1. faysal.ce@gmail.com : dakshinermashal :
  2. abuhasan670934@gmail.com : Hasan :
  3. sakalctc.bd@gmail.com : Nityananda Sarkar : Nityananda Sarkar
বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫, ০১:২৩ পূর্বাহ্ন
২৭ চৈত্র, ১৪৩১
Latest Posts
📰গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ📰ভূমিদস্যু কর্তৃক শ্যামনগরের ১০টি অসহায় পরিবারের ভিটাবাড়ি জবরদখল চেষ্টার প্রতিবোদে সংবাদ সম্মেলন📰আশাশুনিতে বানভাসী মানুষের মাঝে জেলা পুলিশের পক্ষে উপহার সামগ্রী বিতরণ📰আশাশুনিতে বাংলা নববর্ষ  উদযাপনে প্রস্তুতিমূলক সভা 📰সাতক্ষীরায় পলিথিনের ব্যবহার বর্জন বিষয়ে জনসচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন📰২৫০ ধরনের ওষুধ ৩ ভাগের ১ ভাগ দামে পাবে জনগণ📰সাতক্ষীরায় সরকারি খাসজমি উদ্ধারে অভিযান শুরু📰নাসার সঙ্গে মহাকাশ গবেষণায় অংশীদার হলো বাংলাদেশ📰তালা উপজেলা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ📰তালায় গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ

কভিড-১৯ মোকাবিলায় আর্থিক বিষয়াবলিকভিড-১৯ মোকাবিলায় আর্থিক বিষয়াবলি-হাসান মেহেদী, জিয়াউল হক মুক্তা ও নুরুল আলম মাসুদ

প্রতিবেদকের নাম :
  • হালনাগাদের সময় : বৃহস্পতিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২০
  • ৩৭৬ সংবাদটি পড়া হয়েছে

কভিড-১৯ রোগে বিপর্যস্ত পৃথিবী। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী স্বাস্থ্য খাতে বার্ষিক মাথাপিছু আট লাখ ৩৯ হাজার টাকা বরাদ্দকারী যুক্তরাষ্ট্র, তিন লাখ ৩৬ হাজার টাকা বরাদ্দকারী যুক্তরাজ্য আর দুই লাখ ৩৩ হাজার টাকা বরাদ্দকারী ইতালিতে সংক্রমণের হার ও মৃত্যুর সংখ্যা দেখলেই পরিস্থিতির ভয়াবহতা বোঝা যায়। আর ইতোমধ্যে বাতিল হয়ে গেছে শক্তিশালী দেশগুলোর জোট জি-২০-এর সম্মেলন, জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন, অলিম্পিক গেমস ও বিশ্ব পরিবেশ সংরক্ষণ সম্মেলনসহ বহু আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সভা। বিশ্বের বেশিরভাগ সীমান্ত বন্ধ এবং দুই-তৃতীয়াংশ শহর হয় অবরুদ্ধ অথবা চলাচল সীমিত করা হয়েছে। পর্যাপ্ত খাদ্য, ওষুধ ও সুরক্ষা সরঞ্জাম দিতে গিয়ে উন্নত দেশগুলোই হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নকামী দেশগুলোর কথা ভাবাই যায় না। একটাই আশার কথা, সরকারি হিসাব অনুসারে আমাদের দেশে রোগটি একটু দেরিতে ছড়াচ্ছে। এই অতিরিক্ত সময়টুকু ব্যবহার করতে পারি কিনা, তার ওপরই নির্ভর করছে এই মহামারি আমাদের জন্য কতটা ভয়াবহ হবে।
ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব, স্বাস্থ্য সংশ্নিষ্ট অবকাঠামোর ঘাটতি ও বায়ুদূষণ আমাদের বড় পরীক্ষার সামনে ফেলতে পারে। এ ছাড়া কৃষিসহ অনানুষ্ঠানিক খাতে ব্যাপক জনগোষ্ঠী যারা খাদ্যের জন্য নিরন্তর লড়াই করে, তাদের স্বাস্থ্যসেবা ও খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার প্রস্তুতি না থাকলে পুরো জাতির সামনে বড় বিপদ অপেক্ষা করছে। সামনের মাসগুলোয় ব্যাপক খাদ্যসংকট দেখা দিতে পারে বলে জাতিসংঘ ও বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা সতর্ক করেছে। নিকট ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা বিবেচনায় নিয়ে ইতোমধ্যে খাদ্য রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে অনেক দেশ। শুধু খাদ্য নয়, বরং শিল্পপণ্যের আমদানি-রপ্তানিও কমে যাচ্ছে। এরই মধ্যে গত তিন মাসে তিন লাখেরও বেশি প্রবাসী শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছেন এবং নতুন শ্রমিক অভিবাসনও বন্ধ হয়ে গেছে; এ বছর মার্চ মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ১৭ কোটি ডলার।

