রোববার রাত পৌনে ৩টার দিকে ফেইসবুকে দেওয়া ও গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিন সদস্যের কমিটি ঘোষণার এক ঘণ্টার মধ্যে তাতে আরও দুজনকে সংযুক্ত করার কথা জানানো হয়।
প্রথম বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- চলমান ‘অস্থির ও নাজুক পরিস্থিতি’ বিবেচনায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ও মহানগর কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণা পরবর্তী ‘উপদেষ্টা কমিটির পরামর্শেক্রমে’ তিন সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হল।
হেফাজতের বিলুপ্ত কমিটির উপদেষ্টা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীর নেতৃত্বে আহ্বায়ক কমিটিতে প্রথমে আমির জুনাইদ বাবুনগরী ও মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদীকে রাখা হয়। এদের মধ্যে মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী হলেন জুনাইদ বাবুনগরীর মামা।
রাত ৪টার দিকে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে সদস্য হিসেবে সালাহ উদ্দিন নানুপুরী ও মিজানুর রহমান চৌধুরীকে যুক্ত করে কমিটির সদস্য সংখ্যা পাঁচ জন করা হয়।
আহ্বায়ক কমিটি ‘অতি দ্রুত’ হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে চলমান ‘অস্থির ও নাজুক’ পরিস্থিতির কথা বলা হলেও তা কী সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
প্রথমে হেফাজতে ইসলামের ফেইসবুক পেজে দেওয়া জুনাইদ বাবুনগরীর ভিডিও বার্তা ও তার ব্যক্তিগত সহকারী ইনআমুল হাসান ফারুকীর গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে জানানো হয়।
ফেইসবুক পাতায় এক মিনিট ২৪ সেকেন্ডের এক ভিডিও বার্তায় বাবুনগরী যে বিবৃতিটি পড়েন, তাতেও কোনো ব্যাখ্যা ছিল না।
কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের আমির ছিলেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক শাহ আহমদ শফী।
তিনি গত বছর মারা যাওয়ার পর নানা আলোচনার মধ্যে গত ১৫ নভেম্বর সম্মেলনে বাবুনগরীকে আমির করে হেফাজতের ১৫১ সদস্যের নতুন কমিটি গঠিত হয়েছিল।
হাটহাজারী মাদ্রাসায় ওই সম্মেলনে সভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। কওমি সনদের স্বীকৃতি ঘিরে হেফাজতের অভ্যন্তরীণ বিরোধে তার পদত্যাগের কথা তুলে ধরে তার সভাপতিত্বে ওই সম্মেলনকে ‘অবৈধ’ বলে আসছিলেন হেফাজতের প্রয়াত আমির শাহ আহমদ শফীর অনুসারীরা
নতুন ওই কমিটি গঠনের ছয় মাস না যেতেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরকেন্দ্রিক বিক্ষোভ থেকে সহিংসতার ঘটনার পর পুলিশি অভিযানে চাপে থাকার মধ্যে রোববার মধ্যরাতে এক বার্তায় কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেন জুনাইদ বাবুনগরী।
এই বার্তা প্রচারের কয়েক ঘণ্টা আগেই কওমি মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকদের সব ধরনের রাজনীতি ‘মুক্ত’ রাখার ঘোষণা দেয় মাদ্রাসাগুলোর নীতি নির্ধারণী বোর্ড আল হাইআতুল উলয়া লিল জামি’আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ।
দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকা হেফাজতের নেতারা গত বছরের শেষ দিকে ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতায় নেমে ফের আলোচনায় আসে। সংগঠনটির নেতা মামুনুল হক ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন। পরে তিনি হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিবের পদ পাওয়ার পাশাপাশি ঢাকা কমিটির সাধারণ সম্পাদকও হন।
গত মাসের শেষ দিকে মোদীর সফরের বিরোধিতায় নেমে নতুন করে আলোচনায় আসে হেফাজত। সংগঠনটির বিক্ষোভ ও হরতালে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামে সহিংসতায় বেশ কয়েকজন নিহত হয়।
এরপর অর্ধশত মামলার পর মামুনুলসহ হেফাজতের ডজন খানেক কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে।
পুলিশের দাবি, হেফাজত নেতারা নাশকতার বড় ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছিলেন, যার চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্রক্ষমতা দখল।
Leave a Reply