কলারোয়া পৌর প্রতিনিধি : দেশে পরিচিত ও পুরনো একটি উচ্চমূল্যের পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ফসল বার্লি বা যব। সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী অঞ্চল কলারোয়াতে বার্লির আবাদ একেবারেই নতুন। এ অঞ্চলে শস্যটি চাষে সফলতা কৃষিতে নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। চলতি বছরই প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে উপজেলার দুইটি ইউনিয়নে বার্লির আবাদে বেশ ভালো ফলন হয়েছে। উপজেলার কুশোডাঙ্গা এলাকার বার্লি চাষী জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, প্রথম বার্লি চাষ করে যেন এক নতুন অভিজ্ঞতা পেয়েছি। তবে, বার্লি চাষে সম্ভাবনার আশার আলো জাগালেও বাজারজাতকরণ ও মাড়াইয়ের ব্যবস্থা না থাকায় নতুন সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলায় প্রথম ২১শতক জমিতে বার্লি চাষ করে ৪ মন ফসল পেয়েছি। গমের মত একই পদ্ধতি ব্যবহার করে বার্লি চাষ করতে হয়। তবে পরিপক্কতার সময়ে ইঁদুরের প্রকোপ বেড়ে যায়। এজন্য ইঁদুরের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভালো ফলন পাওয়া যাবে। গমের তুলনায় বার্লি অনেক দামি ফসল। আগামী বছর আরও বেশি জায়গাতে পরিকল্পিতভাবেই বার্লি চাষ করব। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি স্থানীয়ভাবে বার্লি বাজারজাতকরণ ও প্রযুক্তিগত মেশিন আমদানির ব্যবস্থা করলে দেশের অর্থনীতিতে বেশ ভূমিকা রাখবে। প্রযুক্তিগত কারখানা ও বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা না থাকলে বার্লি চাষীরা মুখ থুবড়ে পড়বে। কুশোডাঙ্গা ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শেখ রাজু আহমেদ বার্লির পুষ্টিগুণ এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে বলেন, বার্লির চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন হয় না। যার ফলে আমাদের বিপুল পরিমাণ বার্লি বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। শস্যটির চাষ বাড়ানো সম্ভব হলে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের পাশাপাশি বার্লিনির্ভর অনেক শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। শস্যটি অনেক উচ্চ পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। এটির আটা দিয়ে বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাবার (যেমন রুটি, শিশুখাদ্য, স্যুপ) তৈরি করা হয়। এমনকি রোগীর পথ্য হিসেবেও বার্লি খাওয়া হয়ে থাকে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, বার্লি যথেষ্ট লবণাক্ততা সহনশীল একটি ফসল। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে (বাংলা মধ্য কার্তিক থেকে মধ্য অগ্রহায়ণ) বার্লি বপনের উপযুক্ত সময়। বার্লি চাষে বাড়তি সার এবং কীটনাশক প্রয়োগ ও বীজতলা তৈরির ঝামেলা নেই। এটি একটি লাভজনক ফসল। অগ্রহায়ণ মাসে রোপা আমন ধান কাটার পর ওই জমিতে বার্লির আবাদ করা যায়। চলতি বছর প্রথমবার উপজেলার যুগিখালী ও কুশোডাঙ্গা ইউনিয়নে পরীক্ষামূলকভাবে বার্লির ২টি প্রদর্শনী প্লটে আশানুরূপ ফলন পেয়েছি। আমরা সেখানে হেক্টর প্রতি প্রায় তিন টন পর্যন্ত ফলন পেয়েছি। সাধারণত রবি মৌসুমে আমাদের অঞ্চলে গম চাষের প্রধান শত্রু হচ্ছে ব্লাস্ট রোগের প্রকোপ। এসব বিষয় বিবেচনায় বার্লি চাষ ভালো। পাশাপাশি বিকল্প ফসল চাষে উদ্বুদ্ধকরণে বার্লি চাষে কৃষকদের সম্পৃক্ত করা গেলে তা এ অঞ্চলের কৃষিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে। কৃষকরা যাতে বার্লি বাজারজাতকরণ ও মাড়াই করতে পারে তার প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে আগামীতে আরও বেশি আবাদের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
Leave a Reply