২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের স্মরণে আজ (২১ আগস্ট ২০২০) একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এক অনলাইন আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক ও প্রামাণ্যচিত্রনির্মাতা শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে আলোচ্য বিষয় ছিল ’১৫ ও ২১ আগস্টের ঘাতকদের অভিন্ন রাজনীতি ও উদ্দেশ্য: সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়।’
সম্মেলনের আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ, নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, সমাজকর্মী আরমা দত্ত এমপি, অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব, ব্যারিস্টার ডঃ তুরিন আফরোজ, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক লেখক মারুফ রসুল, কেন্দ্রীয় নেতা লেখক সাংবাদিক সাব্বির খান (সুইডেন), সমাজকর্মী স্বীকৃতি বড়ুয়া (যুক্তরাষ্ট্র), প্রামাণ্যচিত্রনির্মাতা প্রকাশ রায় (ফ্রান্স), অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট অমি রহমান পিয়াল (সুইজারল্যাণ্ড), সর্ব ইউরোপীয় নির্মূল কমিটির সভাপতি তরুণ কান্তি চৌধুরী, মাহফুজুর রহমান (যুক্তরাষ্ট্র), ডঃ একরাম চৌধুরী (অস্ট্রেলিয়া), ডঃ মুজিবুর দপ্তরি (ফিনল্যান্ড), নির্মূল কমিটির তুরস্ক শাখার সাধারণ সম্পাদক শাকিল রেজা ইফতি, পশ্চিমবঙ্গ শাখার সাধারণ সম্পাদক বিদ্যুৎ দেবনাথ এবং দেশের বিভিন্ন জেলার নেতৃবৃন্দ।
সভাপতির ভাষণে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধকালে যে রাজনীতি ইসলামের নামে স্মরণকালের নৃশংসতম গণহত্যাকে বৈধতা দিয়েছিল, বঙ্গবন্ধুর সরকার সাংবিধানিকভাবে যে রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন, সেই মওদুদিবাদী, ওহাবিবাদী রাজনীতির ধারকরাই ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের সকল সদস্য ও ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধাদের হত্যা করে ’৭১-এর পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাদীপ্ত বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতো মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক, সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করা। ধর্মের পবিত্রতা রক্ষা এবং ধর্মের নামে যাবতীয় সন্ত্রাস, হত্যা ও নির্যাতন নির্মূল করার জন্য বঙ্গবন্ধুর সরকার বাংলাদেশের মূল সংবিধানে ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাবার জন্য পাকিস্তানপ্রেমী জামায়াতে ইসলামী ও তাদের মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সহযোগীদের রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর ’৭২-এর সংবিধান চেতনাগতভাবে পুনঃপ্রবর্তন করা না হলে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অনুসারী ভিন্নমত, ভিন্নধর্ম ও ভিন্ন জীবনাধারার অনুসারীদের হত্যা ও সন্ত্রাস কখনও বন্ধ করা যাবে না।’
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়া যেমন ১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য নায়ক একইভাবে তার সহধর্মিনী খালেদা জিয়া ২১ আগস্টের গ্রেণেড বোমা হামলার নেপথ্য নায়িকা। বাংলাদেশের ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের এই দুই প্রধান খলনায়ক ও খলনায়িকাকে অবশ্যই বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। নইলে বাংলাদেশে ধর্মের নামে হত্যা যেমন অব্যাহত থাকবে একইভাবে আইনের শাসনও প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।’
জেনারেল আবদুর রশীদ বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে জঙ্গী মৌলবাদী সন্ত্রাস দমনে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট সাফল্য প্রদর্শন করলেও এই সন্ত্রাসের দর্শন ও রাজনীতি মোকাবেলার ক্ষেত্রে তেমন কোনও উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে জঙ্গী মৌলবাদী সন্ত্রাস থেকে মুক্ত করতে হলে সরকার ও নাগরিক সমাজকে সম্মিলিতভাবে সমন্বিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
সভায় অন্যান্য বক্তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে অবিলম্বে বাংলাদেশের মূল সংবিধান থেকে সাম্প্রদায়িকতার যাবতীয় কলঙ্ক মুছে ফেলার জন্য আইন প্রণেতা এবং সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি আহ্বান জানান।
Leave a Reply