আজ ইতিহাসের কালো দিন। কর্নেল তাহের হত্যা দিবস। জাতীয় বীর, সেক্টর কমান্ডার বীর উত্তম কর্নেল আবু তাহের কে পাকিস্তান ফেরত অফিসারদের তুষ্ট করতে আগে থেকেই নির্দ্ধারিত মিথ্যা মামলায় ফাঁসি দেওয়া হয়। পৃথিবীর সকল মূল্যবোধ কে বির্সজন দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে বিশ^াস ঘাতক জিয়া সাজানো আদালতে ১৭ জুলাই ফাসির রায় ঘোষনা দিয়ে ২১ জুলাই রায় কার্যকর করেন। পৃথিবীর কোন সমর নায়ক জিয়ায়মত এত হিং¯্র কাজ করেছে কিনা সেটি ইতিহাস সাক্ষ্য যে, রায় ঘোষনার ৩ দিন পরেই কার্যকর করার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন । মামলার প্রধান বাদী রায় শুনে মন্তব্য করেন ‘‘ ১৯৭৬ সালের ১৭ জুলাই প্রহসন মূলক মামলায় তাহেরের বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়।কর্নেল তাহেরের বিরুদ্ধে প্রহসনমুলক মামলার প্রধান অভিযোগকারী কর্মকর্তা বা প্রসিকিউটার ছিলেন এ টি এম আফজাল। তিনি তাহেরের মৃত্যুদন্ডের রায় শুনে নিজেই সবচেয়ে বেশী অবাক হন। তিনি একজন প্রসেকিউটর হিসাবে কখনও মৃত্যুদন্ড দাবী করেন নি। তার মতে এ রকম একটা সিদ্ধান্ত ছিল সম্পূর্ণ অবাস্তব। কারণ তাহেরকে যে অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয় তার জন্য তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া সম্ভব ছিল না- দেশে সে ধরনের কোন আইনই ছিল না। তাহেরের ফাঁসির আদেশ কার্যকরের দশদিন দিন পর আইন মন্ত্রণালয় আইনের ২০ তম সংশোধনী ধারা জারী করে এই আইনগত অসংগতি দুর করে।’ যা থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত তথাকথিত বিচারের নামে এক ঐতিহাসিক অবিচারের মাধ্যমে বিপ্লবী কর্নেল তাহেরকে পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয়েছে।
এ মামলা প্রসংগে পরবর্তিতে ঘোষিত রায়ে আদালত বলেন. ‘কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদন্ড ঠান্ডা মাথায় খুন’। আদালত রায়ে উল্লেখ করে, ‘ এ মামলার সবচেয়ে উল্লেখ যোগ্য দিক হচ্ছে আর্ন্তজাতিক খ্যাতি সম্পন্ন সাংবাদিক মি. লরেন্স লিফসুলৎজের সাক্ষ্য ও বিএনপি নেতা ব্যরিস্টার মওদুদ আহমদেও লিখিত বইয়ে এ বিচার (সামরিক আদালতের বিচার) নিয়ে লেখা বিবেচনায় আনা। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ তার ‘ডেমোক্র্যাসি এন্ড চ্যালেঞ্জ অব ডেভেলপসেন্ট: এ স্টাডি অব পলিটিক্যাল এন্ড মিলিটারী ইন্টারভেশন ইন বাংলাদেশ’ বইয়ে অত্যান্ত প্রাঞ্জল ভাষায় ব্যক্ত করেছেন, এই বিচারের ট্রাইব্যুনাল গঠনের অনেক আগেই জেনারেল জিয়াউর রহমান পাকিস্তান ফেরত সামরিক অফিসারদেও তুষ্ট করার জন্য কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দেওয়ার মনোস্থিও করেছিলেন। জেনারেল মজ্ঞুরের উদ্ধৃতি দিয়ে মার্কিন সাংবাদিক লিফসুলৎজ একই বক্তব্য তার সাক্ষ্যে প্রতিধ্বনিত করেন। ’ রায়ে আরো উল্লেখ করা হয়, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ জেনারেল জিয়ার অতিঘনিষ্টজন ছিলেন। এই মাসলার শুনানীর এক পর্যায়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ আদালত কক্ষে প্রবেশ করেন। পওে আদালত তার লেখার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি স্বীকার করেন যে, এই বক্তব্য তিনি সরাসরি জেনারেল জিয়ার মুখ থেকে শুনেছেন।’ এছাড়া তৎকালিন ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ড. এম এম শওকত আলীর এবং প্রখ্যাত সাংবাদিক সৈয়দ বদরুল আহসানের লিখিত দাবীসহ উপস্থিত সিনিয়র আইনজীবীদেও মতামতের ভিত্তিতে আদালত এই সিন্ধান্তে এসেছে যে, কর্নেল তাহের বীর উত্তমের মৃত্যুর মূল আসামি জেনারেল জিয়াউর রহমান।’
জাতী আজ তার শেষ্ঠ সন্তানকে জাতীয় বীরের মর্যাদায়ে আসিন করে যথাযত সম্মানের মাধ্যমে স্মরন করছে। আর আদালতের রায়ে হত্যাকারী জেনারেল জিয়া একজন ঠান্ডা মাথার খুনি হিসেবে স্বীকৃতি প্রাপ্ত ।
Leave a Reply