প্রেমিকের বিচার চেয়ে সুইসাইড নোট, অন্তঃসত্ত্বা স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা!

‘আমার পেটে জীবনের বাচ্চা। আমিতো বেঁচে থাকতে ওর বিচার করতে পারলাম না। মরার পরে যেন কঠোর বিচার হয়” মৃত্যুর আগে এভাবে আবেগঘন সুইসাইড নোট লিখে দুই মাসের অন্তঃস্বত্তা এক স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। সোমবার সকাল ৭ টার দিকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়ের চর নিতাইল পাড়ার পূর্ব পাড়াতে এ ঘটনা ঘটে।

ওই ছাত্রীর নাম সোনিয়া খাতুন (১৬)। তিনি শালঘর মধুয়া হাজী আছিয়া খাতুন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী এবং নিতাইল পাড়ার সুফিয়া খাতুনের কন্যা। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, একই এলাকায় জহুরুল হাজীর কলেজ পড়ুয়া ছেলে জীবনের (২০) সাথে সোনিয়ার প্রায় এক বছর যাবৎ প্রেম চলছিল। এর মাঝে তারা শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। সম্পর্কের এক পর্যায়ে সোনিয়া দুই মাসের অন্তঃস্বত্তা হয়ে পড়লে বিয়ের জন্য জীবনকে সোনিয়া চাপাচাপি করতে থাকে। এরপর গত শনিবার জীবনের সাথে পালিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যাগপত্র গুছিয়ে রাখে সোনিয়া। কিন্তু জীবন পালাতে রাজি না হওয়াই রবিবার সন্ধ্যায় জীবনের বাড়িতে ছুটে যায় সোনিয়া। এসময় জীবনের মা বাবা বোন মিলে সোনিয়াকে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। সোনিয়া সোজা বাঁশগ্রাম পুলিশ ক্যাম্পে গিয়ে লিখিত অভিযোগ করে। পুলিশ বিষয়টি দেখা হবে বলে আশ্বস্ত করে সোনিয়াকে বাড়ি পৌঁছে দেয়। অপমান আর ক্ষোভে সোমবার সকাল ৭ টার দিকে সুইসাইড নোট লিখে নিজ ঘরে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে সোনিয়া।

নিহতের মা সুফিয়া খাতুন জানান, জীবনের সাথে গোপনে সোনিয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। জীবনের বাড়িতে গেলে ওরা মারধর করলে ক্যাম্পে যায় সোনিয়া। পরে পুলিশ সোনিয়াকে বাড়ি পৌঁছে দেয়। তিনি আরো জানান, রাতেই সোনিয়ার কাছ থেকে জানতে পারলাম ওদের শারীরিক সম্পর্ক ছিল এবং সোনিয়া দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তবে মেডিকেল টেস্ট করানো হয়নি। সুফিয়া জানান, আমার মেয়ে বাবা হারা। অনেক কষ্টে বড় করেছি। ওর সাথে যারা খারাপ কিছু করেছে, তাদের কঠোর বিচার চাই। 

এ বিষয়ে বাঁশগ্রাম পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ রেজাউল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, মেয়েটি ক্যাম্পে এসে তার এক ছেলের সাথে প্রেমের কথা জানিয়ে বলে আমি বাড়ি গেলে পরিবারের লোকজন মারবে। এ কথা শুনে আমরা বাড়ি পৌঁছে দিয়েছি। তবে লিখিত অভিযোগের কথা তিনি অস্বীকার করেন। 

কুমারখালী থানার ওসি অফিসার মজিবুর রহমান জানান, সুইসাইড নোট লিখে মেয়েটি ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তদন্তের স্বার্থে সুইসাইড নোটসহ একটি ডায়েরী জব্দ করা হয়েছে এবং সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। এদিকে ঘটনার পর থেকেই জীবনসহ তার পরিবারের সকল সদস্য পলাতক রয়েছে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *