1. faysal.ce@gmail.com : dakshinermashal :
  2. abuhasan670934@gmail.com : Hasan :
  3. sakalctc.bd@gmail.com : Nityananda Sarkar : Nityananda Sarkar
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১০ পূর্বাহ্ন
৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১
Latest Posts
📰সাতক্ষীরা দেবহাটায় ছাত্রশিবিরের আন্ত:ওয়ার্ড ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত 📰আশাশুনির গাজীপুর মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এতিমের অর্থ আত্মসাৎ ও নিয়োগ বাণিজ্য রোধের আবেদন📰প্রধান নির্বাচন কমিশনার নাসির উদ্দীন📰আন্দোলনে সাধারণের পক্ষে দাঁড়িয়ে আস্থার প্রতীক হয়েছে সেনাবাহিনী : ড. ইউনূস📰অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা, সাতক্ষীরা সীমান্তে আটক ২📰উপকূলীয় জীবনের সুরক্ষায় সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে বাগেরহাটে মানববন্ধন📰‘উপকূলীয় নারীদের সফলতা ও জ্ঞানের কথা’ শীর্ষক অভিজ্ঞতা সভা📰বর্ণাঢ্য আয়োজনে সপ্তাহ ব্যাপি বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষ মেলার উদ্বোধন📰আশাশুনির বুধহাটা ক্লাস্টারের দুরাবস্থাগ্রস্থ ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাণের ঝুঁকির মধ্যে চলছে ক্লাশ 📰আশাশুনিতে উপজেলা শুমারী  কমিটির সভা অনুষ্ঠিত

আন্তর্জাতিক খাদ্য দিবস : প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ

প্রতিবেদকের নাম :
  • হালনাগাদের সময় : শুক্রবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২০
  • ৫৪৫ সংবাদটি পড়া হয়েছে


ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলার পাশাপাশি স্থুলতা ও অপুষ্টিজনিত জটিলতার বিষয়ে বিশ্বব্যাপী জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৪৫ সাল থেকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা (এফএও) প্রতি বছর ১৬ অক্টোবর বিশ^ খাদ্য দিবস পালন করে আসছে। এই বছর বিশ^ খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে- ‘এৎড়,ি ঘড়ঁৎরংয, ঝঁংঃধরহ. ঞড়মবঃযবৎ’। আমাদের সরকার এই বছর প্রতিপাদ্য ঠিক করেছে, “সবাইকে নিয়ে একসাথে বিকশিত হোন, শরীরের যতড়ব নিন, সুস্থ থাকুন, আমাদের কর্মই আমাদের ভবিষ্যৎ”।
একই সাথে প্রতিবছর ১৫ অক্টোবর আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়। এই বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় হয়েছে “কৃষি ও গ্রামীণ উনড়বয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা এবং গ্রামীণ দারিদ্র্য নিরসনে নৃ-গোষ্ঠীর নারীসহ গ্রামীণ নারীর ভূমিকা ও অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ”। এছাড়া প্রতি বছর ১৭ অক্টোবর বিশ^জুড়ে আন্তজার্তিক দারিদ্র্য নিরসন দিবস পালিত হয়। সেই সাথে প্রতি বছরের এই মাসে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা (এফএও)-র ’খাদ্য নিরাপত্তা কমিটি’ এবং ‘খাদ্য বিষয়ক সিভিল সোসাইটি ম্যাকানিজম’-এর ক্সবশি^ক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
তাই বাংলাদেশের সকল মানুষের জন্য সাং¯‥ৃতিভেদে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বাংলাদেশে খাদ্য অধিকার বিষয়ক আইন প্রণয়নের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার পক্ষে জনমত, আগ্রহ ক্সতরি এবং আইনপ্রণেতা, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনিক পর্যায়ে সংবেদনশীলতা ক্সতরির জন্য অক্টোবর মাসজুড়ে দেশব্যাপী খাদ্য অধিকার প্রচারাভিযান করছে।
