নাজমুল হক : শরীরে কোনো উপসর্গ ছাড়াই বিশ্বে করোনভাইরাসে অনেকেই
সংক্রমিত হয়েছেন। পরীক্ষা করার পরই কেবল ধরা পড়েছে। যারা
উপসর্গবিহীন, তাদের মধ্যে থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর বিষয়টি
এখন ওপেন সিক্রেট। উপসর্গবিহীন করোনা আক্রান্তের সংখ্যাটা দিন
দিন বেড়েই চলেছে। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেফ্রি শামান
চীন থেকে তথ্য সংগ্রহ করে দেখিয়েছেন প্রকোপের শুরুতে ৮৬ শতাংশ
সংক্রমণ এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে ঘটেছিল, যারা ডাক্তার দেখানোর মত
অসুস্থ বলে নিজেদের বোধই করেননি। কোভিড ১৯ সংক্রমণ ও মৃত্যুর
জাতীয় হিসাব ও বিশ্লেষণ এই গবেষণাপত্রটি সায়েন্স ম্যাগাজিনে
প্রকাশিত হয়েছে এবং নীরব বাহকদের সম্পর্কে সতর্কতাবাণী
হিসেবে জনপ্রিয়ও হয়েছে। কিন্তু কতজন রোগাক্রান্ত, তার চেয়ে বড়
প্রশ্ন কারা অন্যদের মধ্যে রোগ ছড়াচ্ছেন?
করোনাভাইরাসের সামান্য উপসর্গে জ্বর ছাড়া আর কিছু থাকে না
এবং অধিকাংশ সময়েই আর সব ঠিক থাকলে জ্বর কেউ মাপেনও না।
আবার সিজেন পরিবর্তনের কারণে জ্বর মনে হতেই পরে। তথ্য গোপন করার
প্রবণতা আমাদের দেশে অহরহ হচ্ছে। দেশে এই মুহূর্তে করোনা
সংক্রমণের সব পথই খোলা। এতে নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে রোগটির সংক্রমণ
বাড়ছে। ঈদের পরের এই মাসটা দেশে করোনার জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
এ মাসে সংক্রমণের গতি নিয়ন্ত্রণে রাখা না গেলে, রোগটির প্রকোপ
কমাতে অনেক বেশি সময় লাগবে।
ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর,
ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, নরসিংদী রয়েছে আক্রান্তের শীর্ষে রয়েছে।
করোনা প্রতিরোধে জাতীয়, জেলা ও উপজেলা কমিটিগুলোও নানান পদক্ষেপ
গ্রহণ করছে। কিন্তু কিছুই যেন কাজে আসছে না। তারপরও বিভিন্ন
অযুহাতে কর্মস্থল ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রাম থেকে মানুষ
ফিরছে নিজ জেলায়। গণপরিবহন চালু হওয়ায় এখন মানুষের চলাচলেও নেই
কোন নিয়ন্ত্রণ। এমনকি বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে একসময়
দেশে করোনা ঘনীভূত মহামারীর দিকে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন
বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, একসময় আর কোনো কিছুতেই রোগটি
নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। তখন হার্ড ইমিউনিটি (অর্থাৎ রোগীর শরীরে
সংক্রমণ প্রতিরোধ ক্ষমতা) হবে একমাত্র উপায়।
করোনা আক্রান্তদের বয়সভিত্তিক বিভাজন দেখলে বোঝা যায়, পরিবারের
কারো করেনা আক্রান্ত হলে তার থেকে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছড়াচ্ছে। তার তার থেকে প্রতিবেশীদের। পরিবারে কোন
সদস্যের মধ্যে সামান্য লক্ষণ ধরা পড়লেই তিনি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ২/৩ দিন
পরে নমুনা দিচ্ছেন। আবার নমুনা দেয়ার পরেও ক্ষেত্র বিশেষ ২/১ দিন পরে
রিপোর্ট জানা যাচ্ছে। ভিতরের এই সময়টাতেই আক্রান্ত ব্যক্তি পরিবার
বা অফিসে বা মহল্লায় অহরহ মানুষের সাথে মিশে যাচ্ছে। ফলে তারাও
ঝুঁকিতে পাড়ছে। এ থেকে উত্তোরণ হতেই হবে।
জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে কিছু মানুষ সবকিছু ফাঁকি দিয়ে
গ্রামে-শহরে যাবেই। আমরা প্রতিদিনই করোনার আপডেট নিচ্ছি
কিন্তু সচেতনতা মানছি কতটুকু? বিভিন্ন অজুহাতে কারণে-
অকারণে আমরা বাহিরে যাচ্ছি। তবে ঢাকা বিভাগের বাহিরের
প্রেক্ষাপট কিছুটা হলেও ভিন্ন। গ্রামের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে বাহিরে
থাকা মানুষের সংস্পর্শে এসে। এটা কিছুতেই রোধ করা যাচ্ছে না।
দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর সদস্যরাও আক্রান্ত হওয়ায় তারাও অনেকটা
পিছুটান দিয়েছে। নিজে সচেতন না হলে আইনপ্রয়োগ করে
কতটুকু সচেতন করা সম্ভব?
ঢাকা বিভাগের মানুষ বেশি আক্রান্ত। সরকার এলাকাভিত্তিক লক ডাউন
শুরু করছে। ঢাকার বাহিরে যারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে বেশির ভাগই
বাহিরে থেকে আগতরা। আবার তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিরাও আক্রান্ত
হচ্ছে। তাই করোনা মহামারি বন্ধ করতে ঢাকা বন্ধ করতেই হবে।
Leave a Reply