সংবাদ বিজ্ঞপ্তি: শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সদ্য প্রয়াত বীরমুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের সরদার ও ১৯৯৮ সালে নিহত ভূমিহীন নেত্রী জায়েদার শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২৫ জুলাই) সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আনিসুর রহিম।
স্মরণ সভায় ভূমিহীন আন্দোলনের নেত্রী শহীদ জায়েদা, ভূমিহীন আন্দোলনের নেতা সাইফুল্লাহ লস্কর, এড. আব্দুর রহিম, কাজী সাইদুর রহমান, এড. ফিরোজ আহমেদ, আশরাফ-উল-আলম টুটু, সদ্য প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের সরদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক সোনা, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলফাজ উদ্দীন, সাংবাদিক মহসীন হোসেন বাবলুসহ নাগরিক নেতাদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আয়োজনে অস্থায়ী কার্যালয়ে এ স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় বক্তারা, ১৯৯৮ সালে রক্তক্ষয়ী ভূমিহীন আন্দোলন সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করেন। বক্তারা বলেন, এর আগেও খাসজমি নিয়ে সাতক্ষীরায় ঘটে নানান ঘটনা। ১৯৮৮ সালে সাতক্ষীরার বাঁকাল এলাকায় সরকারি খাসজমির ওপর নিরঙ্কুশ দখল প্রতিষ্ঠার জন্য ওই জমিতে বসবাসকারী ভূমিহীনদের বসতিতে দিনের বেলায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনার পর ভূমিহীনরা খাসজমিতে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে আরও সোচ্চার হয়। তারা খাসজমি তাদেরকে স্থায়ী বরাদ্দ দেওয়ার দাবি তোলে। ১৯৯৮ সালের মে মাস থেকে শুরু হয় দেবহাটা-কালীগঞ্জে ভূমিহীনদের ওপর ভূমিদস্যুদের হামলা, নির্যাতন ও উচ্ছেদ। ২৭ জুলাই ভূমিহীনদের ওপর ভূমিদস্যু ও পুলিশের গুলিবর্ষণে নিহত হন ভূমিহীন জায়েদা।
এই দুটি হত্যাকান্ডের পর সাতক্ষীরাসহ দেশজুড়ে ভূমিহীনদের খাসজমির লড়াই ব্যাপকতর হয়। এটি জাতীয় ইস্যুতে রূপ নেয়। সব রাজনৈতিক দলের প্রধান সেই সময়ে ভূমিহীনদের মাঝে খাসজমি বিতরণসহ আট দফা দাবির সমর্থনে সাতক্ষীরায় এসে একাত্বতা ঘোষণা করেন। এমনকি সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাও সাতক্ষীরায় এসে ভূমিহীনদের দাবীর প্রতি ইতিবাচক ঘোষণা প্রদান করেন। কিন্তু তারপরও জমির শ্রেণি পরিবর্তন ও নানা ধরনের প্রশাসনিক জটিলতায় ভূমিহীনদের দাবী অনুযায়ী বহু ভূমিহীন আজও জমি পায়নি।
বক্তারা বলেন, ভূমিহীন আন্দোলনের প্রথম শহীদ হন বাঁকাল ইসলামপুরের সাবুর আলীর ছয় মাসের শিশু পুত্র শফিকুল ইসলাম। তাকে দোলনায় ঘুমিয়ে রেখে তার মা পাশে পানি আনতে গেলে ভূমিদস্যুরা বাড়িতে অগ্নি সংযোগ করে। সেই আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে যায় অবুঝ শিশু শফিকুল ইসলাম। এরপর ভূমিহীন আন্দোলন করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন ২২ জন নেতাকর্মী। আহত হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। মিথ্যা মামলায় জেল খেটেছেন অনেক নেতা।
বক্তারা জেলা নাগরিক কমিটির ব্যানারে ২১ দফা দাবি আদায়ের সংগ্রামে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে আরও বলেন, যাদের ঘর বাঁধবো বলে ঘর ছেড়েছি তাদের ঘর না বেঁধে আমরা ঘরে ফিরবো না। নাগরিক ও সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে যারা ছড়িয়ে গেছেন সংগ্রামী চেতনা, ন্যায় সঙ্গত আন্দোলনে আলোকিত সেই চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার এখনই সময়।
সভায় বক্তব্য রাখেন নাগরিক নেতা আবুল কালাম আজাদ, এড. আজাদ হোসেন বেলাল, আশেক-ই-এলাহী, শেখ ওবায়দুস সুলতান বাবলু, সুধাংশু শেখর সরকার, মুক্তিযোদ্ধা কাজেম আলী, আনোয়ার জাহিদ তপন, নিত্যানন্দ সরকার, আবুল হোসেন, প্রভাষক ইদ্রিস আলী, শেখ সিদ্দিকুর রহমান, গাজী শাহজাহান সিরাজ, আব্দুস সাত্তার, অধ্যাপক তপন শীল, এড. মুনির উদ্দীন, এড. আল মাহমুদ পলাশ, এসএম শহীদুল ইসলাম, অপরেশ পাল, সাখাওয়াতউল্যাহ প্রমুখ। সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম-সচিব আলী নূর খান বাবুল।
Leave a Reply