এসএম নাসির উদ্দীন : দেবহাটায় সাঁপমারা খাল খননের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কাজ শেষ হওয়ার আগেই পাড়ের মাটির ধ্বসে আবার পুরন হচ্ছে খাল। একে চলছে দুর্নীতি তাতে যে টুকু কাজ হচ্ছে তাও বিফলে যাওয়ার উপক্রম। এ যে মানুষের আশার গুড়ে বালি দেওয়ার মত। দেবহাটাÑআশাশুনি এলাকার বিশাল জনগোষ্টির একটি বৃহত অংশ খাল খননকে সাধুবাদ জানিয়ে আশায় বুকবেঁধে ছিল। তাদের এ আশা যেন বিলীন হতে চলেছে অসাধু কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কারনে। ভেস্তে যেতে বসেছে সরকারের কয়েক কোটি টাকা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে খাল পুনঃখননের নামে চলছে অনিয়ম আর লুটপাট। খালের গতিপথ পরিবর্তন করে প্রভাবশালীদের বাঁচাতে অসহায়দের ভোগ দখলীয় জমিতে খাল-খনন করার অভিযোগও উঠেছে। কিন্তু এখনও রয়ে গেছে প্রভাবশালী প্রতিপত্তিদের ভবনসহ বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যা বর্তমানে দৃশ্যমান। গরীব অসহায় পরিবারের লোক গুলো দেখছে আর চোখের পানি ফেলছে। এমন কি ভুক্তভোগী ভূমি মালিকরা উপায়ান্তর না পেয়ে ঠিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস হারিয়ে ফেলছে।এমনই অভিযোগ উঠেছে পারুলিয়া ব্রীজ সংলগ্ন এলাকায়।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তিরা জানান,পার্শ্ববর্তী এলাকার রবিন বিশ্বাস,জনতা ফার্মেসীর শর্তাধীকারী দেবু বিশ্বাস,শুশিল বিশ্বাস,নুর হোসেন,অনিল,পাগল বাবু,মুনছুর ওরফে কাঠ মুনছুরের জায়গা রক্ষা করতে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। অথচ খালের অন্যান্য অংশে দিকে একটু লক্ষ করলে দেখা যাবে গরীব অসহায় পরিবার গুলোর বসত বাড়ি কিভাবে ভেঙে ফেলা হয়েছে।কিছু কিছু স্থানে কালের স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে প্রভাব শালী টাকা ওয়ালাদের ঘর। তবে একটি সুত্র থেকে জানাযায়,পারুলিয়া ব্রীজ সংলগ্ন স্থানটি উল্লেখিত ব্যক্তিরা তাদের রেকর্ডীয় সম্পত্তির অর্ন্তভুক্ত দেখাতে মাপজরিপের সময় সার্ভেয়ারসহ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের সাথে মোটা অংকের টাকা লেন দেন করে। তাছাড়া পাড়ের মাটি পাড়ে রেখে সেখান থেকে মাপ ধরে কাটছে তলদেশের মাটি। এক মাথা দিয়ে শেষ করে আসতে আসতে পাড়ের মাটি ধ্বস নেমে পুরন হয়ে যাচ্ছে আবার খাল ভরাট। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবদ্ধতা নিরসনে বদ্ধ পরিকর। তাই তিনি এদেশের নদ-নদী, খাল-বিল, হাওড়-বাওড়সহ পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহন করেছেন। যার ধারাবাহিকতায় আশাশুনি ও দেবহাটা উপজেলার সংযোগ হওয়া সাঁপমারা খাল খননকল্পে গ্রহন করা হয়েছে দুইটি প্রকল্প। সরেজমিনে যেয়ে জানা যায়, গত বছরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধীনে নদী খনন পর্যায়ে দেবহাটার সাঁপমারা খালটির আশাশুনীর শোভনালী ইউনিয়নের কাটাখালী হতে দেবহাটার পারুলিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত দেবহাটা সদর ইউনিয়নের ভাতশালায় ইছামতি নদীর সংযোগস্থল পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ খাল খননের জন্য দুইটি প্যাকেজে ১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। বরাদ্দ পরবর্তী টেন্ডারের মাধ্যমে খাল খননের দুটি প্যাকেজের কাজ পায় পটুয়াখালীর আবুল কালাম আজাদ ও ঢাকা বিজয় নগরের বশির উদ্দীনের এমকে এন্টারপ্রাইজ নামের দুই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সাঁপমারা খালটির ৯ কিলোমিটারের এ খননকাজে উপরিভাগে গড়ে ৩০ মিটার এবং তলদেশ গড়ে ৯ মিটার হারে খনন করা হবে বলে জানিয়েছেন পাউবো কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া খালটি খনন কাজ চলাকালে দু পাশের ১৫ ফিট করে জায়গা রেখে খালের খননকৃত মাটি ফেলতে হবে বলে জানা গেছে। সরকারীভাবে সাঁপমারা খাল খননের প্যাকেজ দুটির একটির কাজ আগামি জুন ও অপরটি আগামি ডিসেম্বর মাসের মধ্যে শেষ করার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে খনন কাজ শুরুর পর খালটির দু’পাশে বসবাসরত শতশত পরিবারকে তাদের ঘর, আসবাবপত্র সরিয়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। বর্তমানে গৃহহারা সে সব পরিবার বিশ্বব্যাপি করোনা ভাইরাসের প্রভাবে কর্মহীন হয়ে খোলা আকাশের নিচে অত্যান্ত মাতবতার জীবন যাপন করছে। তাদের জন্য নতুন আবাসস্থলের দাবী জানানো হলে তাদের পুনবাসনের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছিল সে সময়। এ ব্যপারে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)’র এসও সাইদুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে,তিনি ম্যাপ অনুযায়ী মেপে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান।তবে এ সব দুর্নীতির সুষ্ঠ তদন্তের দাবী জানিয়েছে এলাকাবাসী।
Leave a Reply