আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে স্বাস্থ্যবিধির নজিরবিহীন সুরক্ষাব্যবস্থার মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে পবিত্র হজ। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আরাফাতের ময়দানে হজ পালনে জড়ো হন অনুমোদন পাওয়া ভাগ্যবান হজযাত্রীরা। মহান আলস্নাহর কাছে নিজের উপস্থিতির জানান দিয়ে তারা পাপমুক্তির ধ্বনি তুলেছেন ‘লাব্বাইক, আলস্নাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান্নি’মাতা লাকা ওয়ালমুল্?ক’ (আমি হাজির, হে আলস্নাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার)।’
আজ শুক্রবার জামারাতে পাথর নিক্ষেপ ও পশু কোরবানির পর পুরুষরা মাথা মুন্ডন করে ইহরাম ত্যাগ করেছেন। এরপর পবিত্র কাবা শরিফ তাওয়াফের মধ্যে দিয়ে হজের পূর্ণ আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে।
এদিকে হজের মূল আনুষ্ঠনিকতা পালনে গতকাল সৌদির স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টায় হজের খুতবা শুরু করেন খতিব শায়খ আবদুলস্নাহ বিন সোলায়মান আল মানিয়া। খুতবার শুরুতে তিনি আলস্নাহ তায়ালার প্রশংসা ও হজরত মুহাম্মদ (সা.) ওপর দরুদ পাঠ করেন। খুতবায় তিনি বৈশ্বিক মহামারি থেকে মুক্তি, গোনাহ মাফ, আলস্নাহর রহমত কামনাসহ সমসাময়িক প্রসঙ্গ নিয়ে নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। খুতবায় মানুষের অধিকার, বিশেষ করে নারীর অধিকার ও উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টনের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন শায়খ মানিয়া। সেই সঙ্গে ওয়াদাপালন, মা-বাবার সেবা, সৎ কাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ, মানবসেবা, রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষায় নাগরিকদের সচেতন হওয়ার কথা বলেন।
শায়খ মানিয়া খুতবায় কোরআনে কারিমের বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে মানুষকে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ অনুসারী হওয়ার আহ্বান জানান। ইবাদত-বন্দেগির বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেন। আরাফাতের ময়দানে করণীয়সহ হজের পরবর্তী বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন। নামাজ, পবিত্রতা অর্জন, রোগীর সেবা, মহামারি উপদ্রম্নত এলাকায় প্রবেশ না করা এবং ওইসব এলাকা থেকে অন্যত্র না যাওয়ার কথা বলেন।
লিখিত খুতবায় তিনি বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে সৌদি সরকারের গৃহীত হজের সিদ্ধান্তের বিষয়ে কথা বলেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, খুব দ্রম্নত বৈশ্বিক এই মহামারি কেটে যাবে। আবার আগের মতো হজ ও উমরা যাত্রীদের আগমনে মুখরিত হবে পবিত্র এই ভূমি।
৩০ মিনিটব্যাপী খুতবার শেষাংশে সৌদি সরকারের জন্য দোয়া করেন, সেই সঙ্গে বিশ্বে শান্তি, সমৃদ্ধি কামনা করেন শায়খ মানিয়া। রোগ মুক্তির জন্য দোয়া করেন। করোনাকে মহামারি উলেস্নখ করে, এর থেকে বিশ্ববাসীর হেফাজতের জন্য দোয়া করেন। সর্বাবস্থায় আলস্নাহর দরবারে যাবতীয় সমস্যার জন্য বেশি বেশি দোয়া করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
খুতবা শেষে জোহরের নামাজের আজান দেওয়া হয়। আজান দেন মসজিদে হারামের মুয়াজ্জিন শায়খ ইমাদ বিন আলি ইসমাইল। এর পর খতিব উপস্থিত হাজিদের নিয়ে দুই ইকামতে জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করেন।
গত ২৮ জুলাই সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ এক রাজকীয় ফরমানে শায়খ আবদুলস্নাহ বিন সোলায়মান আল মানিয়াকে হজের খতিব নিয়োগ দেন। তিনি হলেন সবচেয়ে বেশি বয়স্ক হজের খতিব।
হজের অন্যতম ফরজ হলো ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা। আরাফাতের ময়দানে হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। সেই রীতি অনুযায়ী প্রতি বছর ৯ জিলহজ আরাফাত ময়দানে হজের খুতবা দেওয়া হয়।
এ বছর পবিত্র হজের আরবি খুতবা অন্যান্য ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষায়ও অনুবাদ করে সম্প্রচার করা হয়। দুটি সম্প্রচার মাধ্যমে হজের খুতবা ১০টি ভাষায় অনুবাদ করে প্রচার করা হয়। বাংলা ছাড়াও বাকি নয়টি ভাষা হলো- ইংরেজি, মালয়, উর্দু, ফার্সি, ফ্রেঞ্চ, মান্দারিন, তুর্কি, রুশ ও হাবশি। ২০১৯ সালের হজে পাঁচ ভাষায় খুতবার অনুবাদ প্রচারিত হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, প্রতিবছর হজে লাখ লাখ ইসলাম ধর্মাবলম্বী যোগ দিলেও এবারের পরিস্থিতি আলাদা। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে কেবল সৌদি আরবে অবস্থানরত নির্বাচিত ব্যক্তিরাই সুযোগ পেয়েছেন। তারপরও ভাইরাসটি থেকে সুরক্ষায় হজের সময়ে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে সৌদি সরকার। এবারের হজে অংশ নেওয়া হাজিরা করোনাভাইরাসের মধ্যে হজ ব্যবস্থাপনা সন্তোষ প্রকাশ করেছে। সীমিত পরিসরের এ হজে অংশগ্রহণ করতে পেরে তারা নিজেদের ভাগ্যবান মনে করছেন।
Leave a Reply