অনলাইন ডেস্ক: ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় হুগলি নদীর তীরে নিমতলা মহাশ্মশানে কবি শঙ্খ ঘোষের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় এই শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
এরআগে বেলা ৩টার দিকে বাড়ি থেকে রওনা হয় কবির মৃতদেহবাহী গাড়ি। কবির ভাই নিত্যপ্রিয় ঘোষের সল্টলেকের বাড়িতে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। তার পর সেখান থেকেই নিমতলায় উদ্দেশে রওনা দেয় কবির দেহবাহী গাড়ি।
করোনাবিধি মেনে কবির শেষকৃত্য হয় বলে জানিয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা। মৃতদেহ বের করার সময় কোভিড প্রোটোকল যাতে মানা হয়, সেদিকে নজর রাখা হয়। রাজ্য সরকার আগেই জানিয়ে দেয়, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় কবির শেষকৃত্য হবে। তবে কবির শেষবিদায়ের সময় তোপধ্বনি করা হবে না বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কবির মৃত্যুতে শোক জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদার কবিকে শেষ সম্মান জানানো হলেও ‘গান স্যালুট’ বাদ রাখা হবে। কারণ, তোপধ্বনি পছন্দ করতেন না কবি। পাশাপাশি, কবির পরিবারের ইচ্ছানুযায়ী আড়ম্বরহীন ভাবে তাকে শেষ সম্মান জানানো হবে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বুধবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মৃত্যু হয় কবি শঙ্খ ঘোষের। তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। জ্বর থাকায় গত সপ্তাহে করোনা পরীক্ষা করিয়েছিলেন কবি। গত ১৪ এপ্রিল বিকেলে তার করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। আগে থেকেই বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। গত ২১ জানুয়ারি অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালেও ছিলেন কয়েকদিন।
করোনার আক্রান্ত হওয়ার পর কলকাতার বাড়িতে থেকে তার চিকিৎসা চলছিল। মঙ্গলবার রাতে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। বুধবার সকালে তাকে ভেন্টিলেশনে নেওয়ার পর সাড়ে ১১টার দিকে মৃত্যু হয়।
১৯৩২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলায় জন্ম হয় শঙ্খ ঘোষের। তার পৈতৃক বাড়ি বরিশালের বানারীপাড়ায়। তবে শঙ্খ ঘোষ বড় হয়েছেন পাবনায়। বাবার কর্মস্থল হওয়ায় তিনি বেশ কয়েক বছর পাবনায় অবস্থান করেন এবং সেখানকার চন্দ্রপ্রভা বিদ্যাপীঠ থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৫১ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। কর্মজীবনে বঙ্গবাসী কলেজ, সিটি কলেজ ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন তিনি। বিশ্বভারতী ও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়েও তিনি অধ্যাপনা করেছেন।
বাংলা কবিতার জগতে শঙ্খ ঘোষের অবদান কিংবদন্তিপ্রতিম। ‘দিনগুলি রাতগুলি’, ‘বাবরের প্রার্থনা’, ‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’, ‘গান্ধর্ব কবিতাগুচ্ছ’ তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। দীর্ঘ সাহিত্যজীবনে একাধিক সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন শঙ্খ ঘোষ।
১৯৭৭ সালে ‘বাবরের প্রার্থনা’ কাব্যগ্রন্থটির জন্য তিনি দেশটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার পান। ১৯৯৯ সালে কন্নড় ভাষা থেকে বাংলায় ‘রক্তকল্যাণ’ নাটকটি অনুবাদ করেও সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার পান তিনি। এ ছাড়াও রবীন্দ্র পুরস্কার, সরস্বতী সম্মান ও জ্ঞানপীঠ পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১১ সালে তাকে পদ্মভূষণে সম্মানিত করে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার।
Leave a Reply