বাড়ির আঙিনা ও ফসলের ক্ষেত ধন-ধান্যে পুষ্পে ভরে তুলেছেন প্রতিবন্ধী মেহেদী হাসান। কোন প্রতিবন্ধকতাই তাকে থামাতে পারেনি। কাঁচা ধানের পাতার মতো কচি মুখের মায়া তার। সবুজ গাঁয়ের চাষির ছেলে প্রতিবন্ধী মেহেদী আজ সব করেছে জয়। সাতক্ষীরার সকল গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে মেহেদী হাসানের নাম। প্রতিবন্ধী ক্যাটাগরিতে মেহেদী হাসান ১০০% বাক প্রতিবন্ধী ও ৪০% শারীরিক প্রতিবন্ধী। সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার ঘলঘলিয়া গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে তিনি।
বাবা আবুল কাশেম একসময় ছেলেকে বোঝা মনে করলেও এখন মনে করেন ছেলে তার বড় সম্পদ। মেহেদী হাসান শৈশব থেকে গাঁয়ের পথে নানা রকম ফসলের ক্ষেত দেখে বাড়িতে এসে তা লাগানোর চেষ্টা করতো। বর্তমানে সে বাড়ির আঙিনায় গড়ে তুলেছে সবজির ক্ষেত। লাল শাক, পালং শাক, বেগুন, ঝাল (মরিচ), নানা জাতের কপিসহ বিভিন্ন ফসলে বাড়ির আঙিনা ভরে তুলেছেন। লাউ, শিম ও বরবটির মাচান দিয়েছেন। সেই মাচানও ফলে-ফুলে ভরে উঠেছে। শুধু তাই নয়, বিলের আমন-বোরো ধানের ক্ষেতেও সাফল্য আছে তার। বাড়িতে আপন মনে কাজ করে গড়ে তুলেছেন ছোট্ট একটি গরুর খামার। গরুর গোসল দেওয়া ও দুধ দোহনের কাজও করেন মেহেদি হাসান। বাড়ির পুকুরে করেছেন মাছের চাষ। এভাবে নিজের আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে সকলের নজর কেড়েছে প্রতিবন্ধী মেহেদী হাসান। কাজের কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ উপজেলা কৃষি অফিস তাকে সম্মাননাও দিয়েছে। দিয়েছে প্রশিক্ষণ ও উন্নতমানের বীজ।
দেবহাটা উপজেলার দেবহাটা উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাক আহম্মদ বলেন, তিনি দেবহাটা উপজেলার কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তার ব্লক টাউনশ্রীপুর ও ঘলঘলিয়া এলাকায় কাজ করাকালীন মেহেদীর সাথে পরিচয় হয়। মেহেদির পিতা আবুল কাশেম তার ব্লকে সদস্য হিসেবে কাজ করতেন। মেহেদীর গল্প শুনে তাকে প্রশিক্ষণ ও বীজ দিয়ে সহায়তা করা হয়। এতে আরও বেশি সাফল্য পায় মেহেদি। সে আরও উদ্যোগী ও উদ্যমী হয়ে ওঠে। এরপর সে গড়ে তোলে সবজির খামার, ধানের ক্ষেত, মাছের ঘের ও গরুর খামার। মেহেদী এখন স্বাবলম্বী।
দেবহাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরীফ মোহাম্মদ তিতুমীর ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শওকত ওসমান বলেন, মেহেদীকে কৃষি বিভাগের কয়েকটি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে সবজি বীজ, সারসহ বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ করা হয়। কৃষি অফিসার মোস্তাক আহম্মদ মেহেদীকে নিজে ওই সকল বীজগুলো সংরক্ষণ ও ফসল ফলাতে হাতে কলামে কাজ শেখান।
মেহেদির পিতা আবুল কাশেম বলেন, এক সময় মেহেদীর প্রতিবন্ধীতা দেখে খারাপ লাগতো। শারীরিক ও বাক্ প্রতিবন্ধী হওয়ায় সে অনেক কষ্ট পেতো। আজ সেই মেহেদী আমার বড় সম্পদ। অনেকেই তার খামার দেখতে আসে। তখন গর্বে বুকটা ভরে ওঠে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাছলিমা আক্তার বলেন, ঐতিহ্যবাহী উপজেলার প্রতিবন্ধী মেহেদীও আমাদের গৌরব। তিনি মেহেদীর থেকে শিক্ষা নিয়ে সকলকে এই ধরনের কাজ করতে আহবান জানান।
Leave a Reply