1. faysal.ce@gmail.com : dakshinermashal :
  2. abuhasan670934@gmail.com : Hasan :
  3. sakalctc.bd@gmail.com : Nityananda Sarkar : Nityananda Sarkar
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০৪ অপরাহ্ন
৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১
Latest Posts
📰আশাশুনিতে জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত📰প্রত্যেক উপজেলায় একটি সরকারি মাদ্রাসা করার সুপারিশ: সাতক্ষীরা ডিসি📰হাসিনাকে ফেরত না দিলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক সুখের হবে না: ড. ইউনূস📰পাশের দেশের মিডিয়া মিথ্যা প্রচার করে বেশি : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা📰সাতক্ষীরার তিন নারী ফুটবলারকে গণসংবর্ধনা দেবে জেলা প্রশাসন📰জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ 📰সাতক্ষীরার কলারোয়ায় শিশু শ্রম ও শিশু অধিকার বিষয়ক সিসিডিবি’র কর্মশালা📰জমজমের পানি পানে ৮ নির্দেশনা দিলো সৌদির📰দুহাত তুলে দোয়া চাইলেন পলক📰চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রিতে

করোনাকালে শংকিত প্রাণবৈচিত্র্য ও মাতৃভাষা

প্রতিবেদকের নাম :
  • হালনাগাদের সময় : বৃহস্পতিবার, ৪ জুন, ২০২০
  • ২১৫ সংবাদটি পড়া হয়েছে

পাভেল পার্থ

করোনাকালে কত শংকা আর আহাজারি চারদিকে। করোনার নিদান মানুষের সংসার ও চৌহদ্দি চুরমার করে দিচ্ছে। অপরদিকে জাগছে বাস্তুসংস্থানের আরেক মায়াময় চিত্রকলা। করোনাকালে প্রাণ, প্রকৃতি ও পরিবেশ প্রশ্নে সজাগ দুনিয়া। জাতিসংঘ পরপর দুটি বৈশ্বিক দিবসের প্রতিপাদ্যেও বিষয়টি ধরবার চেষ্টা করেছে। ২২ মে প্রাণবৈচিত্র্য দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘প্রকৃতির মাঝেই সকল সমাধান’ আর ৫ জুন পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘প্রাণবৈচিত্র্য উদযাপন’। প্রাণবৈচিত্র্য নিয়ে অধিপতি ব্যবস্থার মনস্তত্ত্ব¡ ও রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে এই করোনাকালে বহু আলাপ তুলেছি। প্রতিবেশ প্রশ্নে আমাদের প্রবল মানুষকেন্দ্রিক চিন্তা আজ এক জটিল প্রশ্নের মুখোমুখি। করোনাকালের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্যকে নাভিকুন্ডে রেখে প্রকৃতি ও সংস্কৃতির পরস্পরনির্ভরশীল একটা সম্পর্ককে আজ বুঝতে চাইবো আবার। বোঝার চেষ্টা করবো একটি পাখি বা মানুষ হারিয়ে গেলে কী হয়? হয়তো অনেক কিছুই। খাদ্যশেকলে টান লাগে, বাস্তুতন্ত্রে চির ধরে। কিন্তু মানুষের সংস্কৃতিতে এর রক্তক্ষয়ী দাগ লাগে। যার যন্ত্রণা সইতে হয় মাতৃভাষাকে। প্রকৃতিতে থেকে ‘নানিদ মাছ’ হারিয়ে গেলে মানুষের ভাষিক সংস্কৃতি থেকেও তা হারিয়ে যায়। আবার যে মানুষের মাতৃভাষায় ‘নানিদ’ আছে সেই মানুষ হারিয়ে গেলে তার নানিদময় ভাষাটিও নিখোঁজ হয়। দুনিয়ায় অজ¯্র প্রাণপ্রজাতি যেমন প্রায় হারিয়ে যাওয়ার রেখায়, তেমনি অনেক মাতৃভাষাও এমনি হারানোর শংকায়। করোনাকালে ‘প্রাণবৈচিত্র্য প্রশ্নটি’ তাই প্রকৃতি ও সংষ্কৃতির এক জটিল সম্পর্ক থেকেই পাঠ হওয়া জরুরি। করোনাকালে দুনিয়া থেকে নিদারুণভাবে হারিয়ে গেছেন লাখো মানুষ। একইসাথে হারিয়ে মালয়েশিয়া থেকে হারিয়ে গেছে সুমাত্রা গন্ডার, হারিয়ে গেছে কত শস্যকণা, পতঙ্গ কী অণুজীব। মানুষসহ প্রাণবৈচিত্র্য নয়, করোনাকালে আমরা হারিয়েছি একটি মাতৃভাষাও। আন্দামান দ্বীপের ‘সারে’ ভাষাটিও হারিয়ে গেছে করোনাকালে, শেষ সারেভাষীর মৃত্যুর ভেতর দিয়ে। করোনার নিদানে তাই প্রাণের বৈচিত্র্য সুরক্ষায় আমাদের বৈচিত্র্যের প্রান্তিকতাকে গুরুত্ব দেয়া জরুরি। কে কীভাবে কেন ঝুঁকিপূর্ণ? সরীসৃপ, পাখি, পতঙ্গ, স্তন্যপায়ী থেকে বিলুপ্তপ্রায় মাতৃভাষা ও আদিজ্ঞান চর্চাকারী সকলকেই বিশেষভাবে বোঝাটা জরুরি। বাংলা বাঘ কী শকুন, ইরাবতী ডলফিন কী চামচ ঠুঁটো বাটান পাখি যেমন সংখ্যায় কম এবং বিলুপ্তির আশংকায় তাই এদের সুরক্ষায় আমাদের বিশেষ মনোযোগ থাকে। একইভাবে রাষ্ট্রের যেসব ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা একেবারেই তলানিতে এবং আদি লোকজ্ঞান চর্চাকারী যারা একেবারেই গোণাগুনতির ভেতরেই পড়েন না সেই সংস্কৃতির সুরক্ষাপ্রশ্নেও আমাদের বিশেষ কারিগরি ও মনোযোগ জরুরি। শেরপুরের মারগ্যান কোচভাষী পরিবার মাত্র ২৮, বান্দরবানের রেংমিটচাভাষী মাত্র ৩০ জন কিংবা দিনাজপুরের কড়াভাষী ৯৮ পরিবার। করোনাকালে ভাষিক সুরক্ষার প্রশ্নে অন্য অনেকের চেয়ে এই মানুষদের সংকট অনেক জটিল এবং এই মাতৃভাষাগুলিও বিপদাপন্ন। করোনাকালে আন্দামান-নিকোবর, আমাজন অরণ্য কী পাপুয়া দ্বীপপুঞ্জসহ দুনিয়াময় বিপদাপন্ন ভাষিক জনগোষ্ঠীর তরে বিশেষ সুরক্ষা মনোযোগ তৈরির দাবি ওঠছে। বাংলাদেশসহ দুনিয়াময় এই মনোযোগের একটা বৈশ্বিক কাঠামো জোরালো হওয়া জরুরি। আর করোনাকালের পরিবেশ দিবসে এটিই প্রাণবৈচিত্র্য উদযাপনের এক বিশেষ বার্তা। মানুষকেন্দ্রিক প্রবল বাহাদুরির বাইরে গিয়ে প্রকৃতি ও সংস্কৃতির জটিল ব্যাকরণ থেকেই আজ আমাদের প্রাণের বৈচিত্র্যকে বুঝতে হবে।

প্রাণ, প্রকৃতি ও মাতৃভাষা
অভিন্ন যমজেরা যেমন হয়। একজন চোট পেলে আরেকজন কঁকিয়ে ওঠে। কারো বুকে ব্যথা হলে আরেকজন তড়পায়। ভাষা ও প্রাণবৈচিত্র্যও তেমনি অভিন্ন যমজ। একজন আরেকজনের লগে জড়াজড়ি করে, পালককুসুম মেলে বিকশিত করে যোগাযোগের ময়দান। ভাষা তাই কোনোভাবেই একপাক্ষিক, একসূত্রীয় কোনো মাধ্যম নয়। বনপাহাড় থেকে জন্ম নিয়ে উজান থেকে ভাটিতে সংসার সাজায় নদী। নদীসংসারের চারধার জুড়ে অববাহিকা থেকে অববাহিকায় সেই নদী ঘিরে নি¤œবর্গের জীবনে তৈরি হয় নদীভাষার এক অবিস্মরণীয় ব্যাকরণ। লুটতরাজ রাষ্ট্র কী উন্নয়নের বাণিজ্যদম্ভ যখন সেই নদীকে ফালি ফালি করে হত্যা করে, গুম করে, দখল করে তখন কিন্তু নদীঅববাহিকার নদীভাষা বদলে যেতে বাধ্য হয়। নদী অববাহিকার আপন ভাষা তখন আর যোগাযোগের আপন ‘ঠাহর’ হিসেবে বিরাজিত থাকে না। মেঘকণা, রোদ্দুর, পাথর, অবিরাম জলরাশি, হাজারো ধানের জাত, পাখি, পতঙ্গ, বাঘ কি কুমির, সাপ ও সরীসৃপ, বৃক্ষগুল্মলতা, মাটি, কেঁচো, মানুষ, ব্যাঙের ছাতা কি উঁইঢিবি প্রাণের এমনতর শতকোটি বিন্যাসই তৈরি করেছে মানুষের ভাষাপরিসর। প্রাণবৈচিত্র্যের একটি প্রাণের বিলুপ্তি মানে ভাষা থেকে তার সকল আমেজ ও অস্তিত্ব¡ মুছে যাওয়া। আমন মওসুমের এক ছোট্ট আকারের ধান পিঁপড়ারচোখ। ধানের খোসায় পিঁপড়ার চোখের মতো কালো বিন্দু আছে বলেই এই ধানের এমন নাম। ময়মনসিংহ ও নেত্রকোণা অঞ্চল এ ধানের আদিবসত। পিঁপড়ারচোখ ধানটি হারিয়ে গেছে। অধিকাংশ সময়ই এসব ঘটনাকে কেবলমাত্র প্রাণবৈচিত্র্যের বিলুপ্তি, পরিবেশ বিপর্যয়, উৎপাদন জটিলতা, কৃষি ঐতিহ্য এসব দিয়েই ব্যাখা করা হয়। কিন্তু একটি ধান হারিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে কোনো ভাষায় ওই ধানসম্পর্কিত রূপকল্প ও শব্দবিন্যাসের যে পরিবর্তন ঘটে আমরা ‘ভাষা পরিসর কী প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষার’ আলাপে কখনোই তা দেখতে পাই না। এখন পিঁপড়ারচোখ বলতে ধান নয়, কেবলমাত্র পিঁপড়া নামক এক ক্ষুদে পতঙ্গের চোখকেই আন্দাজ করতে হবে।

একটি পাখি হারিয়ে গেলে কি হয়?
এই যে করোনাকালে সুমাত্রা গন্ডার হারিয়ে গেলো দুনিয়া থেকে তাতে কী এমন হলো? কিংবা আমাজন কী অস্ট্রেলিয়ায় দাবানলে হারালো কত জানা-অজানা প্রজাতি তাতে কী হবে? হচ্ছে তো বটেই হবে আরো হয়তো অকে কিছুই। দুনিয়ার বাস্তুশেকলে চির লাগবে। প্রকৃতিতে বেসামাল বিশৃংখলা তৈরি হবে। ঠিক যেমন করোনার নিদান। একটি ভাইরাস বাদুড় কী বনরুইয়ের সাথে মিলেমিশে ছিল। হয়তো কোনো সমাজ লোকজ্ঞানে সেসব ব্যবহারও করতো। কিন্তু মানুষ যখনি বাণিজ্য শুরু করলো, মুনাফার বাহাদুরি করলো তখনি এই ভাইরাস মানুষের জন্য বিপদজনক হয়ে ওঠলো। কোনো এলাকা থেকে একটি পাখি হারিয়ে গেলে ওই এলাকার মানুষের ভাষা থেকেও ওই পাখিটি হারিয়ে যায়। ওই পাখি সম্পর্কিত সকল বিশ্বাস-আচার-রীতি হারিয়ে যায়। আমরা বনরুইয়ের কথা টেনেছিলাম। একটাসময় দেশের বর্ষারণ্য, শালবনসহ গ্রামীণ অরণ্যে বনরুই নামে এক প্রাণি ছিল। প্রাণিটির নিদারুণ বিলুপ্তি দেশের অধিকাংশ জাতির ভাষা থেকে এই শব্দ ও বনরুইকেন্দ্রিক ধারণাসমূহ হারিয়ে যাচ্ছে। মান্দিদের আ.চিক ভাষায় বনরুই মানে কাওয়াথি এবং কোচ ভাষায় কাওতাই। কিন্তু নতুন প্রজন্মের মান্দি ও কোচ শিশুদের মাতৃভাষা থেকে শব্দদ্বয় নিদারুণভাবে হারিয়ে গেছে। আজকের কোচ শিশুরা বুঝবেই না ‘ওলামাখরাই’ কী? কারণ লজ্জাবতী এই বানরটি প্রায় দুই দশক আগে শালবন থেকে নিশ্চিহ্ন হয়েছে।

