অনলাইন রিপোর্টার ॥ একুশে পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনকে ফুলেল শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হয়েছে।
সোমবার বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চের পাদদেশে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার মরদেহ রাখা হয়।
সেখানে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মন্ত্রী, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, অভিনেতা-অভিনেত্রী ও লেখকসহ তার ভক্ত, পাঠক-অনুরাগীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তাকে স্মরণ করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এ সময় তথ্যমন্ত্রী, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমি, জাতীয় কবিতা পরিষদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, ছোটকাকু ক্লাব, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, টেলিভিশন, নাট্যশিল্পী ও নাট্যকার সংসদ, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতি, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিসহ বিভিন্ন পেশাজীবী ও সেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
রাবেয়া খাতুনের পরিবারের পক্ষে মুকিত মজুমদার বাবু গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, আপনারা সবাই তার জন্য দোয়া করবেন। পরপারে যেন তিনি শান্তিতে থাকেন, সেজন্য সবার কাছে আমি দোয়া কামনা করছি। তিনি আমাদের জন্য অনেক লেখা উপহার দিয়েছেন। তিনি তার লেখার মধ্য দিয়ে আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন।
পরিবার থেকে জানানো হয়েছে, বাংলা একাডেমি থেকে তার মরদেহ চ্যানেল আই ভবনে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে বিকেল ৩টায় জানাজার পর বনানী কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হবে।
মন্ত্রী বলেন, বাংলা সাহিত্যে রাবেয়া খাতুনের মতো খুব বেশি লেখিকা পাওয়া যাবে না। তার প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। প্রার্থনা করছি, তার আত্মা যেন শান্তি পায়।
তিনি আরও বলেন, রাবেয়া খাতুন শুধু বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেননি; বরং তিনি তার পরিবারকে একটি সংস্কৃতিমনা পরিবার হিসেবে গড়ে তুলেছেন। ফরিদুর রেজা সাগর তার সন্তান, যিনি চ্যানেল আইয়ের মাধ্যমে বাংলা সংস্কৃতিকে দারুণভাবে তুলে ধরছেন। লালন করছেন, ধারণ করছেন এবং ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তার পুরো পরিবার সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছেন। তার সন্তানদের প্রতি সমবেদনা জানাই।
রাবেয়া খাতুনের ভক্ত ও লেখক শেলী সেলিনা বলেন, তার লেখনীর মধ্য দিয়ে মানুষের জীবনবোধকে তুলে ধরতেন। আমরা বিশ্বাস করি তিনি তার লেখার মাধ্যমে আমাদের মাঝে সারাজীবন বেঁচে থাকবেন। মুক্তিযুদ্ধ ও নারীদের নিয়ে তিনি প্রতিনিয়ত কাজ করেছেন। আমি মহীয়সী এ নারীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শিশুসাহিত্যিক আসলাম সানী বলেন, যাদের লেখায় আমরা অনুপ্রাণিত হয়েছি রাবেয়া খাতুন তাদেরই একজন। তিনি হয়তো সশরীরে বিদায় নিচ্ছেন কিন্তু তিনি আমাদের মাঝে আছেন এবং থাকবেন। তার লেখার মাঝেই তিনি বেঁচে থাকবেন।
রাবেয়া খাতুন রোববার বিকেলে ৮৫ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগরের মা।
অর্ধ শতাধিক উপন্যাসের রচয়িতা রাবেয়া খাতুন শিক্ষকতা করেছেন, সাংবাদিকতাও করেছেন। তিনি বাংলা সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৯৩ সালে একুশে পদক এবং ২০১৭ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন।
রাবেয়া খাতুনের জন্ম ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঢাকার বিক্রমপুরে মামা বাড়িতে। তার পৈতৃক বাড়ি মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর গ্রামে।
Leave a Reply