খাদ্য অধিকার প্রতিটি মানুষের ক্ষুধা, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং পুষ্টি বিষয়ক অধিকার রক্ষা করে। খাদ্য অধিকার একজন মানুষের অস্তিত্বের সাথে সম্পর্কিত। আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে, নাগরিকের খাদ্য অধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে রাষ্ট্রের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। জাতিসংঘের সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের ২৫ অনুচ্ছেদে এবং অর্থনৈতিক-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তির ১১তম অনুচ্ছেদে খাদ্য অধিকারের স্বীকৃতি রয়েছে। একই সাথে বিশ্বব্যাপী অসংখ্য দেশের সংবিধানে খাদ্য অধিকারের স্বীকৃতি রয়েছে।
সাংবিধানিকভাবে খাদ্যের অধিকার অর্জন এবং জনগণের পুষ্টিমান উনড়বয়নে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাছাড়া বাংলাদেশ বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সদস্য এবং ভিয়েনা ঘোষণা ১৯৯৩, ইকোসোক-সহ বিভিনড়ব আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তিতে সমর্থন প্রদান করেছে। কিন্তু, এখনো বাংলাদেশের সংবিধান ১৫(ক) অনুচ্ছেদে খাদ্যকে জীবনধারণের মৌলিক প্রয়োজন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে মাত্র। যার কারণে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের কোন জায়গায় আবেদন-নিবেদন করার বা দাবি করার মতো কোনো সুযোগ নেই। যদিও দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষি চাহিদা পূরণের জন্য বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ সরকার কৃষিঋণ, কর্মসৃজন কর্মসূচি, দু:স্থভাতাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ও নীতিমালা গ্রহণ করেছে, কিন্তু খাদ্যের অভাবে অমানবিক ও অসহায় অবস্থায় উপনীত হবার পরও কাউকে দায়বদ্ধ করার আনুষ্ঠানিক সুযোগ নেই, যতদিন না খাদ্যকে অধিকার হিসেবে স্বীকার করে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ইতোমধ্যে আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, ব্রাজিল, ইক্যুয়েডর, এল সালভেদর, গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, মেক্সিকো, মোজাম্বিক, নিকারাগুয়া, প্যারাগুয়ে, পেরু, দক্ষিণ আফ্রিকা, তানজানিয়া, উগান্ডা, নেপাল ও ভেনেজুয়েলা ইত্যাদি দেশে খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
জাতিসংঘে গৃহীত টেকসই উনড়বয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)-এর দ্বিতীয় লক্ষ্য হলো, ক্ষুধার সমাপ্তি, খাদ্য নিরাপত্তা ও অধিকতর পুষ্টি অর্জন এবং টেকসই কৃষি প্রবর্তন। এছাড়া লক্ষ্য ৩-এর আওতায় সবার জন্য স্বাস্থ্যকর জীবন, লক্ষ্য ৬-এর আওতায় পানীয় জলের সরবরাহ, লক্ষ্য ১০-এ আভ্যন্তরীণ অসমতা দূরীকরণ,
লক্ষ্য ১২-তে টেকসই উৎপাদন ও ভোগ, লক্ষ্য ১৫-তে স্থলজ প্রতিবেশ ও বন সংরক্ষণ এবং লক্ষ্য ১৬-তে জবাবদিহিতা ও অন্তর্ভূক্তিমূলক প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। এ দলিলে ২০৩০ সালের মধ্যে সব ধরনের ক্ষুধা নির্মূল করা, অপুষ্টি দূর করা, প্রাকৃতিক সম্পদসহ সব সম্পদে ক্ষুদ্র কৃষকদের ন্যায্য প্রবেশাধিকার দেয়া, কর্মসংস্থান ও আয়ের ক্ষেত্রে ক্সবষম্য দূর করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে বিশ্বব্যাপী প্রশংসনীয়। তারপরও বৈশিক বিবেচনায় বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি ঝুঁকির মধ্যেই রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রকাশিত বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা সূচক-২০১৯ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১১৩ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৩ তম। যা, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে তলানিতে। এই সূচক দেশের খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতির পাশাপাশি প্রান্তিক কৃষক ও ভবিষ্যৎ খাদ্য সঙ্কটের চিত্রও তুলে ধরে। ২০১৯ এর সূচক অনুযায়ী, পুষ্টিকর খাদ্যের μয়ক্ষমতা, প্রাপ্যতা ও গুণমানের সমন্বয়ে ১০০ নম্বরের মধ্যে বাংলাদেশের অর্জন ৫৩.২। সামগ্রিকভাবে তা সন্তোষজনক হলেও খাদ্য নিরাপত্তা ও খাদ্য মানে অনেকখানি পিছিয়ে (৩০.৬ পয়েন্ট)১।
