অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী
পৃথক সৃজনশীল প্রাকৃতি বৈশিষ্ঠ মন্ডিত দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল। উপকূলীয় এ অঞ্চলের ভুমি গঠনের সাথে রয়েছে জোয়ার ভাটার প্রভাব। সাগরের লবণপানি আর উজানের মিষ্টি পানির সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা পৃথক এক প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনায় উপকূলীয় জীবন-জীবিকার বিকাশ ঘটে। পলি অবক্ষেপনের মাধ্যমে গঠিত ভূমির গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ার পূর্বে উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ করায় ভূমি বসে যেয়ে নদী পাড় অপেক্ষা বাঁধের মধ্যের জমি নিচু হয়ে যায়। পাশাপাশি পলি জমিতে না পড়তে পেরে নদীর মধ্যে পড়ায় নদীর তলদেশও উচু হতে শুরু করে। যা আজ এলাকার জন্য ভয়াবহ অবস্থা তৈরী করেছে।
ষাটের দশকে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে উপকূল অঞ্চল দিয়ে ভেড়ীবাধ নির্মানের মূল উদ্দেশ্য ছিল কৃষি জমিতে নোনা পানি উঠা বন্ধ করা ও অধিক ফসল উৎপাদন। কৃষি ভিত্তিক উৎপাদন কাঠামো গড়ে তোলা। রাষ্ট্রীয় কতৃপক্ষের এ দপ্তরের নাম ছিল ইপি-ওয়াপদা { ইস্ট পাকিস্তান ওয়াটার এন্ড পাওয়ার ডেভল্পমেন্ট বোর্ড সংক্ষেপে ইপি-ওয়াপদা। পরবর্তিতে পাওয়ার ডেবলম্পমেন্ট বোর্ড কে পৃথক করা হয়। বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ড – পাউবো কিন্তু এখনো ওয়াপদা নামে সমাধিক প্রচারিত}। উপকুলীয় বাঁধ নির্মানের সময়ে ফসল উৎপাদন, কৃষির ফলন বৃদ্ধি, নোনা পানি ঠেকানো নানান কথা বলা হলেও বলা হয়নি এ বাঁধ নির্মানে এলাকার পরিবেশ প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনায় কোন বিরূপ ক্রিয়া তৈরী হবে কিনা ? কতদিন নোনা পানির প্রভাব মুক্ত হয়ে কৃষি উৎপাদন স্বাভাবিক থাকবে ?
উপকূলীয় বাঁধ এর নির্মানকালিন ত্রুটির বিরূপ প্রতিক্রিয়া ৭০ দশকের শেষ দিকে বিশেষ করে ৮২-৮৩ সালে মারাত্মক আকার ধারন করে। কৃষি উৎপাদন নেমে আসে নিন্মস্তরে আর তৈরী হতে থাকে অঞ্চল ভিত্তিক জলাবদ্ধতা। অন্যদিকে আর্ন্তজাতিক বাজারে চিংড়ী চাহিদা তৈরী হয়। ব্যবসায়ীরা তখন চিংড়ী উৎপাদনে কৃষি জমির উপর নজর দেন। যে জমিতে সারা বছর শ্রম ও অর্থ ঘাটিয়ে দেড় হাজার টাকা পাওয়া ছিল কষ্টকর সেখানে ৩০০০ টাকা অগ্রিম জমির মালিককে প্রদান করার প্রলোভনে পড়ে বৃহৎ জমির মালিকরা (এ শ্রেনী ছিল সরসরি জমি বিচ্ছিন্ন), চিংড়ী ঘের করার জন্য কৃষি জমি লীজ প্রদানে আগ্রহী হয়ে উঠে। ফলে ক্ষুদ্র কৃষক, মাঝারী কৃষক, কৃষি শ্রমিক ও অল্প জমির মালিকরা বিপদে পড়ে। এসময় এলাকাতে চিংড়ী বিরোধী আন্দোলনও গড়ে উঠে। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতা অবস্থায় বাঁঁধ বাস্তব হয়ে দেখা দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলার প্রধান অনুসংগ হিসেবে আজ উপক’লীয় বাঁধ প্রতীয়মান। আর সে কারনে স্থায়ীত্বশীল পরিবেশ বান্ধব, জলবায়ু পরিবর্তন সহিষ্ণু বাঁধ নির্মানের দাবী দক্ষিণ পশ্চিম উপক’লীয় ভুক্তভোগিক সকল পর্যায়ের মানুষের।