করোনা-উত্তর দুনিয়ায় ভাষা ও প্রকৃতি
দেশের মঙ্গোলয়েড মহাজাতির অংশ খাসি, মান্দি, ¤্রাে ও মারমা ভাষায় এক বহুল ব্যবহৃত শব্দ ‘চি’। খাসি ভাষায় এর মানে ভাত, মান্দি ভাষায় জল, ¤্রাে ভাষায় গাছ আর মারমা ভাষায় এর মানে ঔষধ। একই শব্দ, একই উচ্চারণ ব্যঞ্জনা নানান জাতির নানান ভাষায় নানান অর্থ নিয়ে দাঁড়ায়। এটিই ভাষার রূপ, আর ভাষার এই রূপশরীর গড়ে তুলেছে চারধারের প্রাণের অবারিত রূপঐশ্বর্য। ইংরেজিসহ ভাষিক বাহাদুরি প্রতিদিন নি¤œবর্গের ভাষাসমূহকে গলাটিপে হত্যা করছে। প্রতি দু’সপ্তাহে একটি করে ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। গত ১০০ বছরে প্রায় ৪০০০ ভাষা হারিয়ে গেছে। এই করোনাকালে দুনিয়া থেকে কত যে মাতৃভাষা হারাবে কে জানে? কত প্রান্তিক ভাষিক জনগোষ্ঠী সংকটে পড়বে কত রকেমর কে তার খোঁজ রাখবে? কিংবা করোনা-উত্তর দুনিয়া যদি আরো মুনাফার জন্য উন্মত্ত হয়, আরো কারখানা চাঙ্গা করে, আরো কার্বন ছড়িয়ে দেয়, আরো জংগল ও জলাভূমি দখল করে তবে প্রাণবৈচিত্র্য আরো হুমকীর সম্মুখীন হবে। প্রাণ-প্রকৃতির সেই বিনাশও বিপদাপন্ন ভাষাসমূহের টিকে থাকাকে আরো জটিল প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাবে। তার মানে করোনা-উত্তর সময়ে প্রাণবৈচিত্র্যের সুরক্ষা কৌশলকে আমাদের প্রকৃতি ও সংস্কৃতির চলমান প্রান্তিকতার ময়দান থেকেই পাঠ করতে হবে এবং বৈশ্বিক অবস্থান জোরালো করতে হবে।

লীচোর চলে যাওয়া ও বৈশ্বিক পরিবেশ-প্রশ্ন
বলা হয়ে থাকে চর্চাকারীর সংখ্যার উপরে কোনো ভাষা টিকে থাকার শর্ত জড়িত। ৫০০০ চর্চাকারী থাকলেও সেই ভাষা টিকবে কিনা তা নিয়ে শংকা থাকে। ভারতের আন্দামান-নিকোবর দ্বীপের গ্রেট আন্দামানিজ ভাষা পরিবারের সারে ভাষার শেষ চর্চাকারী ছিলেন রাজা জিরোকের কন্যা লীচো। করোনাকালে ৪ এপ্রিল তিনি মারা যান। মৃত্যু ঘটে একটি জীবন্ত মাতৃভাষার। লীচো ও সারে ভাষার মৃত্যু আমাদের করোনাকালে আবারো এক বৈশ্বিক পরিবেশ-প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিল। প্রকৃতি ও সংস্কৃতির প্রান্তিকতাকে আমরা কীভাবে দেখবো? কীভাবে বুঝবো? কেমন উন্নয়ননীতি বহাল রাখবো? কেন বাঘ কী শকুন বা সারে ভাষা কী কোনো আদিবাসী জীবন একই নয়াউদারবাদী ব্যবস্থার ভেতর থেকেও প্রান্তিক হয়ে থাকে? মুষড়ে পড়ে, মুর্মূষু হয়ে ওঠে? দেশ থেকে দুনিয়া এইসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজাটা খুব জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এর ওপরই নির্ভর করছে এই মাতৃদুনিয়ায় সকলের বিকশিত হওয়ার ধারাপাত।
…………………………………………….
গবেষক ও লেখক। ধহরসরংঃনধহমষধ@মসধরষ.পড়স

আপনার সামাজিক মিডিয়ায় এই পোস্ট শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর :
© All rights reserved © 2024
প্রযুক্তি সহায়তায়: csoftbd