কিন্তু আস্থা রাখার মতো আছে অনেক কিছু। আমাদের আছে প্রধানমন্ত্রীর নেতেৃত্বে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যন্ত বিন্যস্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি, যা দুর্যোগ মোকাবিলায় পৃথিবীর সব থেকে শক্তিশালী নেটওয়ার্কগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। সারাদেশের কমিটিগুলোয় প্রায় দেড় লাখ দায়িত্বশীল ও অভিজ্ঞ ব্যক্তি জড়িত। প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আপৎকালীন আশ্রয়কেন্দ্র আছে। এগুলোয় হাজারেরও বেশি রোগীকে আশ্রয় দেওয়া যায়। শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখায় বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সুনাম আছে; অভ্যন্তরীণ দুর্যোগ মোকাবিলায়ও তাদের প্রাতিষ্ঠানিক অভিজ্ঞতা বিপুল। দেশের ৮১ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ রয়েছে, যা ভেন্টিলেটর ও জীবনরক্ষাকারী যন্ত্রপাতি চালাতে সাহায্য করবে। প্রতিটি ইউনিয়নে কমপক্ষে দু’জন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মী আছেন, যারা সামান্য প্রশিক্ষণেই দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর ভূমিকা নিতে পারবেন। উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছাড়াও আছে বড় আকারের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যেখানে ইউনিয়ন থেকে আসা গুরুতর রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব।
এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোতে নিবন্ধিত প্রায় তিন হাজার প্রতিষ্ঠান ছাড়াও সারাদেশে ১০ হাজারেরও বেশি বেসরকারি সংগঠন রয়েছে- যাদের কর্মীদলে আছেন ১০ লক্ষাধিক পেশাগত কর্মী। চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা অপ্রতুল হলেও আমাদের আছে প্রায় দেড় কোটি শিক্ষিত তরুণ, যারা সামান্য প্রশিক্ষণ পেলে স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়ক হিসেবে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে পারেন। ইতোমধ্যে স্থানীয় এনজিও ও স্বেচ্ছাসেবীরা যতটুকু সামর্থ্য আছে তাই নিয়ে শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও কিছু জাতীয়তাবাদী সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সহমর্মিতা দেখা যাচ্ছে। চীন ও কিউবা অনেক দেশে স্বাস্থ্যকর্মী ও জরুরি উপকরণ দিয়ে সাহায্য করেছে। বাংলাদেশও নিজের সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও কভিড-১৯ মোকাবিলায় চীনকে আপৎকালীন সহায়তা করা ছাড়াও সার্ক তহবিলে ১৫ লাখ ডলার দিয়েছে। কভিড-১৯ চিকিৎসায় ব্যবহূত ভেন্টিলেটরের সূত্র উন্মুক্ত করে দিয়েছে মার্কিন প্রতিষ্ঠান মেডট্রনিক। রোগ উপশমে কোনো অগ্রগতি হলে চিকিৎসকরা সারা দুনিয়াকে জানিয়ে দিচ্ছেন। টিকা আবিস্কারের প্রক্রিয়ার তথ্য উন্মুক্ত হওয়ায় টিকা উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারছেন সব দেশের বিজ্ঞানী।
