ন্যাশনাল ডেস্ক: স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জাতীয় সংসদে পেশকৃত বাজেটগুলোর মধ্যে এবারই প্রথমবারের মতো কোনো আলোচনা ছাড়াই পাস হতে যাচ্ছে ২০২০-২১ অর্থবছরের মেগাবাজেট। নিয়মানুযায়ী বাজেট পেশের পর এর ওপর সরকারি ও বিরোধীদলীয় এমপিরা প্রায় একমাস আলোচনা করে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব করা বাজেটে নানা সংশোধনী দেন।
এরপর সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয় নতুন অর্থবছরের বাজেট। কিন্তু মহামারী করোনার ঊর্ধ্বগতির মাঝে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে বসা এই অধিবেশনটিতে বাজেটের ওপর কোনো আলোচনা করারই সুযোগ মিলেনি এমপিদের। গত ২৩ জুন মাত্র একদিন বাজেটের ওপর আলোচনা করা হয়। অবশেষে আর আলোচনা না করেই আগামীকাল মঙ্গলবার বাজেট পাস করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংসদ সচিবালয় সূত্র।
এদিকে কোনো আলোচনার সুযোগ না দিয়েই এতো বড়ো একটি বাজেট সরকারের একক সিদ্ধান্তে পাস করে নেয়ার উদ্যোগে সমালোচনামূখর হয়ে উঠেছেন বিএনপি এমপিরা। ভার্চুয়াল অধিবেশন চালানোর প্রস্তাব দেয়া দলটির এমপিরা এটিকে দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন বলে অভিহিত করে প্রস্তাবিত বাজেটকে মানুষ মারার বাজেট হিসেবেও মন্তব্য করেছেন। দলটির পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো না হলেও বাজেট পাশের দিন বিএনপির এমপিরা সংসদে যাবেন না এমনটাই শোনা যাচ্ছে।
দলটির সংরক্ষিত আসনের এমপি রুমিন ফারহানা বলেন, আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি এই বাজেট সেশনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই বাজেট অধিবেশন আমরা ভার্চুয়াল করার আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য সে প্রস্তাব মিডিয়াতে এসেছে, সব জায়গায় প্রচার হয়েছে তারপরও সংসদ ভার্চুয়াল করা হয়নি। এর ফলে যেটি হলো সম্পূরক বাজেট ঘোষণার একদিন পরই সংসদ মুলতবি হয়ে গেছে। শুধু মাত্র ২৩ জুন বাজেটের ওপর আলোচনা হয়েছে। কেবল একদিন আলোচনা করে বাজেট পাস হওয়ার নজির বাংলাদেশের ইতিহাসে নেই।
তিনি বলেন, করোনা সংকটের মধ্যে যে বাজেট দিয়েছে, এটি নিয়ে সমালোচনা হবে সেটি সরকার আগ থেকেই আঁচ করতে পেরেছিল। সরকার চাইলেই এক মাসব্যাপী ভার্চুয়াল এই অধিবেশন চালাতে পারতো। সেখানে এমপিরা মন খুলে তাদের মতামত দিতে পারতেন। মূলত সরকারের ভুলগুলো ঢাকার জন্যই এক দিনের মধ্যে বাজেটের আয়োজন করেছে তারা।
বিএনপির আলোচিত এমপি হারুনুর রশিদ বলেন, এই করোনার সময় যে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে সেটিকে কেউ স্বাগত জানায়নি। আওয়ামী লীগের যারা বাজেট বিশেষজ্ঞ তারাও স্বাগত জানাননি। বাজেট প্রতিক্রিয়ায় সবাই বলেছেন, এটি একটা অস্বাভাবিক এবং কল্পনাবিলাসী বাজেট। করোনা সংকট উত্তরণের জন্য আমাদের যে রোডম্যাপ দরকার ছিল, এই বাজেটে সে ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা নেই। আমি সুস্পষ্টভাবেই বলতে চাই, সরকার দেশের সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। তাই যেভাবেই হোক ক্ষমতায় থাকতে চায় তারা। সেজন্যই যেনতেনভাবে কোনো আলোচনা ছাড়াই বাজেট পাস করে নেয়া হচ্ছে। সরকারের এই ক্ষমতা লোভের কারণে আমরা পথ হারিয়েছি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট বড় কোনো সংশোধনী ছাড়াই আগামীকাল (৩০ জুন) জাতীয় সংসদে পাস হচ্ছে। পরদিন ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে এ বাজেট। ১১ জুন প্রস্তাবিত ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার এই বাজেটে ছোটখাটো দু-একটি বিষয় ছাড়া তেমন কোনো বড় সংশোধনীর সম্ভাবনা নেই। তবে মোবাইল ফোনের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত কর প্রত্যাহার করা হতে পারে। একইভাবে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় নিয়ে জনস্বাস্থ্যের গুরুত্ব বাড়াতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ কিছুটা বাড়ানো হতে পারে। কর ও ভ্যাট কাঠামোতে বড় কোনো পরিবর্তনও আসছে না।
Leave a Reply