স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নবেম্বর কর্নেল তাহের বীরউত্তম ও জাসদের নেতৃত্বে সিপাহী-জনতার অভ্যূত্থান, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যা, অবৈধ ক্ষমতা দখল ও সংবিধান লংঘন, ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থে সেনাবাহিনীর ব্যবহার, হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের রাজনীতি এবং ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রকাঠামোর অবসানের লক্ষ্যে সংগঠিত একটি ঐতিহাসিক মহান ঘটনা।
তিনি বলেন, ৭ নবেম্বর মুক্তিযোদ্ধা হত্যা বা অফিসার হত্যা, সৈনিক হত্যা, বিপ্লব ও সংহতি দিবস নয়। যারা এতদিন পর্যন্ত ৭ নবেম্বরকে চিহ্নিত করতে চেয়েছে তারা ইতিহাসকে আড়াল এবং বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার খুনীসহ ষড়যন্ত্রকারী-খুনীদের আড়াল করা, তাদের পক্ষে ওকালতি করার ব্যার্থ চেষ্টা চালিয়েছে।
শনিবার জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ শহীদ কর্নেল তাহের মিলনায়তনে ৭ নবেম্বর উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দেরিতে হলেও ধামাচাপা দেয়া সত্য আজ প্রকাশিত উল্লেখ করে সাবেক এই তথ্য মন্ত্রী বলেন, খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে এখন সবাই খুবই সুস্পষ্টভাবে বলছেন কারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে, কারা জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেছে। কারা বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার হত্যাকারীদের নিরাপদে দেশত্যাগ করার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এমনকি খালেদ মোশাররফকে কার নির্দেশে কোন অফিসাররা হত্যা করেছে, খোদ খালেদ মোশাররফ এর পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের নামও আজ প্রকাশ করা হয়েছে।
তিন নবেম্বর জাতীয় চার নেতা হত্যা, ৭ নবেম্বর সিপাহী-জনতার অভ্যূত্থান দমন, খালেদ মোশাররফ হত্যা, জিয়ার শাসনামলে কর্নেল তাহেরকে সাজানো মিথ্যা মামলায় বিচারের নামে প্রহসণে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা, সেনানিবাসগুলোতে শত শত অফিসার-সৈনিক হত্যার ঘটনার তদন্ত করে সত্য উদঘাটনে একটি ‘জাতীয় সত্য উদঘাটন কমিশন’ গঠন করার আহ্বান জানান।
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখে, দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি, স্থায়ী কমিটির সদস্য মীর হোসাইন আখতার, স্থায়ী কমিটির সদস্য ও শহীদ কর্নেল তাহেরের অনুজ অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, সহ-সভাপতি ফজলুর রহমান বাবুল, নইমুল আহসান জুয়েল, সাইফুজ্জামান বাদশা, শরিফুল কবির স্বপন, রাশিদুল হক ননী প্রমুখ।
ইনু বলেন, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যার পর সেই দিনের রাজনৈতিক সংকট ও শুন্যতায় শহীদ কর্নেল তাহের ও জাসদের নেতৃত্বে বিপ্লবী অভ্যূত্থান প্রচেষ্টা ইতিহাসের গতি পরিবর্তনের ঐতিহাসিক সুযোগ করেছিল। সিপাহী-জনতার অভ্যূত্থান বাংলাদেশের বিপ্লবী রাজনীতির ইতিহাসে একটি মাইল ফলক। কিন্তু জিয়া ও তার সহযোগী পাকিস্তান ফেরত পাকিস্তানপন্থী অফিসার এবং দেশি-বিদেশি প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী সেই মহান বিপ্লবী প্রচেষ্টাকে দমন করে দেশকে পাকিস্তানপন্থা ও চরম প্রতিক্রিয়াশীলতার দিকে ঠেলে দেয়। জিয়ার সাথে হাত মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তি মুক্তিযুদ্ধে তাদের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে শুরু করে।
গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক শক্তির দীর্ঘদিনের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ধারায় দেশ আজ পাকিস্তানপন্থা থেকে আবার মুক্তিযুদ্ধের পথে ফিরতে শুরু করেছে। কিন্তু এখনও পাকিস্তানপন্থার রাজনীতির ধারক-বাহক বিএনপি-জামাত ও তাদের সঙ্গি জঙ্গিবাদী-উগ্রবাদীরা এখনও বাংলাদেশ রাষ্ট্র, সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধকে চ্যালেঞ্জ করছে।
ইনু বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পথে দেশকে ফেরানোর সংগ্রামের সাথে পাকিস্তানপন্থার রাজনীতিকে পরাজিত করা এবং সুশাসন-আইনের শাসন-সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ওতোপ্রোতভাবে যুক্ত। জঙ্গিবাদ-উগ্রবাদ-সাম্প্রদায়িকতার বিপদকে খাটো করে দেখে আড়ালে রেখে বিদ্যমান অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকটকে আলাদাভাবে মোকাবেলা করার রাজনৈতিক কৌশল আত্মঘাতি ও ভ্রান্ত।
ইনু বলেন, অসাম্প্রদায়িকতা-সুশাসন-সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আমাদেরকে জঙ্গিবাদ-উগ্রবাদ-সাম্প্রদায়িকতা এবং দুর্নীতি-বৈষম্যের বিরুদ্ধে এই দুই ফ্রন্টে একইসাথে লড়াই করতে হবে।
কর্ণেল তাহেরের বড় ভাই অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, যতই দিন যাচ্ছে শহীদ কর্নেল আবু তাহের একজন মহান বিপ্লবী হিসাবে সুপ্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন। আজ বর্তমান প্রজন্মের তরুন-যুবকরা বিপ্লবী কর্নেল তাহেরকে বিপ্লবের প্রতীক হিসাবে গ্রহণ করছে।
Leave a Reply