বাংলাদেশ যখন এসডিজি’র লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পিছনে ছুটছে, তখন এই দেশেরই খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি অধিকার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী (ডাব্লিউএফপি) এবং বাংলাদেশ সরকার পরিচালিত ‘খাদ্যের সহজলভ্যতা ও μয়ক্ষমতা’ বিষয়ক সমীক্ষায় দেখা যায়, বাংলাদেশের প্রতি ৮ জনের মধ্যে ১ জনের পুষ্টিকর খাবারের μয়ক্ষমতা নেই। শুধুমাত্র সঠিক পুষ্টির অভাবে দেশের ৩১ শতাংশ শিশুর শারীরিক বিকাশ হয় না২। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে মোট খাদ্যেও প্রায় ৩০ ভাগ বিভিনড়বভাবে নষ্ট হয়, যার আর্থিক মূল্য বছরে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। দেশে প্রায় ৪ কোটি মানুষ পুষ্টিহীনতার শিকার এবং প্রায় ৪৪ শতাংশ নারী রক্তস্বল্পতায় ভোগেন। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল দুর্গম এলাকার দলিত, আদিবাসী, বিভিনড়ব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও শহরের নিমড়বআয়ের মানুষের মধ্যে পুষ্টিহীনতা বেশি৩। একটি দেশের খাদ্য নিরাপত্তার প্রথম শর্ত হলো, খাদ্যের জোগানের সাথে সে দেশের জনসাধারণের μয়ক্ষমতার সমন্বয় থাকা। বাংলাদেশ দানাদার খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও সার্বিকভাবে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।
গবেষণা বলছে, করোনার বিপর্যয় ঠেকাতে দেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে লকডাউন থ আয়ের পথ বন্ধ হয়ে দরিদ্র-অতি দরিদ্র মানুষের জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। এই সময়ে দেশে নতুন করে ৩ কোটি ৬৯ লাখ ৪৪ হাজার (২২.৯%) মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে দেশে সবমিলিয়ে ৭ কোটি দরিদ্র মানুষ দারিদ্র্য অবস্থায় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে৪। এশীয় উনড়বয়ন ব্যাংক বলেছিলো, করোনা লকডাউনের লম্বা প্রভাবে চলতি অর্থবছরে ১ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হারাবে বাংলাদেশ এবং চাকরি হারাবে অন্তত: ৯ লাখ মানুষ৫।
দক্ষিণ এশিয়ার উনড়বয়নশীল এই দেশটির অর্থ‣নতিক ভিত্তি মূলত অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের ওপর নির্ভরশীল। দেশের ৮৮ শতাংশ শ্রমশক্তি অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত এবং এর মধ্যে ৮৫ শতাংশ নিয়োজিত কৃষিখাতে। বাংলাদেশের জিডিপির এক তৃতীয়াংশ আসে এই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত থেকে৬। তাই করোনাভাইরাসের সংμমণ রোধে দেশজুড়ে সাধারণ ছুটি ঘোষণার নামে কার্যত লকডাউন করে দেওয়ার ফলে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় এই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত মানুষগুলোবিআইডিএস-এর ধারণা করেছে, করোনার প্রভাবে মার্চের শেষদিক থেকে আগস্ট পর্যন্ত, টানা লকডাউনে বছরের দ্বিতীয় ক্সত্রমাসিকে দেশে ১ কোটি ৬৪ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। শহুরে শ্রমিকের আয় কমেছে ৮০ শতাংশ, গ্রামীণ শ্রমিকের কমেছে ১০ শতাংশ৭ সেই সাথে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বলছে, দেশের পরিবারগুলোর আয় ২০.২৪ শতাংশ কমেছে। তবে খাদ্য নিরাপত্তার দিক থেকে বলতে গেলে, কৃষির ক্ষতি এক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলতে চলেছে। করোনাকালীন কৃষিখাত ও সামগ্রিক খাদ্য নিরাপত্তার প্রভাব নিয়ে ব্র্যাকের একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে পরের দেড় মাসে কৃষি পণ্যের ক্ষতি, কম মূল্য; ইত্যাদির কারণে কৃষকের গড় আর্থিক লোকসানের পরিমাণ প্রায় ২ লাখ ৭ হাজার ৯৭৬ টাকা। সারা দেশের বিবেচনায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৬ হাজার ৫৩৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা৮।
