জহুরুল কবীর: স্কুল ছাত্রী ধর্ষণ মামলার জামিন শুনানীকালে রাষ্ট্রপক্ষের পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফ ও আসামী পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. এম শাহ আলমের মধ্যকার বিতন্ডার ঘটনাকে কেন্দ্রকরে জেলা আইনজীবীর সমিতির সিনিয়র আইনজীবীগণ পরষ্পর মুখোমুখি অবস্থানে। ইতোমধ্যে উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি হাফ ডজন মামলা হয়েছে। উভয় মামলায় আসামী বারের সাবেক সভাপতি সেক্রেটারিসহ সিনিয়র আইনজীবীগণ। এক মামলায় কারাগারে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. শাহ আলম। বিষয়টি নিয়ে আদালত এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। চলছে পাল্টাপালটি কর্মসুচি। একদিকে গ্রেপ্তার অ্যাড. শাহ আলমের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারপূর্বক মুক্তির দাবী অন্যদিকে দুর্ণীতি মুক্ত বার গঠণের দাবীতে সোমবার আদালত প্রঙ্গণে পৃথক মানববন্ধর অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ভার্চুয়াল আদালতে ধর্ষণ মামলার জনৈক আসামীর জামিন শুনানীর জন্য গত ২৬ এপ্রিল সোমবার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে দিন ধার্য ছিল। আসামীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাড. গোলাম মোস্তফা ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. শাহ আলম। দুপুর একটার দিকে যার যার চেম্বারে বসে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে জামিন শুনানীকালে আসামী ও ভিকটিম বিবাহ করেছেন ও তাদের মীমাংসা হয়ে গেছে মর্মে আদালতকে অবহিত করেন এ্যাড. এম শাহ আলম। এ সময় ভিকটিম ও তার বাবা মামলার বাদি এ্যাড. এম শাহ আলমের চেম্বারে বসে আছেন জানালে রাষ্ট্রপক্ষের পিপি এ্যাড আব্দুল লতিফ আপত্তি জানান। জামিনের আপত্তি জানিয়ে তিনি ভিকটিম ও বাদিকে স্বশরীরে দেখতে চান। বাদি ও ভিকটিম প্রকৃত কিনা তা নিশ্চিত হতে তাদেরকে তার চেম্বারে আনতে বলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে এম শাহ আলম পিপি এ্যাড. আব্দুল লতিফকে উদ্দেশ্য অশালীন মন্তব্য করেন। বিষয়টি জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমানসহ বেশ কিছু জেষ্ঠ ও কনিষ্ঠ আইনজীবীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। আদালত ওই আসামীকে দু’ হাজার টাকার ব-ে চার সপ্তাহের জন্য জামিন দেন।
এই ঘটনার জের ধরে ২৭ এপ্রিল বিকালে পিপি এ্যাড. আব্দুল লতিফের অনুসারিগণ অ্যাড শাহ আলমের ল.চেম্বারে হামলা ও ভাঙচুর করে। এব্যাপারে অ্যাড শাহ আলম সদর থানায় একটি এজাহা করেন। যেটি সাধারণ ডায়েরী হিসেবে রেকর্ড করা হয়। পরদিন পিপি এ্যাড. আব্দুল লতিফ বাদি হয়ে সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে একই থানায় পৃথক মামলা করেন। অ্যাড শাহ আলম তার এজাহা থানায় নিয়মিত মামলা হিসেবে অন্তরভুক্ত না করায় গতকাল সাতক্ষীরা আমলী প্রথম আদালতে দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা দায়ের করা করেন। উক্ত মামলায় ১০জন আইনজীবীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ১০জনকে আসামী করা হয়েছে।
বিচারক মোঃ রেজোয়ানুজ্জামান আগামি ১৬ মে এর মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআই সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার আসামীরা হলেন, এ্যাড. এসএম হায়দার আলী, এ্যাড. এসএম সালাহ উদ্দিন, এ্যাড. আব্দুল মজিদ(২), এ্যাড. নিজামউদ্দিন, এ্যাড. এখলেছার আলী বাচ্চু, জজ কোর্টের পিপি এ্যাড. আব্দুল লতিফ, এ্যাড. এবিএম সেলিম, এ্যাড. খায়রুল বদিউজ্জামান বাচ্চু, এ্যাড. নুরুল আমিন ও এ্যাড. সাইদুজ্জামান জিকো।
এরই মধ্যে গত ১৬ মে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এক মামলায় অ্যাড. এম শাহ আলমকে তার নিজ বাড়ী থেকে গ্রেপ্তার করে সদর থানা পুলেশ। শিক্ষানবীশ আইনজীবী শ্যামনগর উপজেলার মানিকপুর গ্রামের ফজলুল হক গাজীর ছেলে মোঃ লিয়াকত আলী এক শিক্ষানবীশ আইনজীবীর গলায় ‘আমি আইনজীবী নই, আমি টাউট’ এমন লেখা ঝুলিয়ি ছবি তুলে ফেইসবুকে ছেড়ে দিয়ে ভীত সন্ত্রস্ত ও সম্মানহানি করার অভিযোগে উক্ত মামলা দায়ের করেন।
উক্ত ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ মামলার ব্যাপারে অ্যাড. ফেরদৌসি সুলতানা জানান, “২৭ এপ্রিল ল-চেম্বার ভাংচুর ঘটনায় মামলা করার পর থেকে অ্যাড. আব্দুল লতিফ গং নানা ভাবে আমাদের হুমকি-ধামকি ও মিথ্যা মামলা দিয়ে আসছে। ইতোমধ্যে অ্যাড. আব্দুল লতিফ গং অ্যাড. শাহ আলমের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি ‘দ্রুত বিচার আইনে’ মামলা করেছেন যাহা তদন্তাধীন। এরই মধ্যে মিথ্যা ভিত্তিহীন অভিযোগে মামলা করে অ্যাড. শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করে হয়রানি করছে।”
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক বিশ্বজিৎ কুমার জানান, শিক্ষানবীশ লিয়াকত আলীর মামলায় রবিবার দুপুর আড়াইটার দিকে অ্যাড. এম শাহ আলমকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিকালে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। পরদিন সোমবার উভয়পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে বেল ও রিমান্ড শুনানী আজ বুধবার পর্যন্ত মুলতবি করেন।
Leave a Reply