লঞ্চঘাট পাঠাগারের পাশে বই পড়ছেন এক পাঠক – সমকাল উদ্দেশ্য ছিল প্রত্যন্ত জনপদের লঞ্চঘাটে আসা যাত্রীরা সময় কাটাবেন বই পড়ে। সেভাবে নামটাও ঠিক করা হয়েছে ‘লঞ্চঘাট পাঠাগার’। তবে লঞ্চের জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রীরা বই পড়ার জন্য বেশি সময় না পেলেও এর মধ্যে প্রকৃতি দর্শনে আসা মানুষের আগ্রহকে বাড়িয়ে তুলেছে পাঠাগারটি। বিকেলের অবসরে নয়নাভিরাম প্রকৃতির সান্নিধ্যে এসে বই পড়তে অনেকেই চলে আসেন সেখানে।
খুলনার কয়রা উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে সুন্দরবন-সংলগ্ন কাটকাটা এলাকায় এ পাঠাগারটি গড়ে তোলা হয়েছে। ‘হিউম্যানিটি ফার্স্ট’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা প্রভাষক ইদ্রীস আলী বই পড়ার এমন ব্যতিক্রমী আয়োজন করেছেন। ইদ্রীস আলী বলেন, এলাকার কিছু উদ্যমী তরুণ এখানে একটি পাঠাগার গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতেন। তাদের সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটানো হয়েছে। শুরুতে বইয়ের সংগ্রহ খুব বেশি না হলেও ধীরে ধীরে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার হিসেবে গড়ে উঠছে ‘লঞ্চঘাট পাঠাগার’।
পাঠাগারটিতে গিয়ে দেখা গেছে, এর চারপাশে অপরূপ প্রকৃতির শোভা। পাঠকরা যেখানে বসে বই পড়ছেন, সে স্থানটিও মনোমুগ্ধকর। পাকা সড়ক থেকে কাঠের তৈরি লম্বা পাটাতন চলে গেছে নদীর মাঝে বাঁধা পন্টুনে। তার ওপারেই সুন্দরবন। এপারে আদিবাসী মুণ্ডা সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। মাথার ওপর খোলা আকাশ। চোখের সামনেই শান্ত নদী পেরিয়েই বনের হাতছানি। পাখির কলরব, জেলেদের মাছ ধরে ফেরা- সব কিছুই যেন সাজানো। এর মাঝেই বইয়ের পাতায় চোখ বুলিয়ে যাচ্ছেন পাঠক। প্রকৃতির সান্নিধ্যে বসে এমন বই পড়া প্রাণভরে উপভোগ করছেন তারা।
সেখানে আসা প্রকৌশলী আজমিরুল ইসলাম একজন প্রতিষ্ঠিত লেখকের উদ্ৃব্দতি টেনে বলেন, একটি ভালো বই যে কোনো সময় যে কোনো মানুষকে বদলে দিতে পারে। মানবিকতা বিকশিত করে তাকে দায়িত্বসচেতন, দেশপ্রেমিক ও বুদ্ধিদীপ্ত নাগরিকে পরিণত করতে পারে। সে জন্য বই হচ্ছে মানুষের উৎকৃষ্ট বন্ধু। তিনি বলেন, পাঠচর্চা না থাকার কারণে সমাজে মানবিকতা, মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যপ্রীতি বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রত্যন্ত এলাকায় এ রকম একটি পাঠাগার গড়ে ওঠায় মানুষের মাঝে বই পড়ার আগ্রহ জেগে উঠবে এবং বই পড়ে তারা ভালো কাজে উৎসাহিত হবে।
আরেক পাঠক কলেজপড়ূয়া সাব্বির হোসেন বলেন, পাঠাগারটি করার আগে আমরা এখানে ঘুরতে এসে মোবাইল ফোনে ব্যস্ত থাকতাম। এখন বই পড়ে সময় কাটাই। সাব্বির হোসেনের মতো অনেক তরুণকে দেখা গেছে বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকতে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, এর আগে এখানে যারা ঘুরতে আসতেন অথবা লঞ্চের জন্য অপেক্ষায় থাকতেন, তাদের দেখতাম অযথা মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটি করতেন। পাঠাগারটি গড়ে ওঠায় এখন বেশিরভাগ মানুষ বই পড়েন এবং প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখে সময় কাটিয়ে ফিরে যান। অনেক মানুষ আছেন, যারা কেবল বই পড়ার উদ্দেশ্যে এখানে আসেন।
পাঠাগারটির পাশে কাটকাটা পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত কর্মকর্তা জিয়াউল হক জিয়া বলেন, এখানে ঘুরতে আসা লোকজন বই নেড়েচেড়ে দেখছেন। আবার কেউ বই পড়ার উদ্দেশ্যেই এখানে আসছেন। একে অন্যের দেখাদেখি বই পড়ার আগ্রহ বাড়ছে। আবার লঞ্চের জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রীদের সময় কাটানোর জন্য ভালো সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এখানে বেড়াতে আসা মানুষের নিরাপত্তায়ও কাজ করি।
Leave a Reply