বিশেষ প্রতিবেদক: জেলার ক্লিনিক ও ডায়াগনিস্টিক স্টেন্টারগুলোর অনুমোদন নবায়ন না করায় রাষ্ট্র বঞ্চিত হতে চলেছে কোটি টাকার উর্দ্ধের রাজস্ব থেকে। সরকারী বিধি বা অনুমোদনের শর্ত ভঙ্গ করে বিনা অনুমোদনে গত তিন বছর ধরে চলছে সাতক্ষীরার ক্লিনিক ও ডায়াগনিস্টিক স্টেন্টার সমুহ।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে প্রকাশ, গত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ডায়াগনিষ্টিক সেন্টার জেলা পর্যায়ের এ ক্যাটাগরী ১ টি ৪০ হাজার টাকা, বি ক্যাটাগরীর ৪ টি ১ লক্ষ টাকা ও জেলা পর্যায়ের সি ক্যাটাগরী ২৩ টি ৪ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা, উপজেলা পর্যায়ে সি ক্যাটাগরী ১৬ টি ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সি ক্যাটাগরী ৫৩ টি মালিকরা তাদের প্রতিষ্ঠান নবায়ন না করায় ৭ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ১৬ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা উক্ত অর্থবছরে রাজস্ব প্রদান করে না। এ ছাড়া ক্লিনিক পর্যায়ে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে জেলা পর্যায়ে মাত্র ১ টি ক্লিনিক মালিক লাইন্সেস নবায়ন করে কিন্তু ৩৭ টি নবায়ন না করায় প্রায় ১৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা এবং উপজেলা পর্যায়ের প্রায় ৪৪ টি ক্লিনিকের মালিকরা ১১ লক্ষ টাকা সহ সর্বমোট ২৫ লক্ষ ৮০ হাজার টাকার রাজস্ব ফাঁকির কর প্রদান কওে না।
সাতক্ষীরার চলমান ৯৭ টি ডায়গোস্টিক সেন্টারের মধ্যে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৪৪টি প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন সনদ পায়। বাকি ৫৩ টি প্রতিষ্ঠান বিনাা নবায়নে কার্যক্রম চালু রাখে। ফলে রাষ্ট্রকে কয়েক লক্ষ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয় ও বিধি ভংগ করে ডায়গোনেস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম চলমান রাখে। একই ভাবে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ক্লিনিক পর্যায়ে চলমান প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যে জেলার পর্যায়ের বেসরকারি ১৬ টি ও উপজেলা পর্যায়ে ১২ টি ক্লিনিকের মালিকরা তাদের প্রতিষ্ঠানের লাইন্সেস নবায়নের জন্য অনলাইনে আবেদন করেছিলেন। এরমধ্যে ৪টি ক্লিনিককে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ হতে শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় নবায়ন সনদ দেয়া হয় না। আর এ কারনে রাষ্ট্র বঞ্চিত হয় জেলা পর্যায়ের প্রায় ১০ টি ক্লিনিক বাবদ ৪ লক্ষ টাকা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রায় ৪৪ টি ক্লিনিক থেকে ১১ লক্ষ টাকা সহ সর্বমোট ১৫ লক্ষ টাকার রাজস্ব।
সুত্রে আরো প্রকাশ, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে জেলার ক্লিনিক ও ডায়াগনিষ্টিক সেন্টারগুলোর কোনো লাইন্সেস নবায়ন ছিল না । এদিকে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ৮২ টি ক্লিনিক ও ৯৭ টি ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের মালিক তাদের প্রতিষ্ঠানের লাইন্সেস নবায়নের জন্য এখনও অনলাইনে কোনো আবেদন করেন নি। গত বছরগুলোর মতো এ বছরও তারা লাইন্সেস নবায়ন না করে ক্লিনিকের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার চেষ্টা করছে। ফলে সরকার চলতি অর্থ বছরেও ৩৮ টি ক্লিনিক এর প্রায় ১৫ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা এবং উপজেলা পর্যায়ের প্রায় ৪৪ টি ক্লিনিকের পক্ষ হতে ১১ লক্ষ টাকা সহ সর্বমোট ২৬ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা পড়ত। এসব মিলিয়ে গত ৩ বছরে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ডায়াগনিষ্টিক সেন্টারের মালিকরা ৪১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা ও ক্লিনিক মালিকরা ৬৭ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার রাজস্ব প্রদান না করার প্রক্রিয়া অব্যহত রেখেছে বলে জানা গেছে।