মুলতঃ উপক’লীয় বাঁধ নির্মানের পিছনে বৈশি^ক অনৈতিক বানিজ্যিক আকাংখায় কাজ করে। ফলে ষাটের দশকের নির্মিত উপকূলীয় বাঁধ তৈরীর ক্ষেত্রে স্থানীয় পরিবেশ, নদীর প্রবাহ, ভুমি গঠন প্রক্রিয়া, পলি অবক্ষেপন, সুন্দরবন ও সংশ্লিষ্ঠ এলাকার জীববৈচিত্র ইত্যদি বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয় না। নদীর সাথে প্লাবনভুমির সংযোগ খাল সমুহের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। নদীর মধ্যে আড়াআড়ি বাঁধ দেওয়া, কোথাও প্রবাহবান নদীর দু মুখ বেধে দেওয়া হয়। অভ্যন্তরিন যে গেট সমুহ নির্মাণ করা হয়, তা আকারে অনেক ছোট । এবং শুধু মাত্র একমুখ ফ্লাসগেট তৈরী করা হয়।
ভেড়ী বাঁধ নির্মানের পে এটিকে টেকসই করা বা কোন জটিলতা ঘটলে নিরসনের পন্থা বিষয় নিয়ে কোন স্থায়ীত্বশীল কর্মপন্থা প্রস্তুত করা হয় না। পাউবোর মত অনুযায়ী, প্রতিবছর বাঁধের ১০ হতে প্রায় ২০ পার্সেন্ট পর্যন্ত মাটির ক্ষয় হওয়ার প্রবনতা থাকে। অন্যদিকে চিংড়ী চাষের কারনে বাঁধের অপ-ব্যবহার করা হয়। নিবিচারে বাঁধ কাটা, নিজেদের মত নিজস্ব পানি উত্তোলন পথ নির্মাণ, নদীর চরের বনাঞ্চল ধ্বংশ করা কারনে বাধঁ পুবোপুরি দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। ২০০৯ এর আইলায় দেখা যায় যেখানে যেখানে চিংড়ী ঘেরে পানি উত্তোলনের জন্য ভেড়ীবাধ কাটা হয়েছিল, সেই সকল স্থানের বাঁধ ভেঙ্গে এলাকা প্লাবিত হয়। পাউবোর কিছু বিধি আছে বাঁধকে এ ধরনের অপ-ব্যবহার রোধ করার জন্য। কিন্তু পাউবোর অসৎ ব্যবস্থাপনা এ সকল বিধিকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যবহার করে চিংড়ী চাষ বিরোধী সাধারণ মানুষের আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করতে।
বাঁধ ভাঙ্গন একটা নিত্য সঙ্গি হলেও ২০০৭ সিডোর ও ২০০৯ এর আইলার প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হওয়ার পর থেকে ভঙ্গুর বাঁধ ব্যবস্থাপনার অবস্থা মানুষ অনুধাবন করা শুরু করে। বিশেষ করে ২০০৯ আইলার পর স্থানীয় মানুষের মধ্যে স্থায়ী বাধ নির্মানের প্রয়োজনীয়তার দাবীটি প্রাধান্য পায়। ২০০৯ মে তে ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ নভেম্বরের মধ্যে নির্মান করা হবে বলে প্রত্যশ্রুতি দেওয়া হয় কিন্তু ডিশেম্বর শেষে এসে যখন বাঁধ নির্মানের কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত না হয়, তখন স্থানীয় ভুক্তভোগি মানুষের নেতৃত্বে ‘আইলা বিধ্বস্থ বাঁধ নির্মান গণ সংগ্রাম কমিটি’ গঠন করে ভাঙ্গা বাধ নির্মানের দাবী বাস্তবায়নের দাবী তোলা হয়।এ কমিটির উদ্যোগে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে ১০ জানুয়ারী২০১০ প্রথম সংবাদ সম্মেলন কওে বাধ নির্মানের দাবী করা হয় এবং ১৪ জানুষায়ী ২৪ ঘন্টায় দু বার জলে ডুকে যাওয়া গাবুরা পদ্মপুকুরের হাজার মানুষ শ্যামনগর সদরে বাঁধ নির্মানে দাবীতে মানব বন্ধন করে। এখানে তৎকালিন সাতক্ষীরা -৪ এর এমপি ও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আসেন এবং দ্রুত বাধ ভেঙ্গে থাকা স্থান সমুহ সংযুক্ত কওে মজবুত স্থায়ী বাধ দেওয়ার উদ্যোগের প্রতিশ্রুতি দেন। এর পর থেকে প্রতিশ্রুতি আসতে থাকে। আন্দোলনের তীব্রতায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রি, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপন্ াসংসদীয় কমিটি, পাউবোর প্রধান প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ঠ বক্তিরা আসেন আর প্রতিশ্রুত ব্যক্ত করেন। কিন্তু কাজের গতি না হওয়ায় মানুষের আন্দোলন তীব্রতর হয়। সাতক্ষীরা গণ অনেশন, ঘেরাওসহ সকল ভুক্তভোগি মানুষর কর্মসুচির সাথে