হাতে দিয়ে বললনে ছবি তুলে চলে যান। কারোর কাছে টাকা পয়সা দেবেন না। এভাবে একেরপর আবেদনকারি এসে তাদের পরামার্শ ভুল হলে সেগুলো কিভাবে সংশোধন করতে হবে সব কিছু একাই সামাল দিয়ে যাচ্ছেন। আবেদন কারিদের জন্য আবেদন জমা দেওয়ার জায়গা থাকলেও সবাই চায় এডির সাথে দেখা করতে। তার আচার ব্যাবহার সু-পরামার্শ আবেদন কারিদের জন্য স্বস্তিকর। আবেদনকারিরা সবাই হাসিমুখে রুম থেকে তাদের সমাধান করে বের হয়ে যাচ্ছেন।
সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস সুত্রে জানা যায়, পাসপোর্ট অফিস থেকে সরকার ২২ মাসে রাজস্ব আদায় করেছে ২৭ কোটি ৩৩ লাখ ৪১ হাজার ২০০ টাকা। এর মধ্যে আবেদন পড়েছে ৪৩ হাজার ২১৮ টি। পাসপোর্ট বিতরন করা হয়েছে ৩৯ হাজার ৫১২টি। প্রতিদিন প্রায় ২০০ আবেদন জমা পড়ে।
সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসের সহকারি পরিচালক সাহজাহান কবির বলেন, লোকবল সংকট থাকলেও আমি গত ২৪,০৯,২০২০ সালে যোগদান করার পর থেকে সরকার প্রায় সাড়ে ২৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। পাসপোর্ট অফিসে ২৩ জন কর্মকর্তা কর্মচারি থাকার কথা কিন্তু আছে মাত্র ১১ জন। আমরা অর্ধেকের কম লোকবল নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
তিনি পাসপোর্ট অফিসের সেবার মান বৃদ্ধির জন্য পাসপোর্ট অফিসে গুনগত কিছু পরিবর্তন এনেছেন,দালালমুক্ত ও কোন কর্মকর্তা কর্মচারি যাতে অনৈতিক সুবিধা না নিতে পারে তার জন্য পুরো পাসপোর্ট অফিস সিসি ক্যামেরাদারা বেষ্টিত। সপ্তাহে প্রতি সোমবার গনশুনানির ব্যাবস্থা। বীর মুক্তিযোদ্ধা , বয়স্ক ও অসুস্থ্যদের জন্য আলাদা কাউন্টারের মাধ্যমে বিশেষ সেবা দেওয়া। প্রতিবন্ধিদের জন্য হুইল চেয়ারের মাধ্যমে সেবা প্রদান। হেল্প ডেস্ক, জবাবদিহি বক্স ও যে কর্মকর্তা কর্মকারি আবেদন কারিদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে পারবে মাসে পুরস্কারের ব্যাবস্থা করা। এছাড়া রয়েছে অসুস্থ্য ও প্রতিবন্ধিদের জন্য কলিংবেল এর মাধ্যমে সেবা দেওয়া। নিচ থেকে কলিংবেল চাপতেই সরাসরি এডি নিজে এসেই সেবা দিয়ে যান।
কথা হয় আইএফআইসি ব্যাংক কর্মকর্তা রাজ কুমারের সাথে, তিনি বলেন, আমি নিজে সরাসরি এসেছি পাসপোর্ট করতে। সহকারি পরিচালক মহোদয় আমার আবেদনটি দেখে সই করে দিলেন কোন ঝামেলা ছাড়াই। তার ব্যাবহার আমাকে মুগ্ধ করেছে। তিনি অফিসের প্রধান কর্মকর্তা হয়ে সেভাবে হেল্প করলেন সত্যিই অবিশ^স্য।
সহকারি পরিচালক সাহজাহান কবির বলেন, প্রতিটা আবেদনকারি আলাদা আলাদা কাউন্টার থাকা সত্বেও সবাই আপনার কাছে আসে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সবাই আমার কাছে আসতে পারে কোন বাাঁধা নেই। আমি যতটুকু সম্ভব মানুষকে আমার সাধ্যমত সেবা দিয়ে থাকি। কারোর পাসপোর্ট আসতে কেন দেরি হচ্ছে,আবেদনে ফরমে কোন সমস্যা আছে কিনা, সমস্যা থাকলে কি ভাবে সমাধান করতে হবে সবকিছু আমি করে থাকি।
Leave a Reply