কিন্তু কার্যকর উদ্যোগ নিতে রাষ্ট্রের প্রয়োজন জরুরি অর্থ। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নকামী দেশে যেখানে বাজেট ঘাটতি মেটাতে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা ঋণ নিতে হচ্ছে, সেখানে অতিরিক্ত অর্থ সংস্থান সত্যিই কঠিন। চলমান অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে মোট বরাদ্দ করা হয়েছে ২৫ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা; মাথাপিছু মাত্র এক হাজার ৫৬০ টাকা। অন্যান্য উপখাত ও প্রকল্পগুলো যোগ করলে এ ক্ষেত্রে মাথাপিছু বরাদ্দ দাঁড়ায় দুই হাজার ৯৫০ টাকা; যা ভারতে ৫ হাজার ৭৫৬ টাকা ও শ্রীলংকায় ১৩ হাজার ১৩ টাকা। শ্রীলংকার কথা বাদ দিই; এ সময়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সমান বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হলেও আমাদের স্বাস্থ্য খাতে অতিরিক্ত ৬৯ হাজার কোটি টাকা দরকার।
এ বছর খাদ্য খাতে বরাদ্দ রয়েছে চার হাজার ৫০৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বরাদ্দ রয়েছে ৯ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাত যুক্ত করলে মাথাপিছু ব্যয় দাঁড়ায় ৮৮৮ টাকা। ভারতে এই বরাদ্দের পরিমাণ তিন হাজার ৬২০ টাকা। দুর্যোগকালে দারিদ্র্যসীমার নিচের তিন কোটি ৪০ লাখ মানুষের জন্য ভারতের সমান বরাদ্দটুকু নিশ্চিত করতে হলেও এই খাতে আরও ১৪ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা প্রয়োজন।
এ বছর খাদ্য আমদানি সর্বনিম্ন পর্যায়ে রেখে কৃষি খাত থেকেই খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় কিনা, সেটাও বিবেচনায় রাখতে হবে। কৃষি খাত দেশের সব থেকে বড় শ্রম খাতও বটে। এ খাতে বিনিয়োগের অর্থ চূড়ান্ত বিচারে স্থানীয় অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালু রাখতে ভূমিকা পালন করে। এ বছর কৃষি খাতে বরাদ্দ ১৪ হাজার কোটি টাকা মাত্র। প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ কৃষকের জন্য মাথাপিছু বার্ষিক বরাদ্দ মাত্র সাত হাজার ৮০৫ টাকা। বাজারের ধাক্কা সামলে কৃষক-পরিবারগুলোকে আউশ চাষে প্রণোদনা দেওয়ার জন্য সেচ, বীজ ও সারের জন্য সরাসরি ভর্তুকি দেওয়া দরকার। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কৃষক যে নতুন ফসল ঘরে তুলবে তার জন্য এখনই জরুরিভাবে ফসলের নূ্যনতম লাভজনক মূল্য ঘোষণার পাশাপাশি সরকারি ক্রয় কর্মসূচি ঘোষণা করতে হবে। সামগ্রিকভাবে কভিড-১৯ দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য অতিরিক্ত প্রায় এক লাখ কোটি টাকা দরকার।
এরই মধ্যে কভিড-১৯-এর সম্ভাব্য অভিঘাত মোকাবিলায় গত ১৬ মার্চ বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ৮৫০ কোটি টাকা (১০ কোটি ডলার) অনুদানের জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছে প্রস্তাব পেশ করে। গত ৩ এপ্রিল বিশ্বব্যাংক সাড়ম্বরে প্রচার করল, তারা বাংলাদেশকে ১০০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে সাহায্য করছে। এ বিবৃতি ডাহা মিথ্যে। বিশ্বব্যাংকের এই সাহায্য কোনো অনুদান নয় বরং তাদের ঋণ ব্যবসার অংশ। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) থেকে সাধারণত বার্ষিক ০.৫ থেকে ১.৫ শতাংশ হারে ঋণ পাওয়া যায়। অথচ বিশ্বব্যাংক থেকে নেওয়া ৩০ বছর মেয়াদি দুর্যোগকালীন এই ঋণের সুদের হার ২ শতাংশ, যা সাধারণ ঋণের সর্বোচ্চ সুদের চেয়েও ০.৫ শতাংশ বেশি। এদিকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশকে তিন লাখ ডলার অনুদান অনুমোদন করেছে, যা দিয়ে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সর্বোচ্চ ৩৫০টি পিপিই (পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট) কেনা যায়। এডিবি প্রদত্ত ঋণের পরিশোধযোগ্য সুদের হিসাব করলে এটি গরু মেরে জুতো দানের শামিল।
এডিবি, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফসহ বহুপাক্ষিক ও দ্বিপাক্ষিক সংস্থাগুলোর কাছে বাংলাদেশের বর্তমান বৈদেশিক দেনার পরিমাণ প্রায় তিন লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা (৩৮.৪৮ বিলিয়ন ডলার), এ অর্থবছরে যার কিস্তি পরিশোধ করতে হবে ৫২ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা। বিশ্বব্যাপী এই মহাদুর্যোগের সময় বৈদেশিক দেনার কিস্তি স্থগিত করে বিপুল আর্থিক ঘাটতি আংশিক জোগাড় করা সম্ভব। কোনো এক অসাবধান মুহূর্তে সেই পথও দেখিয়ে দিয়েছে স্বয়ং বিশ্বব্যাংক; পৃথিবীর শীর্ষ ২০টি ধনী দেশের (জি-২০) অনলাইন শীর্ষ সম্মেলন চলাকালীন বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ এক যৌথ বিবৃতিতে গরিব দেশগুলোর ঋণের সুদ স্থগিত করার জন্য ধনী দেশগুলোর কাছে আহ্বান জানায়।
কভিড-১৯-এর ধাক্কায় বাংলাদেশের মতো অনেক উন্নয়নশীল দেশের জন্য ঋণের কিস্তি শোধ করা কঠিন হবে বলে আশঙ্কা করেছে শিল্পোন্নত দেশগুলোর সংগঠন ওইসিডি। জুবিলি ডেট মুভমেন্টের পক্ষ থেকেও বহুজাতিক, আঞ্চলিক ও দ্বিপাক্ষিক সংস্থাগুলোর কাছে ঋণের কিস্তি স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। আফ্রিকার অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকেও একই দাবি করা হয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এ দাবিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে একত্র হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে জাতীয় দুর্যোগ আইন কার্যকর করে ব্রাজিল অন্তত আগামী ছয় মাস কোনো বৈদেশিক দেনা শোধ করার সামর্থ্য নেই বলে ঘোষণা করেছে।
বৈদেশিক ঋণের সাড়ে ৫২ হাজার কোটি টাকার পাশাপাশি বাতিল করা উচিত জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর সক্ষমতা চার্জ (ক্যাপাসিটি চার্জ), যা এ বছরের বাজেট অনুযায়ী প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই ভাড়াভিত্তিক ও স্বাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো এই অর্থ নিয়ে যায়। বাংলাদেশের বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে সক্ষমতা আছে, তাতে এসব বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও বছরব্যাপী সরবরাহে ঘাটতি হবে না। ইতোমধ্যে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মেয়াদ ও কার্যক্ষমতা দুটোই ফুরিয়ে গেছে। দেশীয় সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোর উচিত অন্তত আগামী ছয় মাস সব ব্যক্তিগত ঋণের সুদ ও কিস্তি স্থগিত করা। ইতোমধ্যে ইতালি, কানাডা, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকগুলো এ ধরনের ঋণ পরিশোধ স্থগিত করেছে। বাংলাদেশের এনজিওগুলো মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরও) নির্দেশনায় ঋণ গ্রহীতাদের কাছ থেকে কিস্তি আদায় স্থগিত করেছে; এসব প্রতিষ্ঠান যেসব সূত্র থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তাদেরও উচিত দুর্যোগকালীন সময়ের সুদ ও কিস্তি মওকুফ করা।
বৈদেশিক ঋণ ও সক্ষমতা চার্জের সর্বমোট ৬৪ হাজার কোটি টাকা দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা, জরুরি খাদ্য সরবরাহ ও কৃষি খাতে সহায়তা করতে হবে। তার আগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের ২২ ধারা অনুযায়ী দেশে অতি দ্রুত ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণা করতে হবে, যা একই আইনের ৩২ ধারা অনুযায়ী সরকারকে বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহের অধিকার প্রদান করবে। জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলোর সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা সংশ্নিষ্ট প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে গঠিত কমিটিগুলো অবিলম্বে সক্রিয় করা প্রয়োজন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের ২৬ ধারা অনুযায়ী, চিকিৎসক ও সব যন্ত্রপাতিসহ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো দুর্যোগকালীন অধিগ্রহণ করে দক্ষতা ও কর্মক্ষমতা বিবেচনায় প্রাতিষ্ঠানিক বিচ্ছিন্নকরণ (আইসোলেশন), সঙ্গনিরোধ (কোয়ারেন্টাইন) বা পরিচর্যাকেন্দ্র (আইসিইউ) হিসেবে ঘোষণা করা দরকার। ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, স্পেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক ছাড়াও বেসরকারি হোটেলও অধিগ্রহণ করেছে। কভিড-১৯-এর দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠার পর ন্যায্য ক্ষতিপূরণসহ সেগুলো মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কভিড-১৯ আক্রান্তদের সেবায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের আনতে হবে বড় আকারের বীমার আওতায়, যা তাদের আর্থিক নিরাপত্তা ও প্রণোদনা দেবে।
দেশের ইউনিয়ন ও উপজেলায়, এমনকি জেলা, বিভাগ ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে প্রস্তুতির জন্য দরকার ব্যাপক পরিমাণে সুরক্ষা সরঞ্জাম ও জীবনরক্ষাকারী যন্ত্রপাতি, যে ক্ষেত্রে চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোয় ঘাটতি আছে। সুরক্ষা সরঞ্জাম ও ভেন্টিলেটরের নির্মাণসূত্র উন্মুক্ত হওয়ায় যে কোনো বাংলাদেশি কোম্পানি এগুলো তৈরি করতে পারবে। ইতোমধ্যে বেসরকারি কোম্পানি ওয়ালটন ভেন্টিলেটর উৎপাদন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি কোম্পানিকে জরুরি ভিত্তিতে ভেন্টিলেটরসহ অন্যান্য সামগ্রী তৈরির কার্যাদেশ দেওয়া প্রয়োজন এবং এ ক্ষেত্রে যুদ্ধকালীন নিয়মানুবর্তিতা দেখানোর নির্দেশ দিতে হবে। অ্যাম্বুলেন্সের মানের কথা ভুলে গিয়ে দেশের ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে সম্ভাব্য জরুরি পরিবহন ব্যবস্থা, ব্যবহারযোগ্য অবকাঠামো, স্বেচ্ছাসেবীদের চিহ্নিত, তালিকা করা ও সংশ্লিষ্টদের ২-৩ ঘণ্টা মেয়াদি প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার, যাতে জরুরি সময়ে সবাই মিলে ভূমিকা পালন করা যায়।
আশা করছি, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ব্যাপক আকারে ছড়াবে না কিন্তু আমরা অন্যান্য দেশের সবচেয়ে ভালো উদাহরণগুলো ব্যবহার করে খারাপ পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকব। তাহলেই দুর্যোগের পাশাপাশি মহামারি মোকাবিলায়ও বাংলাদেশ পৃথিবীতে উদাহরণ হয়ে থাকবে। এ জন্য বাংলাদেশে কভিড-১৯ সংক্রমণকে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণা করে রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল ও সারাদেশে জেলা-উপজেলা-ইউনিয়নের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি সক্রিয়করণের বিকল্প নেই।
হাসান মেহেদী, সদস্য সচিব, বাংলাদেশ বৈদেশিক দেনা বিষয়ক কর্মজোট
জিয়াউল হক মুক্তা, সাধারণ সম্পাদক, গ্রামীণ জীবনযাত্রার স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযান (সিএসআরএল)
নুরুল আলম মাসুদ, সাধারণ সম্পাদক, খাদ্যনিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (খানি)

সুত্র : সমকাল

আপনার সামাজিক মিডিয়ায় এই পোস্ট শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর :
© All rights reserved © 2025
প্রযুক্তি সহায়তায়: csoftbd