ভয়ংকর পরিণতি আর সংক্রমণ রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে

ডা. সুব্রত ঘোষ

দেশে করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ আশঙ্কার চেয়েও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। দৈনিক আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেশি। হাসপাতালগুলোতে রোগীদের ঠাঁই হচ্ছে না। আইসিইউ সেবা দেওয়া জরুরি হলেও শয্যার অভাবে অনেক রোগীকেই এই সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। এমনকি অক্সিজেন সংকট তৈরিরও আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে, সেই গতি কমানো না গেলে এই সংকট আরো তীব্র হবে এবং পুরো দেশের হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় ধস নামতে পারে। তাঁদের মতে, সংক্রমণের গতি কমানোর জন্য মানুষকে সচেতন হতে হবে, সঠিকভাবে মাস্ক পরাসহ জরুরি স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলতে হবে এবং লকডাউন ও বিধি-নিষেধ আরো কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। একই সঙ্গে টিকা প্রদান আরো দ্রুততর করতে হবে। কিন্তু টিকা যেহেতু পুরোপুরি নিরাপত্তা দেয় না, তাই টিকা দেওয়ার পরও স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলতে হবে। আর এখানেই সমস্যা। বেশির ভাগ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানতে চান না। সামাজিক দূরত্ব মানা তো দূরের কথা, মাস্ক পরতেও তাঁদের অনীহা। তাহলে যে ভয়ংকর পরিণতির আশঙ্কা করা হচ্ছে, তা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে কিভাবে?
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে ১৮ দফা বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। তারপর লকডাউনের আদলে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। সর্বশেষ গত বুধবার থেকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু ব্যাংক, অনেক অফিস, কারখানাসহ জরুরি অর্থনৈতিক কর্মকা- চালু থাকায় প্রচুর মানুষ চলাচল করছে। তার পাশাপাশি প্রয়োজন ছাড়াও বহু মানুষ ঘরের বাইরে আসছে। হাট-বাজারগুলোতে অত্যধিক ভিড় রয়েছে। প্রায় কোথাও সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না। এবার লকডাউনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে তুলনামূলকভাবে বেশি তৎপর দেখা গেছে। রাস্তায় বের হওয়া মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। তার পরও নানা অজুহাতে মানুষ ঘরের বাইরে আসছেই। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘লকডাউন’ বলতে যা বোঝায়, তা সঠিকভাবে পালন করা হচ্ছে না। তাই লকডাউনের সুফল পাওয়া নিয়েও অনেকে সংশয় প্রকাশ করছেন। আবার লকডাউনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে অন্যায় ক্ষমতা প্রদর্শনের অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালে যাওয়া-আসার পথে তারা চিকিৎসকদেরও হয়রানি, হেনস্তা করেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এগুলো বন্ধ করতে হবে।
মানুষ নিজে সচেতন না হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি পালন নিশ্চিত করা প্রায় অসম্ভব। তার পরও গত কিছুদিনের কড়াকড়িতে কিছুটা হলেও সুফল পাওয়া গেছে। যে গতিতে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছিল, সেই গতি কিছুটা হলেও রোধ করা গেছে। সংক্রমণের হার একটা জায়গায় এসে থেমে গেছে। এখন প্রয়োজন এই হার কমানো। এ জন্য সবাইকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। পরিপূর্ণ লকডাউনে যাওয়া খুবই কঠিন কাজ, তাতে বহু মানুষের জীবন-জীবিকায় আঘাত আসে। আবার খুব বেশি শিথিলতাও কাম্য নয়, তাতে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *