সংবাদ বিজ্ঞপ্তি: ’নিঃসন্দেহে দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব এবং সে দায়িত্ব পালনে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি রাজনীতিবিদ, সিভিল সোসাইটি ও এনজিওগুলো কাজ করে যাচ্ছে। আর সে কারণেই প্রথম দিকের সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠে খুবই চমৎকারভাবে এবং সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সাতক্ষীরাসহ সারা দেশে করোনা টিকা প্রদান কার্যক্রম প্রায় শতভাগ সফলতার দাড়প্রান্তে। টিআইবি পরিচালিত গবেষণায়ও সেই চিত্রটিই আজ উঠে এসেছে। সবাই শুধু সমালোচনা করে, ভাল কাজের প্রশংসা অনেকেই করতে পারে না। টিআইবি ও সনাককে ধন্যবাদ, তাঁরা সে কাজটি করেছে’- ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)-সাতক্ষীরা আয়োজিত ”কোভিড-১৯ টিকা প্রদানে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়” শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাতক্ষীরা সদর আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রথম দিকে টিকা দেওয়ার মানুষ পাওয়া যেত না, এখন দেখবেন প্রতিটি টিকা কেন্দ্রে মানুষের লম্বা লাইন। সরকারের বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণার ফলে মানুষ এখন বেশ সচেতন হয়েছে, নিয়মিত টিকা প্রদান কার্যক্রমের পাশাপাশি গণ টিকা কার্যক্রম সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। পৃথিবীর উন্নত সব দেশ যখন করোনা নিয়ে দারুণ বিপাকে, আমরা তখন বেশ সহনীয় পর্যায়ে চলে এসেছি। এ সাফল্য আমাদের সকলের। তবে এই মহামারীর সময়ে সামনে থেকে যারা কাজ করেছেন, নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন, জীবন হারিয়েছেন, সেই চিকিৎসক থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে আলাদা করে ধন্যবাদ জানাতেই হবে। এছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগেও অনেকে অনেক কাজ করেছেন, তাঁদেরকেও ধন্যবাদ জানাই।
২৫ মার্চ শুক্রবার, সকাল ৯:৩০ মিনিটে সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-এর খামার বাড়ির কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন, সনাক সাতক্ষীরার-এর সভাপতি জনাব পবিত্র মোহন দাশ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলার সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ হুসাইন শাফায়াত ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব আসাদুজ্জামান বাবু।
সভার শুরুতে সভায় উপস্থিত সকলকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সনাক সদস্য এবং স্বাস্থ্যখাত বিষয়ক উপ-কমিটির আহ্বায়ক, ডাঃ সুশান্ত কুমার ঘোষ। তিনি টিআইবি পরিচালিত গবেষণার প্রেক্ষাপটটি তুলে ধরেন। এরপর গবেষণা প্রতিবেদনের উপর একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা দেন টিআইবি’র খুলনা ক্লাস্টারের কো-অর্ডিনেটর জনাব মোঃ ফিরোজ উদ্দিন। উপস্থাপনা শেষে উন্মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করে বক্তারা প্রতিবেদন বিষয়ে তাদের মতামত সহ টিকা নিতে গিয়ে তাঁদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তা তুলে ধরেন। আলোচনায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন জেলা কৃষি প্রকৌশলী ইঞ্জি: মোঃ হারুন-অর-রশীদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ (অব:) জনাব আব্দুল ওয়াহেদ, বিএমএ-এর সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মোঃ মনোয়ার হোসেন, রোটারী ক্লাবের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ভূধর চন্দ্র সরকার, স্বদেশ-এর নির্বাহী পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত, স্বজন সদস্য মনিরুজ্জামান মুন্না, স্বজন সহ-সমন্বয়ক রেবেকা সুলতানা ও ইয়েস সহ-দলনেতা শেখ মোতাহার হোসেন। এছাড়া সনাক প্রতিনিধি হিসেবে সনাক সদস্য কল্যাণ ব্যানার্জি, ভারতেশ^রী বিশ^াস ও মোঃ অলিউর রহমান প্রতিবেদনের ফলাফলসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। সনাক সদস্য মোঃ অলিউর রহমান শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদানের সময় বিভিন্ন অব্যবস্থাপনার কথা তুলে ধরেন। সনাক সদস্য ভারতেশ^রী বিশ^াস আধা ঘণ্টার নোটিশে টিকা দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের হাজির করানোর বিড়ম্বনার বিষয়টি তুলে ধরেন। এছাড়া সনাক সদস্য কল্যাণ ব্যানার্জি বলেন, করোনাকালীন এ সময়ে সাতক্ষীরা স্বাস্থ্য বিভাগ বলতে গেলে ভাল কাজই করেছেন। তিনি সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন সহ করোনার টিকা প্রদান ও স্বাস্থ্যসেবার সাথে জড়িতদের কাজের প্রশংসা করেন। দূরবর্তী টিকা কেন্দ্রে টিকা পৌঁছানোসহ কিছু জটিলতার বিষয়েও তিনি তুলে ধরেন।
এরপর বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব মোঃ আসাদুজ্জামান বাবু বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে বলেন, প্রথম দিকে টিকা নিয়ে মানুষের মধ্যে অনীহা ছিল, মানুষকে জোর করে টিকা নেওয়ানো যাচ্ছিল না, এখন পুলিশ দিয়েও ঠেকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। বিভিন্ন বাধা ও প্রতিকূলতা কাটিয়ে বাংলাদেশ করোনা কন্ট্রোলে এবং টিকা প্রদান কর্মসূচিতেও সফল বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি টিআইবি ও সনাককে ধন্যবাদ জানান এমন একটি আয়োজনের জন্য।
বিশেষ অতিথির আলোচনায় সিভিল সার্জন জনাব ডাঃ মোঃ হুসাইন শাফায়াত বলেন, সরকারি স¦াস্থ্যসেবা খাতে অনেক ঘাটতি রয়েছে যা কাটিয়ে উঠতে সরকার কাজ করছে। চাইলেই রাতারাতি সেটা কাটিয়ে ওঠাও সম্ভব নয়। তবে সাধারণ জনগণকেও তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। তিনি বলেন, দুর্যোগকালীন সময়ে বিদ্যমান সুবিধাদি দিয়ে কখনই কাজ হয় না। প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধাদি যেমন বাড়াতে হয়, তেমনি বাইরেরও সহযোগিতা লাগে। তিনি বলেন প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য সর্বনি¤œ ৮টি বেড থাকা প্রয়োজন, সে হিসাবে সাতক্ষীরা জেলায় কমপক্ষে ১৬০০ বেড থাকা প্রয়োজন, কিন্তু সব মিলিয়ে সরকারি বেড আছে ৭৫০টি। এছাড়া করোনার দূর্যোগকালীন এ সময়ে এই বেডগুলোর উপর চাপ আরো বেড়েছে। সেই সাথে লোকবল সংকটও রয়েছে। তারপরও আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। তিনি সকলকে ক্লিনিশিয়ান ও পাবলিক হেলথ স্পেশালিস্টের পার্থক্যটা বোঝার অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, সকলের মাইন্ড সেট যেমন সমান নয়, তেমনি সকলের সামর্থ্য বা দক্ষতাও কিন্তু সমান নয়। তিনি টিআইবি ও সনাককে ধন্যবাদ জানান এজাতীয় একটি আয়োজনের জন্য।
সবশেষে সনাক সভাপতি, সভায় উপস্থিত সকলের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথিসহ অংশগ্রহনকারি সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি করোনার শুরু থেকে গতকাল অব্দি সাতক্ষীরাসহ দেশের ও বৈশি^ক বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত তুলে ধরেন। তিনি সাতক্ষীরার সিভিল সার্জনের ইতিবাচক মানসিকতার প্রশংসা করেন। শত ব্যস্ততার মধ্যেও সভায় উপস্থিত হয়ে মূল্যবান বক্তব্য রাখার জন্য উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং বিশেষ করে প্রধান অতিথি, সংসদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি-এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। এছাড়া সভায় যুক্ত হয়ে যারা মূল্যবান বক্তব্য রেখেছেন, তাঁদেরকে এবং যারা দীর্ঘসময় ধরে সভায় উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
সভায় অন্যানের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা পুলক কুমার চক্রবর্তী, ব্রাকের জেলা প্রতিনিধি একেএম আশরাফ, ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের অফিস ইনচার্জ শরিফুল ইসলাম, স্বজন সহ-সমন্বয়ক মোঃ ইয়াসিন সিদ্দিক, ইয়েস দলনেতা হুমায়রা ফারজানা, ইয়েস সহ-দলনেতা সুমাইতা ইয়াসমিন, ইয়েস সদস্য নিয়াজ মোর্শেদ, মুশফিকুর রহমান, উৎপল কুমার সাহা, টিআইবি’র এরিয়া কো-অর্ডিনেটর মো. রবিউল ইসলাম, বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দসহ আরো অনেকে। সভাটি সঞ্চালনা করেন সনাক সহ-সভাপতি মোঃ তৈয়েব হাসান সামছুজ্জামান ।
Leave a Reply