ন্যশনাশ ডেস্ক:রংপুরে নব্বই দশকে জাসদ ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই কারা নির্যাতিত, মামলায় জর্জরিত ছাত্রনেতাদের একজন মোঃ আব্দুল হান্নান। অপরজন সাব্বির আহমেদ। ১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর ডাঃ মিলন নিহত হওয়ার রাতেই ঘোষিত জরুরী আইনে রংপুর শহরে সর্ব প্রথম গ্রেফতার সদ্য এইচএসসি পাশ করা হান্নান। সেই শুরু। ১৯৯২ শহীদ জননীর গড়া আন্দোলন চলাকালে জামাতীদের সংগঠন যুব কমান্ডের হরতালের দিন রংপুরে শিবিরের ঘাঁটি মেস এলাকা আশরতপুরে স্থানীয় এক প্রেগন্যান্ট মহিলাকে রিক্সায় হসপিটাল যেতে বাঁধা দেয়ায় এলাকাবাসীর সাথে শিবিরের সংঘর্ষে মারা যায় শিবির কর্মী মনসুর। ষড়যন্ত্র করে সেটাতে স্থানীয়দের সাথে আসামী করা হয় জাসদের প্রয়াত আজিজুল ভাই, হান্নান ও সাব্বির ভাইকে। একই বছর রংপুরে জামদের আব্বাস আলী খানের জনসভা পণ্ড করার মধ্য দিয়ে রংপুরবাসীর শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের রংপুরের মাটিতে প্রতিরোধের সূচনা হয়। আসামী যথারীতি হান্নান। ১৯৯৩ সালে কারমাইকেল কলেজে শিবিরের সাথে জাসদ ছাত্রলীগের সংঘর্ষে কুখ্যাত ‘সন্ত্রাস দমন অধ্যাদেশ – ৯২’ এর আওতায় রংপুর জেলার প্রথম মামলা জাসদ ছাত্রলীগ নেতা কর্মীদের নামে। অবধারিতভাবে আসামী হান্নান। ১৯৯৫ সাল রংপুরের জাসদ ছাত্রলীগের জন্য এক বিভীষিকার বছর। বছরের শুরুতেই ছাত্রদলের সাবেক জেলা সভাপতির করার মামলায় জাসদ ছাত্রলীগের অন্যান্যদের সাথে যথারীতি আসামী হান্নান। কিছুদিন পরে গোলাম আযমের জনসভা প্রতিরোধ, সেখানেও আসামী হান্নান। সেই বছরেই ৭ জুলাই জামাতীদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে কবি শামসুর রহমানের সংবর্ধনা, আসামী হান্নান। ওই বছরই ২৮ আগস্ট কারমাইকেল কলেজে আমাদের সাথে শিবিরের সংঘর্ষে মারা যায় শিবিরের ময়নুল। মামলায় প্রধান অভিযুক্ত হান্নান। দুই মাস পরে ২৮ অক্টোবর আমাদের বন্ধু রংপুর মেডিকেলে ছাত্রদলের সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত শহীদ হাবীবের মামলার সাক্ষী জেলা ছাত্রলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন (হাবিব হত্যার দিন তিনিও গুলিবিদ্ধ) এর বাসায় ছাত্রদলের বোমা হামলায় নিহত হন আনোয়ার ভাইয়ের পিতা জমশের চাচা। ফলে এলাকাবাসী পার্শ্ববর্তী মেডিকেল হস্টেল ঘেরাও করে ছাত্রদলকে উচ্ছেদ করে ক্যাম্পাস থেকে। সেখানেও মেডিকেল কলেজ প্রশাসন ও পুলিশের করা তিনটা মামলায় আসামী হান্নান। যদিও তার বাসা শহরের অপর প্রান্তে। ১৯৯৯ সালে এরশাদ বক্তৃতা দিলেন তিনি হাসানুল হক ইনুকে মাসোহারা দিতেন। তার এই বক্তব্যের প্রতিবাদ হলো এরশাদেরই রংপুরে। জাপার সাথে সংঘর্ষ হলো। তাদের করা তিনটা মামলায় অন্যান্যদের সাথে আসামী হান্নান। আমি শুধু এখানে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটার কথা লিখলাম। ১৯৯০-২০০৫ পর্যন্ত রংপুর জাসদ ছাত্রলীগ প্রায় ৩০টার মতো মামলা ফেস করে। প্রায় সবগুলোতে আসামী হান্নান। অনেকে ভাবতে পারেন হান্নান কি তবে সন্ত্রাসী? না, তার নামে দুইটি হত্যা মামলাসহ দুই ডজনের অধিক মামলার মধ্যে অরাজনৈতিক মামলা একটাও নেই। সব মামলার আসামী তাকে হতে হয়েছে জাসদ ছাত্রলীগের কর্মী হিসাবে। ৯০ সালে জেলা যাওয়ার যে সূচনা হয়েছিল হান্নানের তা অব্যাহত ছিল ২০০৫ সাল পর্যন্ত। তারপরে অবশ্য আর একবারও জেলে যেতে হয়নি তাকে। ৯৬ সালের মে থেকে ৯৮ সালের জুন পর্যন্ত টানা ২৫ মাস জেলে থাকতে হয় তাকে। সব মিলিয়ে জাসদ ছাত্রলীগ রাজনীতির জন্য প্রায় সাড়ে তিন বছর তার জেলেই কাটে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Comment *
Name *
Email *
Website
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.
Leave a Reply