স্থানীয় সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ সংহতি জানায়। এ সময় দাবী তোলা হয় প্রধানমন্ত্রিকে দুর্গত এলাকায় পরিদর্শনের। জনদাবীর প্রতি সম্মান দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রি ২৩ সেপ্টেম্বর১০ শ্যামনগরে আসেন। নকিপুর হরিচরন হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবেশে তিনি ১৫ জানুয়ারী ১১ মধ্যে বাধ নির্মান সম্পন্ন হবে বলে ঘোষনা দেন। কিন্তু বাঁধের ভাঙ্গা সমুহে ক্লোজার দিতে সেনাবাহিনী নিয়োগ করে মধ্যে নির্মান শেষ হয়।
বাঁধ নির্মানের আন্দোলন দু পবে বিভক্ত করা যায়। ২০১০ হতে ২০১৪ পর্যন্ত এবং ২০১৬ থেকে ২০২০। প্রথম পর্বে শুধু আইলায় ক্ষতিগ্রস্থ বাধ সংস্কারের দাবীকে প্রাধান্য দিয়ে সাতক্ষীরাতে আইলা বিধ্বস্থ বাধ নির্মান গণসংগ্রাম কমিটি ও খুলনাতে আইলা সংহতি পরিষদ এবং ঢাকাতে সিএসআরএল এর নেতৃত্বে ধারাবাহিক আন্দোলন করা হয়। এ সময় স্মারক লিপি প্রদান, সমাবেশ, মানববন্ধন, নীতি নির্দ্ধারকদের সাথে ঢাকাতে সংলাপ, গণশুনানী, খুলনা-৫, খুলনা-৬ এর এমপি মহোদয়দের ঢাকাতে সংলাপ, টেলিভিশনে টক শোতে অংশ নেওয়া, ঢাকা কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারে প্রথীক অবস্থান, থালা বাসন নিয়ে পিকসারপ্যালেসের সামনে ভুক্ষাদের অবস্থান, জাতীয় দৈনিকে জাতীয় পর্যায়ের সাংবাদিকদের ধারাবাহিক প্রতিবেদন, সকল তথ্য নিয়মিত প্রধান মন্ত্রির দপ্তরে সংরক্ষন, ৩০ হাজার পোস্ট কার্ডএ ভুক্তভোগিদের প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি, দুযেৃাগ মন্ত্রি, পরিবেশ মন্ত্রী, পানি সম্পদ মন্ত্রী, পাউবোর প্রধান প্রকৌশলী, জাতীয় বিশেজ্ঞ নেতৃৃন্দেও সাথে স্থানীয় ভুক্ত ভোগি মানুষদের সংলাপ প্রভৃতি । এ পর্যায়ে বাধের ডিজাইন পরিবর্তন করা ও আইলায় ক্ষতিগ্রস্থ বাধ নির্মানের দাবীকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।
দ্বিতীয় পর্বে আন্দোলনটি দেশের খ্যাতনামা গবেষকবৃন্দ যুক্ত করে শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) কয়রা (খুলনা)তে বাঁধ, খাওয়ার পানি সহ স্থানীয় প্রধান সমস্যগুলো সামনে নিয়ে আসা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুকি সমুহ চিহ্নিত করা হয়। যেখানে স্থায়ী বাঁধ ও নিরাপদ পানিকে গুরুত্ব প্রদান করে দলিল তৈরী করা হয়। এ র্পায়ে উপক’ল ও উত্তোর বঙ্গেরবাধ নিয়ে যৌথ সামাজিক আন্দোলন শুরু করা হয়। এ আন্দোলনের সুচনা স্থানীয় জলবায়ু পরিষদ’র নেতৃত্বে করা হয়। এক্ষত্রে স্থায়ী বাধ নির্মান ও বাঁধ তদারকির সাথে স্থানীয় সরকারকে যুক্ত করা এবং প্রধান সমস্যা হিসেবে সুপেয় পানির চাহিদাকে চিহ্নিত করা হয়। এ পর্যায়ে ৩০ জন ইউপি চেয়ারম্যানের পক্ষে প্রধানমন্ত্রি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান, তিন জন জাতীয় সংসদ সদস্যদেও মাধ্যমে জাতীয় সংসদে বক্তব্য প্রদান, জাতীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও নীতি নিদ্ধারকদের সাথে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সংলাপ ইত্যাদি।
