আশাশুনি প্রতিনিধি: আশাশুনি সদরের খোলপেটুয়া নদীর ভাঙ্গনকৃত পানি রক্ষা রিং বাঁধ অবশেষে সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ফলে বৃহস্পতিবার দুপুরে জোয়ারে নদীর পানি আর ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। কিন্তু, মঙ্গলবার দুপুর থেকে ও বুধবার রাতের জোয়ার পর্যন্ত নদীর পানি ভেতরে প্রবেশ করে আশাশুনি দক্ষিণ পাড়া, দয়ারঘাট, জেলেখালি, আশাশুনি পূর্বপাড়া বিল ও দূর্গাপুর মোট ৫ গ্রাম প্লাবিত হয়। পানি বন্দি হয়ে পড়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ। তলিয়ে যায় সুন্দরবন চিংড়ি পোনা হ্যাচারি, একটি মসজিদ, ৪টি মন্দির, প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ দেড় শতাধিক চিংড়ী ঘের, প্রায় কর্তন উপযোগী ধানের মাঠ, পুকুরসহ অসংখ্য কাচা পাকা বসতবাড়ী। এসব পানিতে তলিয়ে ফসল নদীতে ভেষে গিয়ে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। জানাগেছে, কাচা-পাকা ঘরবাড়ী ভেঙ্গে চুরে তছনছ হয়ে গেছে। বানভাষী মানুষসহ গবাদি পশু ও প্রয়োজনীয় কিছু মালামাল নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার দ্রুত পাউবো’র বাঁধে অবস্থান নেয়। হঠাৎ করে বাঁধ ভেঙ্গে পানি ভেতরে প্রবেশ করায় অধিকাংশ পরিবার তাদের বহু মূল্যবান জিনিস পত্র হেফাজতে রাখতে ব্যর্থ হয়। ফলে কোটি কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যা সঠিক নিরুপনে উপজেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন এনজিও প্রতিনিধিদের মাঠে নামতে দেখা গেছে। এ দিকে ভেতরে প্রবেশ করা পানি এখন সরানোর কোন পথ না থাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। তবে প্লাবিত এলাকার বানভাসি পরিবারের মধ্যে সরকারি ও এনজিও’র পক্ষ থেকে কোন শুকনা খাবার সরবরাহ করা হয়নি। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর উপজেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও এনজি লিডার্সের পক্ষ থেকে বানভাষি এলাকায় সুপেয় পানি সরবরাহ করলেও কোন খাদ্যে ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে পাউবো’র মূল বাঁধের উপর আশ্রায় নেয়া পরিবারগুলির মানুষ ও শিশুদের অর্ধহারে অনাহারে কষ্ট পেতে দেখা গেছে। মল ত্যাগের স্থান পানিতে ডুবে যাওয়ায় সরকারি বা বেসরকারিভাবে ভ্রাম্যমান ব্যবস্থা না করায় সবচেয়ে বেশী সমস্যায় থাকতে হচ্ছে বানভাষী মানুষের। গত মঙ্গলবার বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হওয়ার পর রাত থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এলাকা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।আশাশুনি সদর ইউপি চেয়ারম্যান সম সেলিম রেজা মিলন জানান, পাউবো কর্তৃপক্ষ জিও ব্যাগ ও শ্রমিকের মুজুরী বাবদ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শ্রমিক প্রতি দিন ৭ কেজি চাউল সরবরাহ করা হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম, পাউবো কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা প্রশাসনের পরামর্শে সদরের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সার্বিক সহযোগীতায় এবং জোয়ারের পানির চাপ কম থাকায়, আপাতাত মূল রিং বাঁধের সুন্দরবন হ্যাচারী, সবুরের বাড়ী, রনজিৎ বৈদ্য, স্বপন মুহুরী ও অমল মন্ডল, ঋষি পাড়ার নিরান দাশ এবং পুলিন দাশের বাড়ী সংলগ্ন মোট ৬টি পয়েন্টের রিং বাঁধ আটকানো সম্ভব হয়েছে। ফলে আপাতাত কয়েকটি পরিবার বাঁধের বাইরে পড়ায় তার পাউবো’র বাঁধে আশ্রায় নিয়েছে। ভেতরে আপাতাত আর এ গোনে খোলপেটুয়া নদীর পানি উঠার সম্ভবনা খিন হয়ে গেছে। এখন ওই রিং বাঁধ মেরামতের কাজ অব্যহত রয়েছে। তবে আগামী অমাবশ্যা গোনের আগেই যদি মূল বাঁধের কাজ না করা হয় তা হলে আবারো এমন ঘটনা ঘটতে সময়ের ব্যাপার মাত্র। তাছাড়া জোয়ারে পানি কম বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে পানি উঠা আপাতাত বন্ধ হয়েছে। ভবিষ্যতে মানিকখালি টু মরিচ্চাপ ব্রীজ পর্যন্ত পাউবো’র বেড়ীবাঁধ না থাকায় এলজিইডি কর্তৃক নির্মানাধী রাস্তা নীচু হওয়ায় বছরের বিভিন্ন সময় গোনে জোয়ারের চাপে মরিচাচাপ নদীর পানি ভেতরে প্রবেশ করে। ফলে বাজারের ব্যবসায়ীদের বেশ ক্ষতির শিকার হতে হয়। বাজার কমিটিসহ এলাকার সচেতন মহলের দাবী দ্রুত এ জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটির জলবায়ু পরিবর্তন রোধক ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
প্রসঙ্গত: পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার জানান, সদরের মূল বেড়ী বাঁধে ভাঙ্গনের পর পাউবো’র পক্ষ হতে জিও ব্যগ সরবরাহ করে সদর ইউপি চেয়ারম্যানের তত্ত্বাবধানে বাঁধ কাজ করা হয়েছে। কাজের জন্য গত ১৪ মার্চ টেন্ডার আহবান করা হয়, ২২ মার্চ ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়। ৫৩৪ মিটার কাজের জন্য ১ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদার জিও বস্তা ও বালি নিয়ে এলাকায় এসেছেন। হঠাৎ করে নদীতে অতিরিক্ত পানি বৃদ্ধি পেয়ে রিং বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। আগামী মরা গোণে ঠিকাদার কাজ শুরু করবে।
Leave a Reply