জাতীয় ডেস্ক: দেশের ৩৯০টি সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে (সংযুক্ত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক) শিক্ষার্থী ভর্তির ডিজিটাল লটারির ড্রর ফল সোমবার প্রকাশ করা হয়েছে। বিকেল সাড়ে চারটায় রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে লটারি উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। পরে আজিমপুর গার্লস স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী বোতম টিপে লটারির কার্যক্রম শুরু ও ফল প্রকাশ করেন।
স্কুলগুলোতে লটারির মধ্যমে প্রথম শ্রেনি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত লটারির মধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। প্রায় ৭৮ হাজার শূন্য আসনের বিপরীতে এ ডিজিটাল লটারি অনুষ্ঠিত হল। অনুষ্ঠানে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অংশ নেন। লটারির জন্য এর সঙ্গে সফটওয়ার শিক্ষার্থী বাছাই শুরু করে। সফটওয়ারে শিক্ষার্থী নির্বাচন সম্পন্ন হয়।
অনুষ্ঠিত লাটারির ফল পাওয়া যাবে http://gsa.teletalk.com.bd ওয়েবসাইটে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছে, সারাদেশে সরকারি স্কুলে প্রায় ৭৮ হাজার আসনের বিপরীতে ভর্তির জন্য পাঁচ লাখ ৭৪ হাজার ৯২৯ জন শিক্ষার্থী আবেদন পড়েছে। সারাদেশ মোট আসন ৭৭ হাজার ১৪০টি। দেশব্যাপী ৩৯০টি বিদ্যালয়ের জন্য ডিজিটাল লটারি অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া নতুন জাতীয়করণ করা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্থানীয় কমিটির মাধ্যমে লটারি করা হবে।
অনুষ্ঠানের শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, আপনারা জানেন বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে এক কঠিন পরিস্থিতি অতিক্রম করছে। তাই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থে গত বছরের মার্চ মাস থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে।
কিন্তু শিক্ষার্থীরা যাতে শিক্ষণ-শিখন কাজ থেকে বঞ্চিত না হয় তার জন্য আমরা সংসদ টিভির মাধ্যমে দূর শিক্ষণ, অনলাইন পাঠদান এবং এসাইনমেন্ট ভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করেছি যা খুবই সফল ও প্রশংসিত হয়েছে বলে মাঠ পর্যায় থেকে জানতে পেরেছি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, স্কুলগুলোতে যেহেতু বার্ষিক পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি সেহেতু সরকারিভাবে আমরা এ বছর লটারির মাধ্যমে প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ প্রক্রিয়ায় বেসরকারি স্কুলগুলো এবং সম্প্রতি জাতীয়করণকৃত অনেক স্কুল স্থানীয়ভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভর্তি নীতিমালা অনুসরণ করে ভর্তির কাজ লটারির মাধ্যমে সম্পন্ন করছে।
আর ৩৯০টি সরকারি স্কুলে ৫ লাখ ৭৪ হাজার ৯২৯ জন আবেদনকারি ভর্তিচ্ছুকদের মধ্য থেকে সারাদেশে মোট ৭৭ হাজার ১৪০ টি শূন্য আসনের বিপরীতে ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে আজ ভর্তি নির্বাচন করার জন্য আমরা এখানে সমবেত হয়েছি।
এ প্রক্রিয়ার একটি ভাল দিক হলো সকল স্কুলে এবার নানা ধরণের মেধা সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ পাবে। এ ডিজিটাল লটারির সার্বিক কারিগরি সহায়তার কাজ করেছে টেলিটক বাংলাদেশ এবং টেলিটকের সফট্ওয়্যার এর যথার্থতা যাচাই বাছাই করেছে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল। আমি তাদেরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। লটারি মাধ্যমে ভর্তিতে নানা ধরণের মেধার শিক্ষার্থীরা স্কুলে ভর্তির সুযোগ পাবেন। যা শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। এর মধ্যে দিয়ে স্কুলগুলোর মানোন্নয়ন হবে। এসময় সকলকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী।
সচিব মো মাহবুব হোসেন বলেন, ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে অনিয়মের কোন সুযোগ নেই। নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানান তিনি।
লটারির ড্রর ফল প্রাপ্তি ও ভর্তির বিষয়ে জানা গেছে, লটারি শেষ হওয়ার পরে প্রতিষ্ঠান প্রধান, অভিভাবকরা টেলিটকের ওয়েবসাইট (https://gsa.teletalk.com.bd/) থেকে নির্ধারিত আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে ফল ডাউনলোড করতে পারছেন। প্রতিষ্ঠান প্রধানরা ফল ডাউনলোড করে জেলা ও উপজেলা ভর্তি কমিটির সভাপতিকে ইমেইল করেন। একই সঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে জানাতে হচ্ছে।
নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রে ভর্তি কমিটির সভা ডাকতে হবে। আর যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থী ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ভর্তি লটারির বিস্তারিত প্রক্রিয়া জানিয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা, স্থানীয় প্রশাসন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগেই চিঠি পাঠিয়েছে শিক্ষা অধিদপ্তর।
সারাদেশে সরকারি স্কুলগুলোতে ভর্তির জন্য ৫ লাখ ৭৩ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী আবেদন করেছিলেন। সে হিসেবে প্রতি সিটের জন্য সাতটির বেশি আবেদন জমা পড়েছে।
গত ৩০ ডিসেম্বর লটারি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও আদালতের নির্দেশে আবেদনের সময় সাত দিন বাড়ানো হয়েছিল। আজ বিকেলে লটারির ফল প্রকাশ করা হল।
উল্লেখ্য, এবারও স্কুলগুলোকে তিনটি গুচ্ছ বা গ্রুপ (এ, বি এবং সি) করে ভর্তির কাজটি করা হবে। ভর্তি আবেদনের সময় একজন শিক্ষার্থী একটি গুচ্ছের পাঁচটি বিদ্যালয়ে ভর্তির পছন্দক্রম দিতে পেরেছে।
বিভাগভিত্তিক আবেদনের সংখ্যা সম্পর্কে জানা গেছে, ঢাকা বিভাগে এক লাখ ৬৭ হাজার ৬১০টি, বরিশালে ১৬ হাজার ২৮৭টি, চট্টগ্রামে এক লাখ ৩৩ হাজার ৫৫৮টি, রাজশাহীতে ৭০ হাজার ৮১২, খুলনায় ৪৩ হাজার ৫০৬টি, রংপুরে ৬৯ হাজার ৫২৩টি, সিলেটে ২৪ হাজার ৫৭৩ এবং ময়মনসিংহে ৪৯ হাজার ৬০টি আবেদন রয়েছে।
এছাড়া প্রথম শ্রেণিতে ৪২ হাজার ৩৭২টি, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১২ হাজার ৬৮৫টি, তৃতীয় শ্রেণিতে এক লাখ ৪৮ হাজার ১৯৪টি, চতুর্থ শ্রেণিতে ২২ হাজার ৯৬৮টি, পঞ্চম শ্রেণিতে ৩৬ হাজার ৭৩৪টি, ষষ্ঠ শ্রেণিতে দুই লাখ ৪৩ হাজার ৫১৬টি, সপ্তম শ্রেণিতে ১১ হাজার ৫৩১টি, অষ্টম শ্রেণিতে ২১ হাজার ৩৯৩টি এবং ন্বম শ্রেণিতে ৩৫ হাজার ৫৩৬টি আবেদন রয়েছে।
Leave a Reply