ধারাবাহিক এ কার্যক্রমের ফলে আমফানের পরে প্রধান সমস্যা হিসেবে স্থায়ী বাঁধ নির্মানের দাবী প্রচারনার প্রথমে চলে আসে। নিরাপদ পানির সংকটও আলোচনায় প্রাধান্য পায়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সরকারের কর্মসুচি বাস্তবায়ন কতৃপক্ষকে মূল কর্মসুচি গ্রহণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনে কার্যকর ভুমিকা রাখতে উদ্যোগ নেওয়ার সম্ভবনা তৈরী করা সম্ভব হয়নি। সফলতার জায়গা হচ্ছে এতদিন শ্যামনগর, কয়রার মানুষের প্রধান দাবী থাকলেও শহর কেন্দ্রিক নাগরিক আন্দোলনের দাবীর সাথে এটি কম গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে ছিল কিন্তু এ বাওে প্রথম থেকেই সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটি স্থায়ী বাধ নির্মানের দাবীকে এক নম্বও সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত কওে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলে। যা সাতক্ষীরা সকল সুধি ও প্রশাসনকে দাবীর পক্ষে ঐক্যমত্য হতে সহায়ক হয়।
উপকূলের প্রধান সমস্যা সমুহ বলতে গেলে আজ চিহ্নিত। প্রয়োজন এ সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহনে যথাযত কতৃপক্ষের কার্যকর ভুমিকা গ্রহণ। এক্ষত্রে জাতীয় নীতি বাস্তবায়ন সংস্থার কার্যকর পদক্ষেপ। বর্তমানে রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় মাননীয় প্রধান মন্ত্রির হস্তক্ষেপ ব্যতিরেকে কোন বড় ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। ফলে দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের স্থায়ীত্বশীল টেকসই ভেড়ী বাধ নির্মান ও নিরাপদ পানির স্থায়ী সমাধান বাস্তবায়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রিও হস্তক্ষেপ এর প্রয়োজনীয় উদ্যোগ সৃষ্টি। আর এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ স্থাপনের উদ্যোগ সৃষ্টি কর্মসুচি।
জলবায়ু পরিবর্তরেনর ঝুঁকি এর আজ উপক’লের একটি জীবন্ত সমস্যা। উপক’লের মানুষদের এ ঝুঁকির সাথে খাপ খাইয়ে টিকে থাকতে হবে। বড় প্রাকৃতিক দুযোগ বাদ দিয়েও নদীর জোয়ারের পানির প্রভাবে প্রায়শঃ বাঁধ ভেঙ্গে এলাকার সকল উন্নয়ন জীববন-জীবিকাকে ধ্বংশ করে দিয়ে থাকে। গত দশ বছরে শুধু পদ্মপুকুর ইউনিয়নের খোলপেটুয়া নদীর জোয়ারের ভেড়ীবাধ ভেঙ্গেছে ১০ বারের মত নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে, ১৮টি অধিক স্পটে। ফলে বর্তমান ভঙ্গুর বাঁধ দিয়ে কোন মতেই উপক’লের জীবন-জীবিকা ও সরকারী উন্নয়ন রক্ষা করা সম্ভব নয়।
পাউবোর নিজস্ব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সমুহ একমাত্র উপক’লীয় ভেড়ীবাধে কাজ করার অধিকার প্রাপ্ত। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ সকল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিজেরা কাজ করে না। লীজ, সাব লীজ কখনো কখোনো লেবার সরদার দিয়ে কাজ করা হয়ে থাকে। কাজের মান অধিকাংশ ক্ষেত্রে অত্যান্ত নিন্মমানের হয়। আবার মূল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে না পাওয়ায় কাজের বিষয়ে কথা কলার সুযোগও থাকে না। পাউবো ঝুকিপূর্ণ বাধ নিয়ে বার বার স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ হতে তাগাদা দিলেও কোন কাজ কওে না। তাদের নিয়ম বাধ ভেঙ্গে গেলে তবে দরপত্র প্রদানের মাধ্যমে কাজ করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনসহ কাউকে কাজের বিষয়ে জ্ঞাত করা হয় না।
