এসএম হাবিবুল হাসান
যত্রতত্র ড্রেনেজ ব্যবস্থা ছাড়াই অনুমোদনহীন পাকা ঘর-বাড়ি নির্মাণ, অপরিকল্পিতভাবে কৃষি জমিতে স্থায়ীবাঁধ দিয়ে মৎস্য ঘের প্রস্তুত, জলাশয় ও পুকুরগুলো ভরাট করে ফেলা, নদনদী কৃষি জমি থেকে উঁচু হয়ে যাওয়ায় প্রতি বছর সাতক্ষীরা পৌরসভা ও সদর উপজেলার একটি বড় অংশ জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে। এক্ষেত্রে স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধির সদিচ্ছার অভাবও আছে।
বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই কিভাবে জলাবদ্ধতা নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া যায় তা জানতে সাতক্ষীরা পৌরসভার দক্ষিণ কাটিয়া, লস্কর পাড়া, কাটিয়া মাঠ পাড়া, ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের শাল্যে, বেড়াডাঙ্গা, ঋষিপাড়া, মাছখোলা ও লাবসার তালতলা এলাকাবাসীর সাথে কথা বললে তারা আক্ষেপের সাথে এসব কথা জানান।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর ইউপির বেড়াডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা ও ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডা. আশুতোষ বলেন, প্রতি বছর আমার এলাকায় প্রায় ৬ মাস জলাবদ্ধতা থাকে। যখন অতি বৃষ্টি হয় তখন আমরা আমাদের ঘর থেকে বের হতে পারি না। রাস্তাঘাট বাড়ির উঠানে জলাবদ্ধতায় পানি থৈথৈ করে। কোনটা রাস্তা আর কোনটা বাড়ি-ঘর কিছুই চেনা যায় না। সবই জলাবদ্ধতায় আবদ্ধ থাকে। তবে যদি স্থানীয় বেতনা নদী খনন করে জোয়ার-ভাটা সৃষ্টি করা যায়, তখন আর এই জলাবদ্ধতা থাকবে না বলে তিনি মনে করেন।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর ইউপির শাল্যে গ্রামের বাসিন্দা, ১নং ওয়ার্ডের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান মো. নূরুল হুদা বলেন, যেখানে-সেখানে অপরিকল্পিতভাবে স্থায়ীবাঁধ দিয়ে মৎস্য ঘের করা, বৃষ্টি পানি তাৎক্ষণিকভাবে সরে না যাওয়া ও নদনদী কৃষি জমি থেকে উঁচু হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে আমার ধারণা। তবে যদি সবার সদিচ্ছা থাকে তাহলে এই জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে আমরা মুক্তি পাব। সেজন্য কৃষি জমিতে বাঁধ দিয়ে মৎস্য ঘের না করার পক্ষে আমি। তাছাড়া বেতনা নদীর খনন কাজ শুরু হয়েছে। খনন শেষ হলে আবার আগের অবস্থায় আসবে বলে মনে করেন স্থানীয় এই জনপ্রতিনিধি।
সাতক্ষীরা পৌরসভার দক্ষিণ কাটিয়া এলাকার বাসিন্দা ও পৌর কাউন্সিলর মো. কায়ছারুজ্জামান হিমেল বলেন, অনুমোদনহীনভাবে যেখানে-সেখানে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ছাড়া উঁচু উঁচু ঘরবাড়ি নির্মাণ করার কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয় জলাশয় ও পুকুরগুলো ভরাট করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করার কারণেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া কৃষি জমিতে স্থায়ীভাবে বাঁধ দিয়ে মৎস্য ঘের করার কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। তাই পৌর এলাকার জলাশয় বা পুকুরগুলো ভরাট না করে খোলা রাখা ও যদি কৃষি জমিতে বাঁধ দিয়ে মৎস্য ঘের না করা হয় তাহলে এই জলাবদ্ধতা থেকে এলাকার বাসিন্দারা মুক্তি পাবে বলে আমার মনে হয়। সেজন্য স্থানীয়সহ সকল জনগণের ও জনপ্রতিনিধিদের সদিচ্ছার প্রয়োজন।
(লেখাটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিকের জলাবদ্ধতা নিরসনে করণীয় বিষয়ক ক্যাম্পেইনের একটি অংশ)
লেখক: সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং সদস্য, শিক্ষা সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য রক্ষা টিম
Leave a Reply