আশাশুনি প্রতিনিধি: গত ২০ মে আশাশুনি উপজেলায় আঘাত হেনেছিল ঘূর্ণিঝড় আম্পান। ওই সময় ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ধাক্কায় পানিতে তলিয়ে যায় উপজেলার বেশ কিছু এলাকা। তেমনই এলাকা হচ্ছে প্রতাপনগর ইউনিয়ন। আম্পানের ৪২ দিন পেরিয়ে গেলেও প্রতাপনগর ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম এখনো পানিতে তলিয়ে রয়েছে। কয়েকটি এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে পানির সঙ্গে বসবাস করা মানুষের চরম দুর্ভোগের চিত্র। শুক্রবার প্রতাপনগর ইউনিয়নের প্রতাপনগর, কুড়িকাহুনিয়া, শ্রীপুরসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে ও মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, ঘরবাড়ি, গাছগাছালি, রাস্তাঘাট, ফসলি জমি, চিংড়ীঘের, পুকুর, পানির আধার সবকিছুই নিশ্চিহ্ন করে উপকূলবাসীকে নিঃস্ব করে দিয়েছে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। গৃহহীন জনসাধারন কবে বাড়িতে ফিরে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে, তা কেউ বলতে পারে না। ঘূর্ণিঝড় আইলার ক্ষত এখনো শুকায়নি, এর ধারাবাহিকতায় আম্পানের হামলায় দিশেহারা মানুষ। জনসাধারণ জানান, গত ২০ মে-’২০ আম্পানে জলোচ্ছ্বাসের পর প্রতাপনগর ইউনিয়নের ১৭টি গ্রামের সবকটি গ্রাম কমবেশি এখনো পানিতে ডুবে আছে। জোয়ার-ভাটা খেলছে ১১টি গ্রামের ওপর দিয়ে দিনে দুবার করে। কাঁচা ঘরবাড়ি একটিও দাঁড়িয়ে নেই।শ্রীপুর গ্রামে ট্রলারে করে যাওয়ার সময় কোনটি খাল, কোনটি নদী, কোনটি মাছের ঘের আর কোনটি ফসলের ক্ষেত, তা বোঝার উপায় ছিল না। সবই পানিতে একাকার প্রতাপনগর পাকা সেতুটি ভেঙে পড়ে রয়েছে। একই অবস্থা কুড়িকাহুনিয়া, শ্রীপুর, সনাতনকাটি, বন্যাতলা, হরিষখালী, চাকলা, কোলা, প্রতাপনগর, রুইয়ারবিল দিঘলারআইট সহ গ্রামের পর গ্রাম। প্রতাপনগর ইউনিয়নের পশ্চিমে খোলপেটুয়া নদী আর পূর্বে কপোতাক্ষ নদের মাঝখানে গ্রমগুলো জোয়ারের পানিতে ডুবছে আর ভাসছে। একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী নাকনা গ্রামের সাহানারা খাতুন বলেন, বাঁধ ভেঙে গেলে এলাকায় বড় কর্তাব্যক্তিরা এসে প্রতিবারই বলে যান টেকসই বাঁধ হবে। কোনো সমস্যা থাকবে না। আম্পানের আগে গত দুই মাসে তিনবার বাঁধ ভেঙে অনেকেই গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। ত্রাণের চেয়ে আগে দ্রুত বাঁধ তৈরির ব্যবস্থা না করলে তাঁদের ঠিকানা পরিচয় সব হারিয়ে যাবে। শ্রিপুর গ্রামের আবুল কাশেম মোড়ল বলেন, কপোতাক্ষ নদের পাড়ে মাটির ঘর বেঁধে বাস করতেন তিনি। ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলার আঘাতে ভেঙে তছনছ হয়ে যায় তাঁর বসতঘর। আইলার পর বেড়িবাঁধ ভেঙে ভেসে যায় গ্রামের পর গ্রাম। নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। আইলার সেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই আম্পানের আঘাতে আবার তাঁরা জর্জরিত। বেড়িবাঁধ ভেঙেছে, ঘর ভেসেছে, উড়ে গেছে ঘরের চাল। নিত্য প্রয়াজনীয় জিনিসপত্র সব ভেসে গেছে পানির ¯্রােতে। থাকার জায়গা নেই, খাওয়ার পানি নেই, খাবার নেই। স্যানিটেশন ব্যবস্থা একেবারেই নেই। শ্রীপুর গ্রামের আবুল কাশেম মোড়ল ও জুলফিকার মোল্যা বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বেশ কিছুদিন তাঁদের রোজগার বন্ধ। তারপর আম্পানের জলোচ্ছ্বাসে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও নেই। তাঁরা আশ্রয়
নিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের ওপর। কবে বাড়ি ফিরতে পারবেন, তা অনিশ্চিত। বললেন, দ্রুত বাঁধ তৈরির ব্যবস্থা হলে সবাই বাঁচবেন। প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন জানান, এ ইউনিয়নের জনসংখ্যা প্রায় ৩৬ হাজার। ২০০৯ সালে আইলার পর থেকে মাটিতে শক্তি কমে গেছে। ফলে বেড়িবাঁধ টেকসই হচ্ছে না। আইলার পর থেকে প্রায় ৫০০ পরিবার চাকলার উঁচু বাঁধের ওপর বসবাস করছে। তাদের সেই ঠিকানাও নিশ্চিহ্ন হয়েছে আম্পানে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১০ স্থান দিয়ে এ ইউনিয়নে পানি ঢুকছিল। ইতিমধ্যে চাকলায় স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁধ হয়েছে। তবে তা রক্ষণাবেক্ষণ করতে না পারলে আগামীতে ভেঙে যেতে পারে। তিনি জানান, হরিষখালীতে বাঁধের একটি স্থানের মেরামতের চেষ্টা চলছে। সাত আট স্থান দিয়ে জোয়ারের সময় পানি ঢুকে গ্রামের পর গ্রাম প্ল¬াবিত হচ্ছে। আর কত দিন এভাবে ভাসতে হবে আর ডুবতে হবে তা অজানা। সবার আগে টেকসই স্থায়ী বেড়িবাঁধ চান গ্রামবাসী। আশাশুনি উপজেলার দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৗশলী নাহিদুর ইসলাম জানান, কুড়িকাহুনিয়ার বাঁধ নির্মাণ করবে সেনাবাহিনী। আর হরিষখালীর দুটি স্থানে ঠিকাদার কাজ করছে। আর একটি স্থানে ঠিকাদারের সহযোগিতায় স্থানীয় লোকজন রিং বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করছে। সর্বোপরি এ অঞ্চলের মানুষ টেকসই বেড়ীবাধ এর দাবী জানান।
Leave a Reply