পিআিরসি ও ব্আিই্জিডির হিসাব মতে, করোনাকালীন সময়ে দেশে শহরাঞ্চলে মানুষের ৪৭ শতাংশ ও গ্রামের মানুষের ৩২ শতাংশ খাবারের পরিমাণ কমেছে। সরকারি তথ্য মোতাবেকই দেশের প্রায় পে․নে ৪ কোটি মানুষ (দরিদ্র ২১.৮ শতাংশ) পর্যাপ্ত খাবার গ্রহণ করতে পারতেন না। আর প্রায় ২ কোটির (অতি দরিদ্র ১১.৩ শতাংশ) কাছাকাছি মানুষ পর্যাপ্ত খাবার কেনার জন্য প্রয়োজনীয় আয় করতে পারতেন না। তারমানে, খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্কট আগ থেকেই ছিলো৯। করোনাভাইরাস দুর্যোগ আমাদের এই খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিকে আরও ঘনীভূত এবং দীর্ঘমেয়াদী করবে। দুই হাজার ৬৭৫ জনের ওপর পরিচালিত ব্র্যাকের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা যায়, জরিপকালীন ১৪ ভাগ মানুষের ঘরে কোনো খাবার ছিল না। ২৯ ভাগের ঘরে ছিল এক থেকে তিন দিনের খাবার-এর তথ্য সেই ইঙ্গিতই বহন করছে।
করোনাকালীন লকডাউনে এই খাদ্য সঙ্কট মোকাবেলায় সরকারের গৃহীত নানান পদক্ষেপের মধ্যে ছিল ক্ষতিগ্রস্থদের ২,৫০০ টাকার নগদ অর্থ প্রদান, ১০ কেজি চাল প্রদান, অন্যান্য খাদ্য সামগ্রীর ত্রাণ প্রদান, খাতভিত্তিক প্রণোদনা ইত্যাদি। এইসকল উদ্যোগ লকডাউন চলাকালীন সময়ে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে এবং কার্যকর ভূমিকা পালনা করেছে। তবে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা অভাব, কার্যকারীতা ও সমন্বয়হীনতার ঘাটতি, অনিয়ম ও দুর্নীতি; ইত্যাদি কারণে এই সকল উদ্যোগে বিশৃঙ্খলা এবং সমালোচনাও ক্সতরি করেছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের একটি গবেষণায় দেখা যায়, শতকরা ৮২ শতাংশ এলাকায় সুবিধাভোগীর তালিকা প্রণয়নে রাজ‣নতিক বিবেচনাকে প্রাধাণ্য দেওয়া হয়েছে এবং ৪২ শতাংশ এলাকায় ত্রাণ বিতরণে কোন তালিকা অনুসরণ করা হয়নি। গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ৬০ শতাংশ এলাকায় বিচ্ছিনড়বভাবে ত্রাণ বিতরণের কারণে, ত্রাণ পাওয়ার প্রকৃত উপযুক্ত ব্যক্তিরা ত্রাণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এছাড়া, গবেষণা অন্তর্ভুক্ত এলাকার শতভাগ ক্ষেত্রেই অতি দরিদ্রদের নগদ সহায়তা (২,৫০০ টাকা) প্রদানের ক্ষেত্রে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠে এসেছে। ত্রাণ বিতরণে ২১৮টি দুর্নীতির ঘটনায় মোট ৪ লাখ ৫৯ হাজার ৮৭০ কেজি ত্রাণের চাল উদ্ধার করা হয়েছে১০। পার্বত্য এলাকায় করোনাকালীন ত্রাণ বিতরণে বড় ধরণের অস্বচ্ছতার অভিযোগ রয়েছে। কম প্রত্যন্ত এলাকায় অনেক পরিবার ৩-৪ বার সরকারি খাদ্য সহায়তা পেলেও, বেশি প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে অনেক পরিবার একবারও পাননি।
করোনার মাঝেই ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও দীর্ঘমেয়াদী চার দফা বন্যায় আবারও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কৃষিখাত, যা পুরো দেশের খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে হুমকির মুখে ফেলেছে। ৪৬ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া আম্ফানের কারণে সারা দেশের ১ লাখ ৭৬ হাজার ৭ হেক্টর জমির বিভিনড়ব ফসল নষ্ট হয়। আম্ফানের পরপরই দেশের ৩৭টি জেলায় তিন দফার বন্যায় দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় প্রত্যন্ত অঞ্চল। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, কৃষিতেই ক্ষতির পরিমাণ ১ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ১২ লাখ ৭৩ হাজার কৃষক। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া ফসলি জমির পরিমাণ ২ লাখ ৫৭ হাজার ১৪৮ হেক্টর, যার মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ এক লাখ ৫৮ হাজার ৮১৪ হেক্টর। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩২ হাজার ২১৩ হেক্টর জমির আউশ ধান, ৭০ হাজার ৮২০ হেক্টর জমির আমন ধান এবং ৭ হাজার ৯১৮ হেক্টর জমির আমন বীজতলা১১।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ। আর সেই পরিপ্রেক্ষিতে, সরকারি ত্রাণের এই হিসেব অনুযায়ী এই ৫০ লাখ বন্যা দুর্গত মানুষের জন্য মাথাপিছু বরাদ্দ মাত্র ৩ কেজি চাল। যেখানে বিতরণ করা সম্ভব হয়েছে আড়াই কেজি। অন্যদিকে, মাথাপিছু নগদ অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় সাড়ে ৮ টাকা মাত্র, বিতরণকৃত অর্থের হিসেব ধরলে দাঁড়ায় ৫.৮৯ টাকা১২। শুধু তাই নয়, বন্যা কবলিত এলাকাগুলোর মধ্যে প্রবল খাদ্য সঙ্কট এলাকার চেয়ে তুলনামূলক কম সঙ্কটাপনড়ব এলাকায় বেশি ত্রাণ দেওয়ার অভিযোগ ছিল শুরু থেকেই। যে কারণে এই সময়ে প্রত্যক্ষভাবেভাবে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের মধ্যে খাদ্য সঙ্কট বৃদ্ধি পেয়েছে।
দেশের হত-দরিদ্র এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জন্য সরকার প্রায় ১৩০টির মতো সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি পরিচালনা করলেও করোনা মহামারীর চলকালীন সময়ে দেখা যাচ্ছে সকল মানুষ খাদ্য ও জীবিকা সুরক্ষার জন্য এই জাতীয় কর্মসূচি যথাযথ বাস্তবায়ন হয় না। এছাড়াও করোনাকালীন সৃষ্ট নব দরিদ্র, নিঃস্ব মধ্যবিত্ত, বিদেশফেরত শ্রমিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের বেকারদের জন্য এসএসএসপি’তে কোন নির্দেশনা বা কর্মসূচিও নেই। সেই সাথে, রাষ্ট্র জনগণের খাদ্যপ্রাপ্তির বিষয়টিকে মে․লিক চাহিদা হিসেবে স্বীকার করলেও ‘অধিকার’ হিসেবে গণ্য না করার কারণে খাদ্য নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে গৃহীত পদক্ষেপগুলো সাধারণত দান বা সেবামূলক কর্মসূচি হিসেবে বিবেচিত হয়। সেজন্য সমগ্র বিষয়টিকে ‘অধিকারভিত্তিক’ দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে দেখা প্রয়োজন। অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রের স্বীকৃতি থাকলে বাধ্যবাধকতা ক্সতরি হয় বিধায় ‘খাদ্য অধিকার’র প্রয়োজন রয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে আমরা জনগণের খাদ্যপ্রাপ্তির বিষয়টিকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি এবং সকল মানুষের জন্য ১. খাদ্য প্রাপ্যতা (Availability), ২. স্থিতিশীলতা (Stability), ৩. অভিগম্যতা (Accessibility), ৪. স্থায়িত্বশীলতা (Sustainability) ও ৫. পর্যাপ্ততা (Adequacy) নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা আইন’ প্রবর্তনের নিমিত্তে সকলের সμিয় অংশগ্রহণ ও ভূমিকা প্রত্যাশা করি। আমরা দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য খাদ্য, পুষ্টি এবং জীবিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত ২০১৫ সালের ৩০ মে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খাদ্য অধিকার বিষয়ক আইন প্রণয়নের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের দাবি জানাই।
আমরা মনে করি, খাদ্য প্রত্যেক মানুষের প্রাথমিক ও প্রধানতম অধিকার। খাদ্য অধিকার পূরণ না হলে মানুষের অস্তিত্বই বিপন্নব হয়ে পড়ে। তাই জনগণের খাদ্য প্রাপ্তিকে রাষ্ট্র দান বা সেবামূলক কর্মসূচি পরিবর্তে অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিবে এবং এই সকল নাগরিকের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খাদ্য অধিকার প্রণয়ন করা দাবি জানাই।
খাদ্য অধিকার নেটওয়ার্ক-খানির সৌজন্যে

আপনার সামাজিক মিডিয়ায় এই পোস্ট শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর :
© All rights reserved © 2024
প্রযুক্তি সহায়তায়: csoftbd