বর্তমান আম্ফানে ভেঙ্গে যাওয়া অধিকাংশ স্থানগুলো স্থানীয় সরকারের নেতৃত্বে জনগন স্বর্তফুর্ত ভাবে স্বেচ্ছাশ্রমে রিংবাধ দিয়ে পানি আটকেছে। বরাবরেরমত পাউবো একইস্থানে ডিপিএম এর মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ দিয়েছেন। অথচ কয়েক সপ্তাহ ধরে পানির সাখে লড়াই করে যে প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরা পানি আটকালো তাদেও নুন্যতম আর্থিক সহযোগিতা করা বা নুন্যতম আলোচনা করার ব্যবস্থা করার ব্যবস্থা নেই। একই ভাবে ৬৬ সালে বাঁধ নির্মান সম্পন্ন হওয়ার পর হতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা আজকের অতিরিক্ত জোয়ারের চাপে অগনিতবার বাঁধ ভেগে গেছে। বাঁধ ভেগে গেলে বাধ সংলগ্ন এলাকার মানুষদের জমি ছেড়ে দিয়ে পিছনে চলে আসতে হয়। ভাঙ্গন থেকে শত শত মিটার পিছন দিয়ে রিং বাধ কার হয়। এ রিং বাধ করার জন্য যাদেও জমি নেওয়া হয় বা বাধ ভেঙ্গে নদীর গর্ভে যাদেও জমি চলে যায় সে সকল ক্ষতিগ্রস্থ বা নিঃশ^ মানুষদেও ক্ষতিপূরনের কোন ব্যবস্থা পাউবোর নেই। অথচ সরকারের সকল নির্মানে ক্ষতিপূরন করার বিধি ব্যবস্থার আইন রয়েছে।
সামগ্রিক বিচেনায় পাউবোর ভেড়ী বাধ ব্যবস্থার পদ্ধতি, নিয়মিত সংস্কার ও তদরকির বিষয় দক্ষিণ-পশ্চিম উপক’লীয় অঞলের জীববৈচিত্র, প্রতিবেশ ব্যবস্থা ও বৈশি^ক জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির আলোকে বিবেচনা করার প্রয়োজনীয় দাবী একজন উপক’লের মানুষ হিসেবে প্রধান বিবেচ্য বিষয়। গবেষনা ভিত্তিক নয়, অভিজ্ঞার আলোকে স্বচোখে দৃশ্যমান সংকটের নিরসনে নিন্ম লিখিত প্রস্তাব সমুহ দাবী হিসেবে উপস্থাপন ও বাস্তবায়নে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ নিশ্চিত করার প্রয়োজনী কর্মসুচি গ্রহণ জরুরী।
১. দক্ষিণ-পশ্চিম উপক’ল তথা উপক’লের জন্য পৃথক একক কতৃপক্ষ তৈরী বা গঠন
২. জলবায়ু পরিবর্তন বিবেচনায় নিয়ে জনগণের অভিজ্ঞতা ও মতামতের ভিত্তিতে কমপক্ষে আগামী একশ’ বছরের জন্য স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করতে হবে, প্রয়োজনে ডেল্টাপ্ল্যানে পরিমার্জনা করতে হবে
৩. বাঁধের সংরক্ষণ-সংস্কার-মেরামতের ক্ষমতা স্থানীয় সরকারকে প্রদান ও প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে;
৪. পানি উন্নয়ন বোর্ড কেবল কারিগরি সহায়তার প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে;
৫. বাধঁ ভেঙ্গে এ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ জমি ও মানুষের তালিকা প্রস্তুত ও প্রয়োজনীয় ক্ষতি পূরন প্রদান ও পূর্ণবাসন করতে হবে।
৬. . জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় স্থানীয় পর্যায়ে অভিযোজন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে, জাতীয় পর্যায়ে নতুন নতুন শস্যজাত উদ্ভাবনে বরাদ্দ দিতে হবে;
৭. পাউবো কতৃক টেন্ডার পদ্ধতি পরিবর্তনসহ সকল কাজের ডিজাইন, বিবরণ ও বরাদ্দ বিষয়ে সকল তথ্য জনগণের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে।
৮. উপক’লে খাওয়া ও ব্যবহারের পানির স্থায়ী সমাধানের পন্থা জাতীয় নীতিমালায় সম্পৃক্ত করা ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
৯. উপক’লের সাথে যুক্ত সকল মন্ত্রনালয়কে সংযুক্ত করে আন্তঃমন্ত্রনালয় সমন্বয় কমিটি গঠন করতে হবে (ভুমি, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ, পানি সম্পদ, জলবায়ু ও পরিবেশ, স্থানীয় সরকার, স্ব-রাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ইত্যাদি মন্ত্রনালয়)
১০. বিশেষ দুর্গত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা ও বিশেষ বরার্দ্দ এডিবিতে রাখা।
Leave a Reply