দেবহাটা সংবাদদাতা: হিন্দু ধর্মের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গাপূজার সোমবার ছিল বিসর্জনের দিন। সেই উপলক্ষ্যে দেবহাটার ইছামতি নদীতে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হলো বিজয়া দশমী। এবছর নদীতে কোন নৌকা না চললেও সীমান্ত পারে দাড়িয়ে ছিল অসংখ্যা মানুষ। তবে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত পারে কিছু নৌকা দেখা মিললেও তার ছিল খুবই সীমিত এবং কোন নৌকা নিজেদের সীমারেখা অতিক্রম করতে পারেনি। আর এজন্য ছিল বিজিবি ও বিএসএফের কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী। তবে উভয় দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারনে বিজয়া দশমীতে কিছুটা ম্লান ভাব লক্ষ্য করা গেছে।
কয়েকজন জানান, দেশ বিভাগের অনেক আগে থেকেই বিজয়া দশমীতে উভয় পারের মানুষেরা আয়োজন করে আসছিল মিলনমেলার। দেশ বিভাগের পরেও বাধা হয়ে দাড়ায়নি ইছামতি নদীর এই জলসীমা রেখা। বিভিন্ন সময়ে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বন্ধ হয়নি মিলনমেলা। প্রতিবছর শুধুমাত্র উভয় পারের মানুষ নয়, বরং বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন মানুষ এই এলাকায় হাজির হতো শুধুমাত্র ভেদাভেদ ভুলে দিনটিতে আনন্দ উপভোগ করার মানষে। উভয় দেশের মানুষ আত্মীয় স্বজনদের সাথে দেখা করে কিছুটা শান্তি নিয়ে ফিরে যেতো আপন আপন ঠিকানায়। কিন্তু এবারের মিলনমেলায় ছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যার কারনে এক দেশের মানুষ অন্য দেশে যেতে যাওয়াতো দুরে থাক কোন নৌকাও ইছামতি নদীতে নামতে পারেনি। করোনা পরিস্থিতিসহ সীমান্ত সুরক্ষার স্বার্থে এই নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্র জানায়।
গত ২৩ অক্টোবর ২০২০ ইং তারিখ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০ টায় দেবহাটার টাউনশ্রীপুরস্থ ইছামতি নদীর মাঝ বরাবর বাংলাদেশ-ভারত উভয় দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মধ্যে এক পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে দেবহাটার টাউনশ্রীপুর বিজিবির সুবেদার সাহেব আলী, দেবহাটা থানার এসআই মিজানুর রহমান, ভারতের পক্ষে সোদপুর ৮৫ বিএসএফ ক্যাম্পের এসিসট্যান্ট কমান্ডার নিরাশ দাশ, টাকি পৌরসভার মেয়র সোমনাথ মূখার্জী, পুলিশের ডিএসপি মোহতা সিং আকতার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উক্ত বৈঠকে প্রতিমা বিসর্জন ছাড়া কোন নৌকা নদীতে নামতে না দেয়া, কোন নৌকা সীমানা অতিক্রম না করাসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। সেইজন্য ইছামতি নদীর মাঝ বরাবর ছিল বিজিবি ও বিএসএফের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও কঠোর নজরদারী। ভারতের টাকী আর বাংলাদেশের দেবহাটার মাঝ বরাবর ইছামতি নদীর ৫ থেকে ৬ কিঃমিঃ এলাকায় সীমান্ত। সূত্র মতে, উপজেলার টাউনশ্রীপুর সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় দূর্গা পূজার বিজয়া দশমীর দিনে দুই দেশের মানুষের মিলনমেলা বসে আসছে দীর্ঘকাল ধরে। এসময় অবাধে এক দেশের মানুষ অন্য দেশে যেতে পারতো। আর এই সুযোগে কতিপয় সুযোগ সন্ধানী দুষ্কৃতকারী চোরাচালান, হুন্ডি ব্যবসা, জাল টাকার ব্যবসা, মানুষ পাচার সহ নানারকম অপরাধ কর্মকান্ড ঘটাতো। এছাড়া গত ৫/৬ বছর আগে এক মর্মান্তিক নৌকা দূর্ঘটনায় ভারতের কলকাতার যাদবপুর ইন্ডিয়ান ইনষ্টিটিউিট অব ক্যামিক্যাল বায়োলজির জুনিয়র রিসার্স ফেলো সুজয় দাশ (২৮) মৃত্যুবরন করেন। এ ঘটনায় সেসময় ভারতের মিডিয়ায় মিলনমেলা সম্পর্কে অনেক নেতিবাচক কথা তুলে ধরা হয়। সেজন্য সব দিক বিশ্লেষন করে গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের পক্ষ থেকে সকল ধরনের বিশৃঙ্খলা ও অপরাধ নির্মূলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়।
Leave a Reply