মোঃ আলফাত হোসেন কৈখালী প্রতিনিধিঃ সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার ৫ নং কৈখালী ইউনিয়নের শৈলখালী,পরানপুর,কাটামারি,নিদয়া,নৌকাটি, বেড়িবাঁধ ছিদ্র করে ও পাইপ ঢুকিয়ে লবণ পানি উঠিয়ে নোনা পানি দিয়ে চলছে অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষ।
সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক বেড়িবাঁধের ১শ মিটার দূরে ঘের করার নিয়ম থাকলেও তা মানছেন না স্থানীয়রা,এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উপকূলের বেড়িবাঁধ,প্রতি বছরই প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ এলাকা।
বিশেষ করে কৈখালী ইউনিয়নে শৈলখালী,পরানপুরে তিতাকথা হলেও সত্যি এসব এলাকায় অবৈধ পাইপ শনাক্তের নির্দেশ হলেও কোনো রকম কার্যক্রম দেখা মেলেনি কালিগন্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো কর্মকর্তাদের।
বড় কোনো দুর্যোগ এলেই এ বাঁধ টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না, এ অবস্থার মধ্যে জেলা ও উপজেলার কিছু কুচক্রী মহলের সহযোগিতায় স্থানীয় গুটি কয়েক অসাধু মানুষেরা বেড়িবাঁধ ছিদ্র করে পাইপের মাধ্যমে লবণ পানির চিংড়ি ঘের করছেন। শ্যামনগর পাউবো কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানান আমরা কয়েকটি জায়গায় অবৈধ পাইপ অপসারণের অভিযান পরিচালনা করতে থাকি এক পর্যায়ে নানামুখী বাঁধার সম্মুখে আমরা অভিযান বিরত রাখি,এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের সুবিধা অনুযায়ী তার নির্ধারিত কোন এক দিন হতে আবার উপজেলা ভুমি কমিশনার সহ উপজেলা চেয়ারম্যান এর স্বমনয়ে অভিযান শুরু করব।এস ও মাসুদ রানার বক্তব্য অনুযায়ী
উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আাতাউল হক দোলন-র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কোনো পাইপ অপসারণ বন্ধ করতে চাইনি এভাবে যত্রতত্র পাইপ বসানোর কারণে বাঁধ দুর্বল হয়ে পড়ছে সেক্ষেত্রে আমি বলছি পাইপ আর বাক্সকল সবার পাইপ অপসারণ করা যাবেনা যেমন কিছু পাইপ কলের অনুমোদন আছে সেগুলো রাখতে হবে এবং যে জায়গাগুলো ঝুঁকিপূর্ণ আছে সে জায়গায় পাইপগুলো অপসারণ করতে হবে এবং তিনি মিঠিংয়ে আছি বলে তিনি অফিসে এসে যোগাযোগ করে কথা বলতে বলেন বলে ফোন কেটে দেন।
শুধু কৈখালী ইউনিয়ন নয় উপজেলার রমজাননগর ইউনিয়ন সহ উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়ন একইভাবে বেড়িবাঁধ ছিদ্র করে পানি উঠিয়ে ঘের করা হয়। এতে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে বাঁধ। যে কারণে দুর্যোগ আসলেই বাঁধ ভেঙে নোনা পানি ঢোকে লোকালয়ে,এছাড়াও স্থানীয় বসবাসকারী অনেকেই প্রতিবেদককে জানান,নোনা পানি আমাদের জীবনের নানা জটিলতার স্বীকার হচ্ছি,একদিকে আমাদের বসতবাড়ির আনাছে কানাছে হচ্ছে না কোনো ফল গাছ,নোনা পানির লবণাক্ততায় ফলছে না কোনো ফসল,না আছে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি,গা গোসলের এমনকি নামায পড়ার জন্য ওযু করার মত মিষ্টি পানি পর্যন্ত নেই কোনো জায়গায়,স্থানীয় ভুক্তভোগী মানুষের হতে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়,এভাবে বেঁরিবাঁধ ছিদ্র করে পানি তোলার কারণে বেশিরভাগ জায়গায় বেঁরিবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে প্লাবিত হয়।
