**************************
রুদ্র সেজান হক : সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দ্বিতীয় পুত্র বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গর্বিত অফিসার, মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামালের ৬৭ তম জন্মদিন আজ ২৮ এপ্রিল।
১৯৫৪ সালের ২৮ এপ্রিল গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কিছু বিপথগামী উচ্ছৃঙ্খল সেনা কর্মকর্তার হাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নিহত হন শেখ জামাল।
শেখ জামালের মুক্তিযুদ্ধে যোগদান ছিল ঘটনাবহুল। তিনি বঙ্গবন্ধু পরিবারের বাকী সদস্যদের মতই গৃহবন্দী ছিলেন। মধ্য আগস্টের একদিন সকালে তার মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব দেখতে পান ছেলে ঘরে নেই। বেগম মুজিব তার সন্তানকে অপহরণের অভিযোগ তুললেন পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে। সারাবিশ্বে আলোড়ন, বিদেশি পত্রপত্রিকায় ছাপা হলো পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবের ছেলেকে গায়েব করেছে।
গৃহবন্দি দশা থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর তখনকার উত্তর প্রদেশের দেরাহদুনের টেন্ডুয়া সেনানিবাসে বিএলএফ তথা মুজিব বাহিনীর হয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিয়ে সম্মুখ সমরে অংশ নেন। তিনি সমন্বিতভাবে
মুজিব বাহিনীর হয়ে ৫ নং সেক্টরে তিনি যুদ্ধ করেন। তবে কোনো এক কৌশলগত কারণে এ কথা চেপে রেখেছিল তৎকালীন প্রবাসী সরকার।
শেখ জামাল অত্যন্ত চাপা স্বভাবের মানুষ ছিলেন, মনের কথা মনেই রাখতেন সহজে বের করতেন না। ১৯৫৪ সালের ২৮ এপ্রিল গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা রেসিডেনশিয়াল মডেল কলেজ থেকে ম্যাট্রিক ও ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। তিনি অত্যন্ত পড়ুয়া প্রকৃতির ছিলেন, দিনের বেশিরভাগ সময়ই পড়াশোনায় ডুবে থাকতেন।
ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে পালিয়ে শেখ জামাল সরাসরি চলে গিয়েছিলেন সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে। তারপর ট্রেনিং শেষ করবার পর তাকে মুজিব বাহিনীতে নেওয়া হয়। সেখানেই যুদ্ধের বাকি সময় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ছিলেন জামাল। কিন্তু জামালের এই খবরটা সঙ্গত কারণেই একেবারে চেপে যায় স্বাধীন বাঙলা প্রবাসী সরকার, কারণ এই ইস্যুতে প্রবাস সরকার এবং ভারত সরকারের তীব্র চাপে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রচণ্ড বেকায়দায় পড়েছিল পাকিস্তান সরকার।
২ ডিসেম্বর লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় মুক্তিযুদ্ধের যেসব আলোকচিত্র আসে তার একটিতে সীমান্তের ১০ মাইল ভেতরে একটি রণাঙ্গনে সাবমেশিনগানধারীদের একজন হিসেবে ছবি ওঠে জামালের।
যুদ্ধশেষে সদ্য কমিশন পেয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। শেখ জামাল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লংকোর্সের প্রথম ব্যাচের কমিশন্ড অফিসার। পরিবারের সকলকেই সুখবরটি দিতে বাড়িতে এসেছিল। ১৪ আগস্ট রাতেই ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। বেগম মুজিব নাকি স্নেহভরে তাকে বলেছিলেন, ‘আজ রাতটুকু থেকে ভোরে যাস।’ জামালের ক্যান্টনমেন্টে আর যাওয়া হয়নি।
পরদিন রাত ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের শিকার শেখ জামালসহ তার পরিবার। এভাবেই থেমে যায় এই টগবগে তরুণের আলো।
আজকের দিনটিকে যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালন উপলক্ষে সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বনানীর শেখ জামালের কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ ও তার পবিত্র আত্মার মাগফিরাত কামনা করে ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শহীদ শেখ জামালের জন্মদিনে তাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে স্মরণ করার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীসহ দলের সব সহযোগী সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
পাদটীকা
********
শেখ জামাল আগরতলা থেকে বিমানে উত্তর প্রদেশ- এর দেরাহদুনের টেন্ডুয়া সেনানিবাসে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এখানেই আজকের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, কামরুল আনাম খান খসরু, মোস্তফা মহসীন মন্টু, শেখ মারুফ, অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী, শেখ শহীদুল ইসলাম, আ ফ ম মাহবুবুল হক, খোন্দকার মোজাম্মেল হক, আহসান উল্লাহ মনি, কুদরতে এলাহি পনির, সিদ্দিক জামাল নান্টুসহ ছাত্রলীগের নেতারা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণের সময় মান্নান চৌধুরী এবং শেখ মারুফ ছিলেন শেখ জামালের রুমমেট।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা আ স ম আবদুর রব, শাহজাহান সিরাজ, আবদুল কুদ্দুস মাখন, কাজী আরেফ আহমদ, মোস্তাফিজুর রহমান, মনিরুল হক চৌধুরী, মার্শাল মনি, সৈয়দ রেজাউর রহমান, মাহমুদুর রহমান বেলায়েত প্রমুখ ছিলেন প্রথম সারির কমান্ডার।
তখনকার চার বিভাগের সামরিক অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন শেখ ফজলুল হক মনি, সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক এবং তোফায়েল আহমদ। মুজিব বাহিনীর প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন ভারতীয় মেজর জেনারেল সুজন সিং ওবান।
( আজকের সূর্যোদয় অনলাইন হতে গৃহীত)
Leave a Reply