ন্যাশনাল ডেস্ক: কবি শঙ্খ ঘোষের মৃত্যুতে শোক নেমে এসেছে সাহিত্যমহলে। স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছেন পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যিকরা। সংবাদ মাধ্যমের কাছে বলা তাদের কথায় উঠে এসেছে কবির জীবন, সাহিত্যসহ নানা বিষয়।
বিশিষ্ট সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার বললেন, জীবিতকালে উনি নীরবে থাকলেও হৃদয়ে থাকতেন সবসময়। আজ উনি যখন চলে গেলেন তাও গেলেন নীরবেই। প্রয়াত কবিকে যে তিনি একবার জানিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ হয়তো ‘ তুমি হৃদয়ে মম ‘ লাইনটি তাকে দেখেই লিখেছিলেন, সেকথাও বললেন ‘কালবেলা’-র স্রষ্টা।
বললেন,শঙ্খ ঘোষের লেখা কবিতা তার কাছে শুধুমাত্রই ব্যক্তিগত তা আবৃতি কিংবা পাঠ করার জন্য নয়। খুব তেষ্টা পেলে এক গ্লাস জল খেলে যেমন অনুভূতি হয়, কবির সৃষ্টি সেইসব কবিতা পড়ে তার সেই একই অনুভূতি হয়।
বিখ্যাত লেখক বুদ্ধদেব গুহ বললেন,’ একটি যুগের অবসান হলো। এই ঘটনা বাংলা সাহিত্যে মহীরুহ পতনের মতো। বাংলা কাব্য জগতে শঙ্খদা শেষ প্রতিষ্ঠান ছিলেন।’
আরও বললেন, বরাবরই নীরবে থাকা পছন্দ করতেন কবি। যেমন অন্তর্মুখী ছিলেন, তেমনই ছিলেন গভীর মনের একজন মানুষ তার ‘শঙ্খদা’। কলেজ জীবন থেকেই শঙ্খ ঘোষের অসংখ্য কবিতার পাঠক হয়েও কবির ‘পাঁজরে দাঁড়ের শব্দ’ কাব্যগ্রন্থটি যে তার অশেষ প্রিয় সেকথাও নিজের বক্তব্যের শেষে উল্লেখ করতে ভুললেন না ‘ঋজুদা’-র স্রষ্টা।
সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় জানালেন তার কাছে শঙ্খ ঘোষ শুধুই একজন বিরাট কবি ছিলেন না। তার কাছে মানুষ শঙ্খ ঘোষও একটু অদ্ভুত ছিলেন। সাধারণ চোখে যাকে বিচার করা অসম্ভব।
লেখকের কথায়, অসম্ভব শান্ত ও স্থিতধি ছিলেন প্রয়াত কবি। সঙ্গে অসম্ভব ধৈর্য্যশীল ও সমপরিমানের স্নেহশীল। বিশেষ করে তরুণ লেখক,কবি, প্রকাশকদের প্রতি তার যে প্রশ্রয়,পিতৃসুলভ মনোভাব তা এককথায় তুলনাহীন।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘একই বিষয়ে সুনীলের খানিকটা ছিল,কিন্তু শঙ্খবাবুর ব্যাপ্তি আরও অনেকটাই বেশি।নিজের সময় নষ্ঠ করে তরুণ কবিদের কবিতা সংশোধন করে দিচ্ছেন একথা আজকাল আর ভাবা যায় না। অলীক রূপকথা মনে হয়। অথচ দিনের পর দিন তাই করে গেছেন শঙ্খ ঘোষ।’
নিজের বক্তব্যে তার আরও সংযোজন, অসংখ্য পুরস্কার,সন্মান পেয়েও বদলে যাননি শঙ্খ ঘোষ। অহংকারের লেশমাত্র ছিল না। এমনও হয়েছে পুরস্কারের মোটা টাকা মুহূর্তে বিলিয়ে দিয়েছেন অসহায় মানুষদের মধ্যে। একবার নয় একাধিকবার।’ উদাহরণস্বরূপ জানালেন, দীর্ঘদিন বঙ্গীয় সাহিত্যে পরিষদের কর্মচারীরা বেতন পাচ্ছিলেন না জানতে পেরে পুরস্কারের পাঁচ লক্ষ টাকা তাদের দিয়ে দিয়েছিলেন শঙ্খ ঘোষ। এমনই মানুষ ছিলেন তিনি।
একই সুর শোনা গেল সাহিত্যিক প্রচেত গুপ্তের গলাতেও। লেখকের কাছে তার ‘শঙ্খ জেঠু’কে হারানো পিতাকে হারানোর মতোই। তিনি শঙ্খবাবুকে হারালেন শব্দটি বলার বদলে জানালেন শঙ্খ ঘোষকে ‘পাওয়া’-র স্মৃতি তার কাছে আজন্ম উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। শঙ্খ ঘোষের জীবন এবং তাঁর সৃষ্টি আমাদের এই সমাজকে অনেককিছু দিয়ে গেল বলেই ধারণা তার। আরও বললেন,ইতিহাসে থেকে যাবেন কবি নিজের কৃত্বিতে কিন্তু সাহিত্যে যিনি থেকে যাবেন একজন মনীষী হিসেবে। নানান স্মৃতিচারণার ফাঁকে কবির একটি বিশেষ গুণের ব্যাপারে জোর দিলেন এই বিশিষ্ট লেখক।
প্রচেত গুপ্তের কথায়, ‘যেভাবে প্রবীণ সাহিত্যিক, প্রকাশক, সম্পাদকদের দেখতেন ঠিক সেই একই মূল্যে আনকোরা নতুন কবি, লেখক, সম্পাদক, প্রকাশকদেরও দেখতেন উনি। কোনওরকম তফাৎ করতেন না গুরুত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে।শঙ্খবাবু একজন বড় প্রকাশনার ক্ষেত্রে যেভাবে লিখতেন,একটি ছোট প্রকাশনার ক্ষেত্রে এককিভাবে লিখতেন।’ গদ্যেও যে তার অসাধারণ সব কাজ রয়েছে তার মাধ্যমেও শঙ্খবাবু দৃপ্তভাবে থেকে যাবেন বলেও জোর গলায় জানালেন প্রচেত গুপ্ত।
Leave a Reply