দীর্ঘ ২৫-২৭ বছর ধরে স্থানীয় গুটি কয়েক প্রভাবশালী অসাধু মানুষের ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য লবণ পানি ঢুকিয়ে ঘের করে আসছে,এলাকাবাসীর দাবী নোনা পানি মুক্ত করে সোনার ফসল উৎপাদনে সহযোগিতা করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পদক্ষেপ গ্রহণ করার।
লবণ পানি ঢুকিয়ে ঘের করার বিষয়ে কৈখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ আব্দুর রহিম বলেন, কৈখালী ইউনিয়নের বেঁরিবাঁধে কিছু জায়গা আছে যেসব বাঁধ উপচে পানি ঢোকে,সেসব বাঁধের এমন নাজেহাল অবস্থা একমাত্র অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষ বেড়িবাঁধ ছিদ্র করে পানি উঠিয়ে ঘের করাই অন্যতম কারণ, তবে লবণ পানিতে জমির উর্বরতা নষ্ট হয়েছে স্বীকার করে তিনি বলেন, মজবুত বেড়িবাঁধ ও বেড়িবাঁধ ছিদ্র করে পানি উঠানো বন্ধ হলে অবশ্যই কৈখালী ইউনিয়নে ফসল ফলানো যাবে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় আম্পান আঘাত হানার পর চিংড়ি-কাঁকড়া ঘেরের অভিঘাত থেকে বাঁধ রক্ষায় ঘের করার দূরত্ব নির্ধারণ করে দিয়ে সম্প্রতি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে চিঠি পাঠানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, দেশের উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলো নিকট অতীত ও সাম্প্রতিক সময়ে আইলা, সিডর, ফণী, বুলবুল ও আম্পানের মতো শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের সম্মুখীন হয়েছে বা হচ্ছে। ফলে এসব এলাকায় বিপুল পরিমাণ ভৌত ও আর্থিক ক্ষয়ক্ষতিসহ সাধারণ মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগের মুখোমুখি হচ্ছেন।
চিঠিতে বলা হয়, বাঁধঘেঁষে বা বাঁধের অত্যন্ত কাছে ঘের তৈরি করে স্থানীয়রা কাঁকড়া-চিংড়ি চাষ করছে। ঘের মালিকরা বাঁধের বিভিন্ন স্থানে যত্রতত্র পাইপ ঢুকিয়ে অপরিকল্পিতভাবে নিজস্ব সুবিধা অনুসারে গেট তৈরি করে পানি ঘেরে প্রবেশ করিয়ে থাকে।
ফলে বাঁধগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে এবং বড় ধরনের জোয়ার বা জলোচ্ছ্বাসের কারণে বাঁধের বিভিন্ন স্থান ভেঙে জনপদে পানি প্রবেশ করে ও ঘেরের ক্ষতি হয়।কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি জেলার কালিগন্জ উপজেলা ও শ্যামনগর উপজেলার পাউবো কর্মকর্তাদের বেখেয়ালি গাফিলতির কারণে আজ ও পর্যন্ত কোনোরকম পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি,ভুক্তভোগী গ্রামবাসীদের নোনা পানির নানারকম অসুবিধার অভিযোগে এবিষয়ে সাতক্ষীরা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী কর্মকর্তা আবুল খায়েরের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান,এবিষয়ে আমি এবং আমার অফিসের মহল হতে অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষ অবৈধ ভাবে বেড়িবাঁধ ছিদ্র করে পানি উঠিয়ে ঘের করা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছি,কিন্তু আপনি একটা ছবি বা ভিডিও আমার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দিন,আমি কালিগন্জ উপজেলার ও শ্যামনগর দায়িত্বরত কর্মকর্তাগণদের এবং প্রয়োজনীয় লোকবল পাঠাইয়া অবৈধ পাইপে পানি উঠানো এবং বেঁরিবাঁধ ছিদ্র কারীদের আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করবো বলে দ্রুত ফোন কেটে দেন।
Leave a Reply