সিভিল সার্জন ডা: হুসাঈন সাফাওয়াত জানান, জেলার অধিকাংশ ক্লিনিক ও ডায়াগনিষ্টিক সেন্টারগুলোতে অনুমোদন না নেওয়া সুস্পষ্ট সরকারী বিধির লঙ্ঘন। আমরা জেনেও কিছু করতে পারিনা। কয়েকমাস আগে একটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তারা হাইকোর্টে রিট করে আবারও কিøনিকটি সচল রাখার কাজ চলমান রেখেছে। আমাদেরও কিছু প্রতিবন্ধকতা জন্য নিজ অবস্থান থেকে কাজ করার মানসিতা থাকলেও করতে পারি না। তিনি বলেন, জেলার মাত্র কয়েকটি ক্লিনিক ও ডায়াগনিষ্টিক সেন্টার বিগত বছরের পূর্বে লাইন্সেস নবায়ন কওে ছিল। কিন্তু অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের কোনো নবায়ন সনদ নেই। এছাড়াও ডায়াগনিষ্টি সেন্টারগুলোরও একই অবস্থা। প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইন্সেস নবায়নের জন্য তাদের অনলাইনে আবেদন করতে বলা হলেও তারা না করে বছরের পর বছর ে প্রতারণামূলক ভাবে ব্যবসা অব্যাহত রেখেছেন। সুনির্দিষ্ট আইনের পরিপন্থী।
বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনিষ্টিক ওনার্স এসোশিয়েশনের সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি ডা: হাবিবুর রহমান জানান, জেলার অধিকাংশ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনিষ্টিক সেন্টারের কোনো নিবন্ধন নেই। এসব ঘটনা স্বাস্থ্য বিভাগের অধিকাংশ কর্মকর্তারাও জানেন। কিন্তু তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের জন্য কোনো উদ্যোগ আজও পর্যন্ত গ্রহন করেননি তারা। যা খুবই দু:খজনক। তিনি আরও জানান, জেলা সিভিল সার্জনের ঐ প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করার মানসিকতা থাকলেও তার (সিভিল সার্জন) অফিসের একটি সিন্ডিকেটের জন্য করতে পারেন না তিনি। এসব মালিক ও চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্ট কাজে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি করেন তিনি।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) এর সভাপতি পল্টু বাসার জানান, সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের অদক্ষতার বহি:প্রকাশে জেলার ক্লিনিক ও ডায়াগনিষ্টিক সেন্টারের মালিকরা বছরের পর বছর লাইন্সেস নবায়ন না করেও তাদের প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা সেবার দেওয়ার নামে প্রতরণামূলক ব্যবসা কার্যক্রম চলমান রেখেছেন। যা আইননত অপরাধ। তিনি বলেন, জেলার এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনিষ্টিক সেন্টারগুলো অবিলম্বে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গ্রহন না করা হলে আবারও সরকার লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব হারাবে । সাধারণ রোগীরাও তাদের দ্বারা প্রতারিত হবে। এখনই তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়া সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতিনিধিদের সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া জরুরী।
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য নিত্যানন্দ সরকার জানান, স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে মানুষের কোনো কাজে মন বসে না। তারা তখন নিজেদের মনকে ভালো রাখতে চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ নিতে যায়। কিন্তু জেলার কিছু প্রতাপশালী ব্যক্তি ক্লিনিক ও ডায়াগনিষ্টিক সেন্টার খুলে রোগী ঠকানোর ব্যবসা করলেও সরকারের রাজস্ব সময় মতো দেয় না।
Leave a Reply