করোনা যুদ্ধ : মসজিদ ছেড়ে বাড়িতেই মুসল্লিরা

॥ এম কামরুজ্জামান ॥

করোনা ভাইরাস সারা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। মরণব্যাধি করোনার ভয়াল ছোবল থেকে বাঁচার জন্য সারা বিশ্ব যখন লকডাউন তখনও বাংলাদেশের অসচেতন মানুষকে ঘরে ফিরাতে হিমসিম খাচ্ছে প্রশাসন। আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে যখন লাফিয়ে লাফিয়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তখনও সেদেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশী পাসপোর্টধারীরা দেশের বিভিন্ন ইমিগ্রেশন দিয়ে প্রবেশ করছে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার কোন শেষ নেই।
গত ২৪ ঘন্টায় বাংলাদেশে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছে ১১২ জন। এনিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩০ জন। নতুন করে মৃত্যু হয়েছে এক জনের। মোট মৃত্যুর সংখ্যা ২১ জন। আক্রান্তের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে।
সাতক্ষীরা জেলায় গতকাল বুধবার পর্যন্ত করোনা পরীক্ষার জন্য ৯১ জনের নমুনা পাঠানো হয়েছিল। বৃহস্পতিবার নতুন আরও ২৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এনিয়ে মোট নমুনা সংগ্রহ করা হলো ১১৪ জনের। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মাত্র ৮টি নমুনা রিপোর্ট সাতক্ষীরা স্বাস্থ বিভাগের হাতে এসেছে। বাকী রিপোর্ট এখনো আসেনি। তবে আজ পর্যন্ত সাতক্ষীরায় কোন করোনা আক্রান্ত রোগি সনাক্ত হয়নি।
গ্রামাঞ্চলে মানুষের মধ্যে করোনার শক্তিশালী আক্রমন-ভীতি সৃষ্টি হচ্ছে না। তবে প্রশাসনের জোরালো ভূমিকার কারণে গ্রামের মানুষ স্থানীয় হাট-বাজারে এসে আর আড্ডা দিচ্ছে না। বিকেল বা সন্ধ্যার আগেই গ্রামের হাট-বাজার গুলো ফাঁকা হতে শুরু করেছে। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা মসজিদে না গিয়ে তারা বাড়িতে নামাজ আদায় করছে বলে বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য আসছে। এটি আমাদের জন্য অবশ্যই আশা জাগানোর খবর।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকার একাধিক মসজিদের ইমাম ও মুসল্লির সাথে কথা বলছিলাম। হতাশা নয়, তারা আশার কথা শুনালেন। তারা বললেন শহর থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যন্ত অধিকাংশ মসজিদ ফাঁকা হয়ে গেছে। মুসল্লিরা এখন আগের যেয়ে অনেক সচেতন হয়েছে। বাড়িতেই নামাজ আদায় করছে। একজন ইমাম বললেন ‘ধর্মমন্ত্রনালয় এবং ইসলামী ফাউন্ডেশন যে আদেশ দিয়েছে আমরা সে-টি পালন করছি। মুসল্লিদেরকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে ওয়াক্তিয় নামাজে ইমাম, মোয়াজ্জিন এবং মসজিদের সবচেয়ে নিকটবর্তী ৩ জন মুসল্লি ছাড়া আর কেউ আসতে পারবেন না। মুসল্লিরাও সেটা মেনে নিয়েছে। বাড়িতেই তরা নামাজ আদায় করছেন’।
কথা বলছিলাম সনাতন ধর্মের একজন পুরোহিতের সাথে। তিনি জানালেন ‘পূঁজাসহ ধর্মিয় কোন অনুষ্ঠানে আমরা আর যাচ্ছি না। গোটা মানবজাতির কল্যানে, করোনা ভাইরাসের ভয়াল ছোবল থেকে রক্ষা পেতে আমাদেরকে ঘরে অবস্থান নেয়া খুবই প্রয়োজন’।
আর এক মুহুর্ত দেরী নয়, করোনা প্রতিরোধে ইমাম পুরোহিতসহ সব ধর্মের দর্মীয় নেতাদেরকে সচেতন হতে হবে। করোনার কোন ওষুধ এখনও আবিস্কার হয়নি। সচেতনতাই একমাত্র প্রতিষেধক। আমরা আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে মানুষকে সচেতন করি। আসুন করোনা প্রতিরোধে নিজে ঘরে অবস্থান করি, অন্যকে ঘরে থাকতে উৎসাহিত করি। এর পরও ঘরে থাকতে যারা রাজি নয়, তাদেরকে ঘরে থাকতে বাধ্য করি।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *