1. faysal.ce@gmail.com : dakshinermashal :
  2. abuhasan670934@gmail.com : Hasan :
  3. sakalctc.bd@gmail.com : Nityananda Sarkar : Nityananda Sarkar
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫২ অপরাহ্ন
৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১
Latest Posts
📰আশাশুনিতে জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত📰প্রত্যেক উপজেলায় একটি সরকারি মাদ্রাসা করার সুপারিশ: সাতক্ষীরা ডিসি📰হাসিনাকে ফেরত না দিলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক সুখের হবে না: ড. ইউনূস📰পাশের দেশের মিডিয়া মিথ্যা প্রচার করে বেশি : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা📰সাতক্ষীরার তিন নারী ফুটবলারকে গণসংবর্ধনা দেবে জেলা প্রশাসন📰জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ 📰সাতক্ষীরার কলারোয়ায় শিশু শ্রম ও শিশু অধিকার বিষয়ক সিসিডিবি’র কর্মশালা📰জমজমের পানি পানে ৮ নির্দেশনা দিলো সৌদির📰দুহাত তুলে দোয়া চাইলেন পলক📰চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রিতে

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাঁধ ব্যবস্থাপনা

প্রতিবেদকের নাম :
  • হালনাগাদের সময় : মঙ্গলবার, ৯ জুন, ২০২০
  • ৩৩৭ সংবাদটি পড়া হয়েছে

জিয়াউল হক মুক্তা

বাংলাদেশে কিছু হলেই আজকাল প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করা হয়; এতে নিঃন্দেহে তার ওপর বাড়তি দায়বদ্ধতা ও চাপ আরোপ করা হয়। তার পরও তাকে উদ্দেশ করেই এই লেখা। লিখছি নদীমাতৃক বাংলাদেশের বাঁধ নির্মাণ-সংস্কার-ব্যবস্থাপনা বিষয়ে। শুধু একটি এলাকার বাঁধের কথাই বলছি, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের। সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় আম্পান-পরবর্তী করণীয় বিষয়ে, আমাদের আইলা-পরবর্তী অভিজ্ঞতা প্রেক্ষাপটে রেখে।
একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংগঠনের প্রতিনিধি হিসেবে ২০০৯ সালে আইলার পরপরই দ্রুততর-পুনর্বাসন কার্যক্রমের তদারকি করতে গিয়ে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা ও এর ইউনিয়নগুলোর সকল চেয়ারম্যান-কাউন্সিলর-মেম্বার ও ভুক্তভোগী জনগণ এক আলোচনায় আমাকে জানান যে তারা ত্রাণসাহায্য চান না, বরং চান যত দ্রুত সম্ভব আইলার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলোর মেরামত, যাতে তারা ঘরে ফিরতে পারেন। উল্লেখ্য ঘূর্ণিঝড় আইলার পরে প্রায় আট লক্ষাধিক মানুষ প্লাবিত, ঘরবাড়ি জমিজিরাত ফেলে বিভিন্ন বাঁধ ও সড়কের অস্থায়ী ঝুপড়িতে আর বিভিন্ন শহরের বস্তি এলাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন।
আইলার আঘাতে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ও খুলনার কয়রা উপজেলার বাঁধগুলোর অনেক স্থানে ভেঙে গিয়েছিল: যেগুলোর কিছু মেরামত করা সম্ভব হলেও শ্যামনগরের গাবুরা ও পদ্মপুকুর এলাকার ভাঙনগুলো মেরামত করতে আমাদের বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল। গ্রামীণ জীবনযাত্রার স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযান-সিএসআরএলের পক্ষ থেকে আমরা যোগাযোগ রাখছিলাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) স্থানীয়, জেলা, বিভাগীয় প্রকৌশলীদের সঙ্গে ও ইউএনও-ডিসি-বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে; কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
অগত্যা আমাদের সংবাদ সম্মেলন, মিডিয়া ভিজিট, সমাবেশ, মিছিল, বাস্তুচ্যুতদের শোভাযাত্রা, কলসি নিয়ে সড়ক অবরোধ, অবস্থান ধর্মঘট আর খুলনায় সাত দিনব্যাপী আইলা-মঞ্চ সংগঠিত করতে হয়েছিল সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের বক্তব্য তুলে ধরার জন্য। প্রধানমন্ত্রী থেকে পাউবোর স্থানীয় প্রকৌশলী পর্যন্ত সংশ্নিষ্ট ২৪ জনকে আমরা প্রায় দুই বছর ধরে বাঁধ ভাঙন-মেরামত আর ভুক্তভোগীদের পুনর্বাসন-অভিবাসন বিষয়ে জাতীয় ও স্থানীয় পত্রপত্রিকার সমস্ত সংবাদের কপি পাঠিয়েছি রেজিস্ট্রি ডাকযোগে আর তার সারবক্তব্য পাঠিয়েছি ই-মেইল ও ফ্যাক্সযোগে। নিজে তৎকালীন খাদ্য ও দুর্যোগমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপির সঙ্গে দেখা করেছি দু’বার। আমাদের দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে তিনি ওইসব এলাকায় পরিদর্শনেও গিয়েছেন।
তখন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে পাউবোর খুলনা বিভাগীয় প্রকৌশলীকে পাঁচবার কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়েছিল। বিভাগীয় প্রকৌশলীকে বদলি করা হয়েছিল দু’বার। আমাদের অনুরোধে খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ বরাদ্দও দেওয়া হয়েছিল বাঁধ মেরামতের জন্য। কিন্তু তারও কোনো সুষ্ঠু ব্যবহার হয়নি। এজন্য মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি তার দ্বিতীয় পরিদর্শনে প্রকাশ্যে-জনসমক্ষে উষ্ফ্মা প্রকাশ করেছিলেন।
সবশেষে, অগত্যা আমরা বাঁধ মেরামতে সেনাবাহিনী নিয়োগের দাবি জানিয়েছিলাম এবং প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সফরের সবিনয় অনুরোধ জানিয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন; তারা বাঁধ মেরামত করেছিলেন এবং তিনি নিজে সে এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। উপরন্তু পরিবারপিছু ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ করেছিলেন ঘর তৈরিতে সহযোগিতা করার জন্য।
ষাটের দশক থেকে নির্মিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাঁধগুলোর একটা সমস্যা আছে। এগুলোর ডিজাইনে জোয়ার-ভাটাকে বিবেচনায় না নেওয়ায় নদীর তলদেশগুলো উঁচু হয়ে গেছে; ফলে নদীর বাইরের বসতভিটা-জমিজিরাতের উচ্চতা নদীপৃষ্ঠের উচ্চতার চেয়ে কমে গেছে; আর তার ফলে বাঁধ ভাঙনের মতো ঘটনা ঘটলে সহজেই বসতভিটা-জমিজিরাতে দিনে দু’বার নদীর লবণ-পানি ঢোকে আর বেরোয়; আর তার ফলে ভাঙনগুলো আরও প্রসারিত হতে থাকে। আগে প্রয়োজনে পানি ঢোকানো আর বের করার জন্য স্লুইচগেট ছিল, দেখভালের জন্য লোকও ছিল; বর্ণিত পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে স্লুইচগেটগুলো অকার্যকর হয়ে যাওয়ায় সে লোকবলও প্রত্যাহার করা হয়েছে।
পাউবো বাংলাদেশের বাঁধগুলোর নির্মাণ-সংস্কার-মেরামতের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান। এর কাঠামোগত সমস্যা হলো ভাঙন-নির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে মেরামতের জন্য বাজেট তৈরি করে প্রকল্প দাখিল করলে এটা সরকারের বরাদ্দ পায়; এ প্রক্রিয়ায় বেশ সময়ক্ষেপণ হয়। কিন্তু বাস্তবে ভাঙন একটি তাৎক্ষণিক ঘটনা, কোন ঘূর্ণিঝড়ে কোন বাঁধের কোথায় কতটুকু বিস্তৃতিতে ভাঙবে, তা আগে থেকে অনুমান করা যায় না। এ কাঠামোগত বা প্রক্রিয়াগত দুর্বলতার ফলে পাউবো বাঁধ মেরামতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে না। এর ফলে অবশ্য তাদের দুর্নীতি করার সুযোগও বেড়ে যায়।
বাঁধগুলো ভেঙে যায় প্রধানত সেসব স্থানে যেখানে এটা দুর্বল থাকে। নিজে অসংখ্য স্থানে ঘুরে ঘুরে বাঁধগুলো পর্যবেক্ষণ করেছি। বাঁধগুলো দুর্বল হয় মূলত দুই জায়গায়; যেখানে বাঁধ ফুটো করে পাইপ ঢুকিয়ে চিংড়ি চাষের জমিতে পানি আনা-নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়, আর যেখানে নলকূপ বসানো হয়। অভিযোগ রয়েছে, উভয় ক্ষেত্রে পাউবোর কর্মকর্তারা চিংড়ি ঘেরের মালিকদের কাছ থেকে মাসোহারা পান।
আরেকটি বিবেচ্য বিষয় হলো, ঠিকাদার ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ভূমিকা। বাঁধ নির্মাণ-সংস্কার-মেরামতের যারা ঠিকাদার, তারা স্থানীয় নন। ফলে যে ঠিকাদার কাজ পান, তিনি ‘বিক্রি’ করে দেন আরেক ঠিকাদারের কাছে। আবার তিনি আরেকজনের কাছে। এভাবে ঠিকাদার রি-চক্রে বাঁধের জন্য বরাদ্দের পরিমাণ পর্যায়ক্রমে কমতে থাকে। নির্দিষ্ট কাজটি আর হয় না; ড্রেজিংয়ে যেমন তেলচুরি, বাঁধ সংস্কারেও তেমনি মাটি চুরি হয়। নদীতে বা বাঁধ-ভাঙন স্থানে মাটি ফেলার হিসাব রাখার কোনো উপায় নেই। বাঁধের উচ্চতা, উপরে-নিচে তার প্রশস্ততা ও বরাদ্দের তথ্য দিয়ে আমরা একবার ৩০টি স্থানে সাইনর্বোড স্থাপন করেছিলাম, যদিও তা পাউবো বা ঠিকাদারের করার কথা, ঠিকাদাররা সেগুলো তাদের নিয়োজিত লোকদের মাধ্যমে অপসারণ করেছিল।
দুর্যোগকালে বসতভিটা-জমিজিরাত রক্ষায় নির্বাচিত স্থানীয় সরকার ও জনগণের স্বেচ্ছাশ্রম গত এক দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে একটি নতুন ঘটনা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দুর্যোগে জনগণ সবার আগে তাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে যান। এসময়কালে আমরা দেখেছি, চেয়ারম্যান-মেম্বার-জনগণ সকলে কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে মজুরের মতো গায়ে-গতরে খেটে বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করেন। তারা কখনও সফল হন, কখনও হন না। তাদের পরিশ্রমকে নিজেদের কাজ বলে চালিয়ে দেয় পাউবো। আম্পান-পরবর্তীকালেও জনগণ ও স্থানীয় সরকার অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাঁধ মেরামত করেছেন। এর বাইরে ডাইরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথডে পাউবোও কাজ করছে; শ্যামনগরের কাশিমারী ইউনিয়নে রিং বাঁধের কাজ অংশত সম্পন্ন হয়েছে, কিন্তু আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়ন এখনও পুরোটা প্লাবিত। এসব কাজ দ্রুত শেষ করতে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা আশা করছি।
আর দীর্ঘমেয়াদে, আমরা দাবি করছি, ১. বাঁধের সংরক্ষণ-সংস্কার-মেরামতের কাজ ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদসহ স্থানীয় সরকারকে প্রদান করতে হবে ও তার জন্য বরাদ্দ দিতে হবে; ২. পানি উন্নয়ন বোর্ড কেবল কারিগরি সহায়তার প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে; ৩. রিং বাঁধের বাইরে জমিহারাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ও পুনর্বাসন করতে হবে; ৪. জলবায়ু পরিবর্তন বিবেচনায় নিয়ে জনগণের অভিজ্ঞতা ও মতামতের ভিত্তিতে কমপক্ষে আগামী একশ’ বছরের জন্য স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করতে হবে, প্রয়োজনে ডেল্টাপ্ল্যানে পরিমার্জনা করতে হবে; ৫. জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় স্থানীয় পর্যায়ে অভিযোজন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে, জাতীয় পর্যায়ে নতুন নতুন শস্যজাত উদ্ভাবনে বরাদ্দ দিতে হবে; ৬. সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিসহ সকল কাজের ডিজাইন, বিবরণ ও বরাদ্দ বিষয়ে সকল তথ্য জনগণের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে।
এসব প্রস্তাবনা আমরা তৈরি করেছি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অডিটোরিয়ামে ও সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত দুটি শুনানিতে অংশগ্রহণকারী ক্ষমতাসীন দল ও জোটের সংসদ সদস্য ও সংশ্নিষ্ট সংসদীয় কমিটির সভাপতি, অর্থনীতিবিদ, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, পানি ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিনিধি আর ভুক্তভোগী জনগণের মতামতের ভিত্তিতে।
সাধারণ সম্পাদক, গ্রামীণ জীবনযাত্রার স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযান-সিএসআরএল

আপনার সামাজিক মিডিয়ায় এই পোস্ট শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর :
© All rights reserved © 2024
প্রযুক্তি সহায়তায়: csoftbd