আসাদের আজীবন সম্মাননা

আল মাসিদ

বরেণ্য অভিনয়শিল্পী রাইসুল ইসলাম আসাদ দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অনবদ্য অভিনয়ের মাধ্যমে জয় করেছেন অগণিত দর্শকের ভালোবাসা। এ বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন তিনি। সম্মাননাপ্রাপ্তির খবরে কেমন লাগছে? জানতে চাইলে এই অভিনেতা বলেন, ‘স্বীকৃতি সব সময় আনন্দের। শিল্পীজীবনে বহু সম্মাননা পেয়েছি। এ নিয়ে আলাদা কোনো মোহ নেই। পুরস্কার পেতে হবে ভেবে কাজ করিনি। তারপরও যখন কোনো স্বীকৃতি পাই, তখন মনে হয় আমার কাছে দর্শক প্রত্যাশা এখনো শেষ হয়নি। আগেও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি। ভূষিত হয়েছি একুশে পদকে। আজীবন সম্মাননার এ পুরস্কারের ব্যাপ্তি আমার কাছে আকাশের চেয়েও বড়। সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। যদিও চলচ্চিত্রে খুব বেশি অভিনয় করিনি। এ সম্মাননা অবশ্যই নতুনভাবে প্রাণিত করেছে।’

অভিনয় জীবনে একুশে পদকসহ নানা সম্মাননা পেয়েছেন। শিল্পী জীবনে কোনো অপ্রাপ্তি আছে? তার ভাষ্য, ‘ভাবলে অবাক লাগে, অভিনয়ে এত বছর কাটিয়ে দিয়েছি! স্বীকার করতে দ্বিধা নেই অগণিত মানুষের ভালোবাসাই ছিল আমার এগিয়ে চলার শক্তি। আমি তো অভিনেতা হতে চাইনি। জোর করে অভিনেতা বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারপর অভিনয় ভালো লেগেছে। পরে দায়িত্বের মধ্যে পড়ে গেছে। এভাবেই পঞ্চাশ বছর কেটে গেছে। যেহেতু আমি কোনো কিছু চাইনি, তারপর এতদূর আসতে পেরেছি- এটাই বড় বিষয়। এ জীবন নিয়ে কোনো অপ্রাপ্তি নেই। তবে একজন শিল্পীর জীবনে সবসময় ভালো কাজের অতৃপ্তি থাকেই।’

অনেকেই মনে করেন বর্তমান সময়ের টিভি নাটক ও সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে সঠিক অভিভাবকের অভাব। সিনিয়র শিল্পী হিসেবে এ বিষয়ে তিনি কী ভাবছেন? শোনা যাক তার মুখেই, ‘আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলব, ভালো নাটক আগেও ছিল, এখনো আছে। কাজের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এখন অনেক ভালো কাজের পাশাপাশি খারাপ কাজও হচ্ছে। স্বল্প বাজেট এবং নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও অনেকে ভালো কাজের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাদের এই চেষ্টাকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখা যাবে না। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, এক ঘণ্টার নাটকে একজন শিল্পী এক লাখ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন। নাটকের অর্ধেকের বেশি বাজেট যদি একজন শিল্পী নিয়ে নেন, তাহলে ভালো কাজ হবে কী করে? আর চলচ্চিত্রে কিছু সংকট রয়েছে। এর জন্য শিল্পের সঙ্গে জড়িতরাই দায়ী। আমরাই চলচ্চিত্রকে এ অবস্থানে নিয়ে এসেছি। বর্তমানে সিনেমা নির্মাণে একটা বাঁকবদল চোখে পড়ছে। একের পর এক হল বন্ধ হয়ে গেলেও অনলাইনের সুবাদে নতুন পথ খুলে গেছে। নির্মাতাদেরও কাজের পরিধি বেড়েছে। সবকিছু মিলিয়ে আমার মনে হয়েছে আঁধার পেরিয়ে আলো আসবেই।’

তরুণদের সম্ভাবনা নিয়েও কথা বললেন তিনি, ‘তরুণদের অনেকে ভালো কাজ করছে। তবে এটা ঠিক যে, অনেকে তারকাখ্যাতির মোহে অভিনয় করছে। তারা অপেক্ষা করতে রাজি নয়। অনেক অস্থির। অল্প সময়ের মধ্যে সবকিছু পেয়ে যেতে হবে- এ রকম মানসিকতা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। এটা তাদের পরিহার করতে হবে। সৃষ্টির মধ্য দিয়ে শিল্পী বড় হয়; বড় হওয়ার আকাক্সক্ষা কাউকে শিল্পী বানায় না।

এখনো ভালো গল্প ও চরিত্র পেলে নাটক ও সিনেমায় অভিনয় করেন রাইসুল ইসলাম আসাদ। মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে তার অভিনীত ‘অপারেশন সুন্দরবন’ ছবিটি। এ ছবি নিয়ে প্রত্যাশা কেমন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ছবির কাজ তো যত্ন নিয়েই করা হচ্ছে। গল্পও ভালো। চেষ্টা করেছি আমার অভিনীত চরিত্রটি ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে। পর্দায় দেখার পর বোঝা যাবে ছবিটি কেমন হয়েছে। তবে এটা বলতে পারি ছবিটি দেখে দর্শক নিরাশ হবেন না।’

অনেকের মতো আসাদের শুরুটাও মঞ্চ নাটক দিয়ে। কিন্তু দীর্ঘদিন তাকে মঞ্চে দেখা যায় না। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শিগগিরই মঞ্চে আমার দেখা পাবেন- সে সম্ভাবনা নেই। ১৫ বছর ধরে পায়ের সমস্যায় ভুগছি। এ জন্যই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মঞ্চে কাজ করা হয়ে ওঠেনি।’ (দেশ রূপান্তর হতে সংগৃহীত)

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *