ক্রিড়া প্রতিবেদক: করোনা সংক্রমণ বাড়ছে হু হু করে। এখন প্রায় সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ক্রিকেটাররাও আক্রান্ত হতে শুরু করেছেন। জাতীয় দলের সাবেক ওপেনার নাফিস ইকবাল প্রায় সপ্তাহখানেক আগে করোনা আক্রান্ত হয়ে এখন খানিকটা সুস্থতার পথে।সাবেক অধিনায়ক ও দেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব মাশরাফি বিন মর্তুজার করোনা পজিটিভ হয়েছে শনিবার। একইদিন জাতীয় দলের বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল অপুরও করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, মাশরাফি নিজ এলাকা নড়াইলে নানান সেবামূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করেছেন, প্রচুর সাহায্য সহযোগিতা করেছেন এবং সেটা সশরীরে উপস্থিত থেকে। একইভাবে নাজমুল অপুও নিজ হাতে করোনায় ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং ত্রান বিতরণ করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এসব সেবামূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে গিয়েই করোনা সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারেন মাশরাফি ও নাজমুল অপু।
শুধু মাশরাফি, নাফিস বা অপু নন, জাতীয় দলের অন্য ক্রিকেটাররাও করোনা ঝুঁকির বাইরে নন। এ অবস্থায় বিসিবি কী ভাবছে? ক্রিকেটাররা যাতে নিরাপদ থাকতে পারেন, সংক্রমিত না হন সেজন্য জাতীয় দলসহ অন্যান্য ক্রিকেটারদের জন্য বিসিবির কোন নির্দেশিকা আছে কি?
বিসিবি প্রধান চিকিৎসক দেবাশিষ জানান, ‘আমাদের পরামর্শ একটাই, অতি জরুরী ও দরকারি কাজ না থাকলে বাইরে বের হবেন না, ঘরে থাকুন। ঘরে থাকাই প্রথম ও শেষ কথা।’ডাঃ দেবাশিষ বলেন, ‘করোনা আক্রান্ত ৮০ ভাগ মানুষ বাসায় থেকেই ভাল হয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু বাকি ২০ ভাগ ভুগছেন। অনেকে ঠিকমত চিকিৎসা পাচ্ছেন না। কাজেই করোনা আক্রান্ত হয়ে ঝুঁকির ভেতরে পড়ার চেয়ে ঘরের বাইরে বের না হওয়াই উত্তম।’ তিনি যোগ করেন, ‘অবস্থাটা ভাবুন একবার। অন্যসময় কোন ক্রিকেটার অসুস্থ হলে আমরা ছুটে যাই। আত্মীয়-স্বজনরা সবাই যান হাসপাতালে। কিন্তু এখন তো সে সুযোগটাও নেই। কেউ যেতে পারছেন না। কারও হাসপাতালে যাবার অবস্থাও নেই। এমন ছোয়াচেঁ ব্যাপারটা। সে কারণেই আমার মনে হয় চেষ্টা থাকা উচিৎ করোনা যাতে না হয়। আমাদের সবসময় সতর্ক ও সাবধানি থাকতে হবে যাতে করোনা নিজের ও পরিবারের কারো মাঝে সংক্রমিত না হয়। তাই বলা হচ্ছে ঘরে থাকেন, বের হবেন না। সেটাই নিরাপদ।’
তারপরও বিসিবি থেকে কোনরকম উপদেশ দেয়া যায় কি না? অনেক ক্রিকেটারই সেবামূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করেছেন, ত্রান বিতরণ করেছেন। মাশরাফি, তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহসহ আরও অনেক ক্রিকেটার শুরু থেকেই করোনায় ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করছেন। কেউ কেউ সশরীরে সেই ত্রান বিতরণ করেছেন। সেই সশরীরে বাইরে গিয়ে করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে খাবার, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী ও অর্থ সাহায্য করছেন। ফলে তাদের ঘর থেকে বের হতে হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরাপদ দূরত্ব বজায় চললেও একটা ঝুঁকি কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে ক্রিকেটারদের এই সশরীরে মানব সেবা ও সাহায্য সহযোগিতা প্রদান কাজকর্ম না করে অন্য কারও মাধ্যমে তা বিতরণ করলে করোনা সংক্রমনের ঝুঁকি কম থাকবে। বিসিবি কি ক্রিকেটারদের স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে তেমন কোন নির্দেশিকা দেবে?
এমন প্রশ্নের জবাবে ডাঃ দেবাশিষ চৌধুরী জানান, ‘ক্রিকেটাররা এমনিতেই অনেক বেশি সতর্ক। একমাত্র মাশরাফিই সশরীরে ত্রান বিতরণ করেছেন এবং করোনায় ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। তিনি দেশ বরেণ্য ক্রিকেট ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি একজন জনপ্রতিনিধিও, তাই নিজ এলাকার সাধারণ মানুষকে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন একদম মাঠে নেমে। কিন্তু বর্তমান জাতীয় দলের আর কোন ক্রিকেটার সশরীরে ত্রান বিতরণ করেননি। তারা কারও না কারও মাধ্যমে খাদ্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী এবং অর্থ সাহায্য করে যাচ্ছেন।’‘তবে আমরা এখন পর্যন্ত কোন নির্দেশিকা দেইনি। হয়তো এখন সময় এসেছে বোর্ড থেকে একটা নির্দেশিকা দেয়ার। যেখানে বলা থাকবে, মানবিক কারণে অতি অবশ্যই করোনাকালীন সময়ে সাহায্য সহযোগিতা করা যাবে। তবে সেটা সশরীরে গিয়ে নয়। অন্য কাউকে দিয়ে। তাহলে আর ঘর থেকে বের হতে হবে না। করোনায় সংক্রমিত হবার সম্ভাবনাও থাকবে কম।’
Leave a Reply